সংশোধিত তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাস চায় স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন
তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়াটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদে উত্থাপন ও অনুমোদনের জন্য সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন জানায়, এটি পাস হলে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি বৈশ্ব্যিক মানদণ্ডে উপনীত হবে। সেইসঙ্গে বর্তমান সরকারের ভাবমূর্তি আরও উজ্জ্বল হবে। তামাকের ভয়ংকর ছোবল থেকে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পথ সুগম হবে।
সোমবার (৮ মে) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলরুমে স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘তামাকমুক্ত বাংলাদেশ: অগ্রগতি ও করণীয়সমূহ’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি জানায়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশন-এর সুপারিশ আমলে নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধনের জন্য চূড়ান্ত খসড়া প্রণয়ন করেছে। আমরা সরকারের কাছে দাবি জানাচ্ছি যাতে দেশের অর্থনীতি ও জনস্বাস্থ্য রক্ষায় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের খসড়াটি দ্রুততম সময়ের মধ্যে জাতীয় সংসদে উত্থাপন করে অনুমোদন করা হয়।’
জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ টাস্কফোর্স কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. অরূপ রতন চৌধুরী এবং জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান নাসির উদ্দিন আহমেদ বিশেষ অতিথি ছিলেন।
তারা বলেন, তামাক জনস্বাস্থ্যের জন্য একটি বড় হুমকি। তাই দ্রুততম সময়ের মধ্যে সংশোধনীটি পাস হলে জনস্বাস্থ্য সুরক্ষার পথ সুগম হবে।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনায় তামাক আইন সংশোধনের গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. রুমানা হক।
সংবাদ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক ডা. নিজাম উদ্দীন আহম্মেদ। এটি সঞ্চালনা করেন স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম।
প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের জনস্বাস্থ্য ও অর্থনীতি রক্ষায় প্রধানমন্ত্রী ২০১৬ সালে অনুষ্ঠিত ‘সাউথ এশিয়ান স্পিকার্স সামিট’-এ ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি পাশাপাশি তিনটি বিশেষ দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। যার মধ্যে রয়েছে, স্বাস্থ্য উন্নয়ন সারচার্জ ব্যবহার করে একটি তহবিল গঠন করা যা দিয়ে দেশব্যাপী জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।
‘তামাকের উপর বর্তমান শুল্ক-কাঠামো সহজ করে একটি শক্তিশালী তামাক শুল্ক-নীতি গ্রহন করে দেশে তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার হ্রাস করা। এ ছাড়া ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন বাস্তবায়নের জন্য সবধরনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ ও এসডিজি বাস্তবায়নের অগ্রাধিকারের সঙ্গে মিল রেখে আইনগুলোকে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এফসিটিসি’র সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ করা।
স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পক্ষ থেকে জানানো হয় প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে যে তিনটি বিশেষ দিক নির্দেশনা দিয়েছিলেন তার মধ্যে অন্যতম হলো বর্তমান আইনকে বৈশ্বিক মানদণ্ডে উপনীত করা। তার আলোকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি যুগোপযোগী করতে একটি খসড়া সংশোধনী প্রণয়ন করেছে। যেটি বর্তমানে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে আছে।
প্রস্তাবিত ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনে যে সকল সংশোধনী প্রস্তাব করা হয়েছে তার মধ্যে অন্যতম হল পাবলিক প্লেস ও পাবলিক পরিবহণে ধূমপান পুরোপুরি নিষিদ্ধ করা, বিক্রয়কেন্দ্রে তামাকজাত দ্রব্য প্রদর্শন নিষিদ্ধ করা, তামাক কোম্পানির ‘কর্পোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা’ (সিএসআর) কার্যক্রম সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা, বিড়ি-সিগারেটের খুচরা শলাকা বা মোড়কবিহীন তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট ও কৌটায় সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার বৃদ্ধি করা।
জেডএ/এমএমএ/