মেঝেতে চিকিৎসা, ডেঙ্গুর জীবাণু বেশি ছড়ানোর শঙ্কা
রাজধানীতে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিন বাড়ছে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল-২ এর ১০ তলা ভবনে মেডিসিন রোগীর পাশাপাশি প্রতিদিনই ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের ভর্তি নেওয়া হচ্ছে। এতে করে সাধারণ রোগীরাও আতঙ্কের মধ্যে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
এদিকে রোগী বেড়ে যাওয়ায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে বেড সংকটে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা চলছে মেঝেতে! আর এ কারণে ডেঙ্গুর জীবাণু আরও বেশি ছড়াচ্ছে বলে অভিমত চিকিৎসকদের।
হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য বরাদ্দ বেড খালি না থাকলেও ওয়ার্ডের মেঝে ও বারান্দায় ভর্তি নিয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। রোগীদের রক্ত পরীক্ষার জন্য ১০ জনের একটি টিম গঠন করেছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু রোগী ও তার স্বজনদের অভিযোগ হাসপাতালে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালে সেই পরীক্ষার রিপোর্ট ভালমতো আসেনি বলে চিকিৎসকরা জানান। আবার তারা তাদের মনগড়া ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেন রক্ত পরীক্ষা করার জন্য। সেই পরীক্ষা ভালো হোক আর খারাপ হোক সেটাই ঠিক।
তবে নানা অভিযোগের মধ্যেও হাসপাতালে রক্ত পরীক্ষার সেই টিমের সদস্যদের সহযোগিতায় সন্তুষ্ট রোগী ও স্বজনরা। তাদের সহযোগিতায় রোগীরা দ্রুত পরীক্ষা ও রিপোর্ট হাতে পাচ্ছেন বলে জানান অনেকেই।
হাসপাতালের মেডিকেল-২ ভবনে গিয়ে দেখা যায়, ডেঙ্গু রোগীদের পাশাপাশি সাধারণ রোগীরাও চিকিৎসা নিচ্ছেন। তবে ওই ভবনে ওয়ার্ড মাস্টার মো. রিয়াজ উদ্দিন বলেন, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের নির্দেশে ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি কক্ষ আলাদা করা হয়েছে। সেখানে ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা রাখা হয়েছে। কক্ষ দুটিতে রোগীরা মশারি টানিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন। আর বিছানা সংকটের কারণে ডেঙ্গু আক্রান্ত অনেক রোগী মেঝেতে শুয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, আজ (রবিবার) পর্যন্ত ১৭২ জন ডেঙ্গু রোগী নতুন ভবনে চিকিৎসাধীন। হাসপাতালের পরিচালকের নির্দেশে ৬০২ নম্বর ওয়ার্ডের দুটি কক্ষ আলাদা করা হয়েছে। আগামীকাল সকালে অন্যান্য ওয়ার্ডেরও দুই-একটি কক্ষ আলাদা করা হবে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য। ১০ তলা ভবনের ৯ তলায় করোনায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া হয়। তাদের আলাদাভাবেই রাখা হয়।
এ ছাড়া ৬ তলা থেকে ৮ তলা পর্যন্ত মেডিসিন রোগীর পাশাপাশি ডেঙ্গু রোগী ভর্তি রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলে জানান ওই কর্মকর্তা।
হাসপাতালের দ্বিতীয় তলায় প্যাথলজি বিভাগের প্রধান ডা. আব্দুল আজিজ জানান, প্রতিদিন প্রায় তিন থেকে সাড়ে তিনশোর মতো ডেঙ্গু পরীক্ষার স্যাম্পল সংগ্রহ করে থাকি। ভর্তি রোগীর পাশাপাশি হাসপাতালের বহির্বিভাগ থেকেও রোগী আসে। এই পরীক্ষার মধ্যে আনুমানিক ১০ শতাংশ রোগী ডেঙ্গু পরীক্ষায় পজিটিভ আসে। এসব পরীক্ষা সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হয়।
তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু রোগে আক্রান্তের এমন সংখ্যা একবার করোনার আগে দেখা দিয়েছিল। সেটা এখন আবার দেখা দিচ্ছে!
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. নাজমুল হক বলেন, নতুন ভবনের মেডিসিন ওয়ার্ডে প্রতিদিনই ডেঙ্গু রোগে আক্রান্ত রোগী ভর্তি হচ্ছে। তাদের চিকিৎসা চলছে এবং রোগীর সংখ্যা এখন আগের তুলনায় বেশি। ডেঙ্গু রোগীদের আলাদা রুমে রেখে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আলাদা করার কাজ শুরু হয়েছে। কিন্তু বিছানা কিছুটা সংকট থাকায় অনেকসময় রোগীদের মেঝেতে থাকতে হয়। ডেঙ্গু রোগী শনাক্তে সেখানে সাইনবোর্ড লাগানো হয়েছে।
তিনি জানান, হাসপাতালের প্যাথলজিতে ডেঙ্গুর রোগীর সবরকম রক্তের পরীক্ষা করা হচ্ছে। ডেঙ্গু রোগীদের রক্তের পরীক্ষায় সহযোগিতা করার জন্য দৈনিক মজুরিতে নিয়োগপ্রাপ্ত নিয়ে ১০ জনের একটি টিম ইতোমধ্যে তারা কাজ করছে। তারা চিকিৎসকের নির্দেশ অনুযায়ী হাসপাতালের প্যাথলজি ভবনে ডেঙ্গু রোগীরা দ্রুত যেন রক্তের পরীক্ষার রিপোর্ট পেতে পারে সেই ব্যবস্থা করছে। ডেঙ্গু রোগীদের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতারের বার্ন ইউনিটের আইসিইউ সেন্টার প্রস্তুত আছে বলেও হাসপাতালের পরিচালক জানান।
এসএন