স্যালাইনের কৃত্রিম সংকট রোধে অভিযান চালাবে ভোক্তা অধিদফতর
ছবি সংগৃহিত
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের মহাপরিচালক এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেছেন, সারা দেশে ডেঙ্গু রোগী বেড়ে যাওয়ায় মূল্য বৃদ্ধিসহ স্যালাইনের কৃত্তিম সংকট তৈরি করা হয়েছে। এমনিতে কোনও সংকট নেই। কোম্পানিগুলো ২৪ ঘণ্টা উৎপাদন করছে। সংকট হওয়ার কোনও কারণ নেই। তবে কিছু ব্যক্তির কারণে প্রতিষ্ঠানগুলোকে কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হচ্ছে।
বুধবার (১৩ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর কাওরান বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সভা কক্ষে আয়োজিত এক আলোচনায় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।
স্যালাইনের মূল্য ও সরবরাহ স্বাভাবিক রাখার লক্ষ্যে উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান, পাইকারি, খুচরা বিক্রেতা ও সংশ্লিষ্টদের অংশগ্রহণে এই মতবিনিময় সভার আয়োজন করা হয়।
এ এইচ এম সফিকুজ্জামান বলেন, ‘আগামীকাল সারা দেশে অভিযান চালানো হবে। এ বিষয় কোনও অনিয়ম পাওয়া গেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো। স্যালাইনের গায়ে যে সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য দেওয়া আছে, তার চেয়ে এক টাকাও বেশি বিক্রি করা যাবে না। আমি স্পষ্টভাবে এটি সংশ্লিষ্টদের জানিয়ে দিতে চাই। এরপরও যদি বেশি দামে স্যালাইন বিক্রি হয়, তাহলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো আমরা।’
স্যালাইনের মূল্য নিয়ে কোথায় সমস্যা তা চিহ্নিত করতে হবে জানিয়ে মহাপরিচালক বলেন, ‘স্যালাইনের গায়ে যেটা লেখা আছে সেটা সর্বোচ্চ খুচরা মূল্য। এর বাইরে এক টাকাও বেশি বিক্রি করা যাবে না।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আজ স্যালাইন সংশ্লিষ্ট সবাইকে সঙ্গে নিয়ে বসেছি। আপনাদের কথা শুনবো, তবে কৃত্রিম সংকটের কথা বলে বাড়তি দাম নেওয়া যাবে না। স্যালাইনের সোর্স আমাদের ফার্মাসিউটিক্যাল কোম্পানিগুলোই। স্যালাইন তো আর ভ্যানে বিক্রি হয় না। ডিস্ট্রিবিউশন চেইনের মাধ্যমে ফার্মেসিতে বিক্রি হয়। এটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত। এটা কিন্তু ডাব বা কাঁচা মরিচ না। খুচরা মূল্য যা লেখা আছে তাই বিক্রি করতে হবে। যতক্ষণ মজুত আছে ততক্ষণ সেই দামেই বিক্রি করতে হবে। স্যালাইন কম আছে আর চাহিদা বেশি আছে এই সুযোগে দাম বাড়ানো যাবে না। আইন অনুযায়ী ভোক্তা প্রতারিত হলে বা তার কাছ থেকে অতিরিক্ত মুনাফা আদায় করা হলে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া আমাদের দায়িত্ব।’
একদিকে দেশব্যাপী প্রাণঘাতী ডেঙ্গুর ভয়াবহ থাবা, অন্যদিকে টাইফয়েড বেড়ে যাওয়ায় স্যালাইনের চাহিদা অনেক বেড়ে গেছে। আর চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় ফার্মাসি তো বটেই, সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালগুলোতেও দেখা দিয়েছে স্যালাইন সংকট। ৮০ টাকা দামের সাধারণ স্যালাইন খোলাবাজারে এখন বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকায়। এর পরও স্যালাইন জোগাড় করতে বেগ পেতে হচ্ছে।
বছর তিনেক আগেও সরকারি প্রতিষ্ঠান জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে (আইপিএইচ) মাত্র ৪২ টাকায় স্যালাইন পাওয়া যেত। সেখানে এখন উৎপাদন বন্ধ। এ কারণে স্থায়ীভাবে বিকল হওয়ার পথে প্রায় ৬শ কোটি টাকার যন্ত্রপাতি। অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি কোম্পানিগুলোকে সুবিধা দিতে প্রতিষ্ঠানটি কৌশলে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ফলে বর্তমানে বিদেশ থেকে আমদানি করা এবং বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের উৎপাদিত স্যালাইনই ভরসা।
ডেঙ্গুতে এ যাবৎকালের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ সময় পার করছে বাংলাদেশ। চলতি বছর ইতোমধ্যেই সাড়ে ৮শরও বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে এ রোগে; পৌনে দুই লাখ মানুষ ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। আর বাসাতেই চিকিৎসা নিয়েছেন এরচেয়েও ৬ গুণ বেশি রোগী। ডেঙ্গুতে আক্রান্তদের প্রধান চিকিৎসা আইভি ফ্লুইড বা স্যালাইন হওয়ায় এর চাহিদা বেড়েছে অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে অনেকগুণ বেশি। ডেঙ্গুর পাশাপাশি শিশুদের টাইফয়েডে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় স্যালাইনের সংকট প্রকটভাবে দেখা দিয়েছে।