ডেঙ্গুর সংক্রমণ প্রতিরোধে ভ্যাকসিন তৈরির উদ্যোগ নিচ্ছে বিএসএমএমইউ
বছরের পর বছর ধরে বাংলাদেশে ডেঙ্গুর সংক্রমণ আর এই রোগের ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠার পরেও সেদিকে নজর না দেয়ায় এই বছরে ডেঙ্গু মারাত্মক হয়ে উঠেছে বলে বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্যবিদরা মনে করছেন। তারা বলছেন, এক সময়ে বাংলাদেশে ডেঙ্গু রোগটি মৌসুমি রোগ বলে মনে করা হলেও, গত কয়েক বছর ধরে সারা বছর জুড়ে প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। এর ফলে এই রোগের চার ধরনের ভাইরাস আরও শক্তিশালী হয়ে উঠেছে এবং রোগটি দেশের সব জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে।
এবার ডেঙ্গু সংক্রমণ প্রতিরোধে টিকা তৈরির উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) উপাচার্য অধ্যাপক ডা. মো. শারফুদ্দিন আহমেদ।
শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মিলনায়তনে ‘ডেঙ্গু বিরোধী সামাজিক আন্দোলন চাই’ শীর্ষক গণমাধ্যমের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় উপাচার্য একথা জানান।
উপাচার্য বলেন, ‘বিএসএমএমইউতে ডেঙ্গু ভ্যাকসিনের বিষয়ে গবেষণা করে তৈরির ব্যাপারে আমরা উদ্যোগ নেব।’ একই সাথে এই টিকা তৈরির ব্যাপারে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইরোলজি বিভাগকে দ্রুত কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেন তিনি।
উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আমাদের দেশে সারা বছর ডেঙ্গু নিয়ে কাজ হয় না বলেই আজ এ অবস্থা। স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে যেকোনো কাজ, গবেষণা করার জন্য উৎকৃষ্ট স্থান হচ্ছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়। এখানে আমরা ডেঙ্গু রিসার্চ করব। ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটির সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বিএসএমএমইউ’র চিকিৎসকরাও কাজ করবেন।'
তিনি আরো বলেন, 'সামাজিক আন্দোলন গড়ে ওঠার উদ্যোগটি ভালো। এজন্য মানুষকে সচেতন করতে আমাদের সবাইকে রাস্তায় নামতে হবে। সবাইকে জানাতে হবে, এখন ডেঙ্গুর ধরন পাল্টেছে। আগে দিনে মশা কামড়াতো, এখন ২৪ ঘণ্টা কামড়ায়। আগে পরিষ্কার পানিতে মশার লার্ভা পাওয়া যেত, এখন ময়লা পানিতেও পাওয়া যায়।'
সচেতন হওয়ার আহ্বান জানিয়ে উপাচার্য বলেন, 'বাসায়, ছাদে, ফুলের টবে কোথাও পানি জমতে দেওয়া যাবে না। কমোড ব্যবহারের পর ঢেকে রাখতে হবে। আগামীকাল (রোববার) থেকে এডিস মশার লার্ভা ধ্বংসে বিটিআই প্রয়োগ করবে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন। এটি সিঙ্গাপুরে খুব ভালো কাজ করছে। আশা করছি, আমাদের এখানেও কাজ করবে। ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ খাওয়া যাবে না। প্রচুর তরল খাবার খেতে হবে। শিক্ষার্থীদের ফুল পেন্ট, ফুল হাতা শার্ট ও জুতা-মোজা পরে বিদ্যালয়ে যেতে হবে।'
সভায় বিএসএমএমইউ উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমেদকে চেয়ারম্যান ও আবাসিক চিকিৎসক (আরপি) সহকারী অধ্যাপক ডা. তৌফিক আহমেদকে সদস্য সচিব করে ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটি-২০২৩ গঠন করা হয়েছে।
এ কমিটিতে জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার শামসুল হক টুকুকে প্রধান উপদেষ্টা, জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেনকে বিশেষ উপদেষ্টা ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এবিএম খুরশিদ আলমকে উপদেষ্টা পদে মনোনীত করা হয়েছে।
ডেঙ্গু প্রতিরোধ কমিটিতে দৈনিক বঙ্গজননী ও দ্যা ন্যাশনাল নিউজ ইউএসএ’র প্রধান সম্পাদক আলী নিয়ামতকে সভাপতি করা হয়েছে।জাতিসংঘের মানবাধিকার ইউংয়ের উপদেষ্টা বীর মুক্তিযোদ্ধা রুবিনা খান, ক্যাটের সিনিয়র সহসভাপতি সাবেক উপাচার্য ড. রশিদ আসকারী, উইয়ের সভাপতি নাসিমা আক্তার নিশাকে সহসভাপতি করা হয়েছে।
এ ছাড়া দৈনিক বঙ্গজননীর সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা কামরুজ্জামান জিয়াকে নির্বাহী সদস্য করা হয়েছে। একই সঙ্গে বাংলাদেশ সমাচারের সম্পাদক ড. খান আসাদুজ্জামান, আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য ও মহাসচিব আসলাম সিহির, ওয়ার্ল্ড ক্যানসার সোসাইটি বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট সৈয়দ হুমায়ুন কবির, আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য আবু বকর সিদ্দিকী, আওয়ামী লীগের উপকমিটির সদস্য যুবরাজ খান, ক্যাটের সহসভাপতি আব্দুল হালিম মৃধা, সেভেনটি ওয়ান টিভি বাংলার টকশো উপস্থাপক রোকন উদ্দিন পাঠান, হিউম্যান এইড ইন্টারন্যাশনালে মহাসচিব সেহলি পারভিন, উইয়ের পরিচালক রাকিবা আহমেদ, উইয়ের সদস্য সামিরা সুলতানা ও দৈনিক বঙ্গজননীর সহসম্পাদক মুক্তা মিয়াকে সদস্য করা হয়েছে।