‘সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী’ আইন লঙ্ঘন করছে তামাক কোম্পানিগুলো
রাজস্ব দেবার নাম করে দেশের স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকে পুরোপুরি ধ্বংসের পথে নিয়ে যাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বিগত ছয় বছরে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী যথাযথ ভাবে প্রদান করছে না কোম্পানিগুলো। ফলে আইনের উদ্দেশ্য দারুণভাবে ব্যবহ হচ্ছে।
রবিবার (৯ জানুয়ারী) ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি), ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভির্সিটি ও বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোট (বাটা)-এর আয়োজনে ‘আইন অনুযায়ী তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়ন- বর্তমান অবস্থা’ শীর্ষক উক্ত গবেষণার ফল প্রকাশ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে সভাপত্বি করেন বাংলাদেশ তামাক বিরোধী জোটের হেলাল আহমেদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন আর্ন্তজাতিক সংস্থা ভাইটাল স্ট্রাটেজিস এর কান্ট্রি ম্যানেজার (বাংলাদেশ) নাসির উদ্দিন শেখ, আর্ন্তজাতিক সংস্থা ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডস এর সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার (বাংলাদেশ) আতাউর রহমান মাসুদ, এইড ফাউন্ডেশনের প্রজেক্ট ডিরেক্টর টোব্যাকো কন্ট্রোল) শাগুফতা সুলতানা; বাংলাদেশ সেন্ট্রার ফর কমিউনিকেশন প্রোগ্রাম (বিসিসিপি)-এর ডেপুটি ডিরেক্টর মোহাম্মদ শামীমুল ইসলাম এবং ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ (ডাব্লিউবিবি) ট্রাস্ট-এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈয়দা অনন্যা রহমান।
মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি)-এর সহকারী গবেষক ও প্রোগ্রাম ম্যানেজার ফারহানা জামান লিজা এবং অনুষ্ঠানটি সঞ্চালনা করবেন টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল (টিসিআরসি)-এর সদস্য সচিব ও প্রজেক্ট ডিরেক্টর এবং ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক মো. বজলুর রহমান।
মূল প্রবন্ধে ফারহানা জামান লিজা বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণের নানা পদ্ধতির মধ্যে তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী প্রদান অন্যতম। ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (সংশোধনী ২০১৩) এর ধারা ১০ অনুযায়ী সকল তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের উভয়পাশের মূল প্রদর্শনী তলের উপরিভাগের ৫০ শতাংশ এলাকা জুড়ে তামাকের স্বাস্থ্য ক্ষতি সম্পর্কিত সচিত্র সতকর্বার্তা প্রদান করতে হবে। টোব্যাকো কন্ট্রোল অ্যান্ড রিসার্চ সেল তামাকজাত দ্রব্যের মোড়কের সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী বাস্তবায়নের বর্তমান অবস্থা তুলে ধরতে গত মার্চ ২০২১ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২১, ছয় মাস ব্যাপী দেশের ৮টি বিভাগের ২৪ টি জেলার ১২৮৮টি তামাকজাত দ্রব্যের মোড়ক থেকে তথ্য সংগ্রহের মাধ্যমে একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করে।
টিসিআরসির গবেষণায় বেশ কিছু বিষয় উঠে এসেছে, তবে এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- ৮২% তামাকপণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পাওয়া গেছে; ২৫% মোড়কে ব্র্যান্ড এলিমেন্ট পাওয়া গেছে; ২১% মোড়কে নির্দিষ্ট মেয়াদের ছবি পরিলক্ষিত হয়নি; ৪৪% মোড়কেই পঞ্চাশ শতাংশ এলাকা জুড়ে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হয়নি; ৬৩% মোড়কের উভয়পাশে এই সতর্কবাণী মুদ্রণ করা হয়নি; ৭৩% বিড়ির মোড়কের সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী ব্যান্ডরোল দিয়ে ঢেকে থাকতে দেখা গেছে; ৫০% মোড়কেই “শুধুমাত্র বাংলাদেশে বিক্রয়ের জন্য অনুমোদিত” মর্মে কোন বাণী প্রদান করা হয়নি; কোন সিগারেটের কার্টনেই সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবাণী পাওয়া যায়নি।
সভাপতির বক্তব্যে হেলাল আহমেদ বলেন, সচিত্র সতর্কবাণীর আইন ২০১৬ সালে আইন পাস হলেও এখনো এটা পূর্ণাঙ্গভাবে কার্যকর নয়। কারণ তামাক কোম্পানি তাদের শক্তি প্রদর্শন করে তা করতে বাঁধা সৃষ্টি করছে। তামাক কোম্পানি অপরাধী। তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে আতাউর রহমান মাসুদ বলেন, সতর্কবাণীর ছবি দেয়ার কথা ছিলো মোড়কের উপরে। কিন্তু সেটা তামাক কোম্পানি প্রভাব খাটিয়ে নিচে নিয়ে চলে আসলো। অনেক চেষ্টার পর এটা আবার মোড়কের উপরে আসার কথা বলা হলেও সেটার বাস্তবায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না। আজকের গবেষণায় সচিত্র সতর্কবাণীর যে চিত্র উঠে এসেছে তা ভয়াবহ। এটা সারাদেশে বিশেষ করে স্থানীয়ভাবে সচেতনতার জন্য প্রচার করতে হবে।
এসএম/