রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রযুক্তি ও জনস্বাস্থ্য সিম্পোজিয়াম
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ' ‘ব্রিংগিং টেকনোলজি এন্ড পাবলিক হেলথ আন্ডার ওয়ান আমব্রেলা ইন বাংলাদেশ: ব্রেকিং ব্যারিয়ার্স' শীর্ষক সিম্পোজিয়াম অনুষ্ঠিত হয়েছে।
১৬ অক্টোবর, রোববার, সকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগে প্রযুক্তি ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ক সিম্পোজিয়ামটি হয়েছে।
প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের সভাপতি প্রফেসর ড. তানজিমা ইয়াসমিন সভাপতিত্ব করেন।
প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার।
বিশেষ অতিথি ছিলেন অ্যাকাডেমিক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম।
প্রধান বক্তা ছিলেন বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ড.সেঁজুতি সাহা। বক্তা ছিলেন তার ফাউন্ডেশনের জ্যেষ্ঠ গবেষক আরিফ মোহাম্মদ তন্ময় ও মাইক্রো-বায়োলজিস্ট নাজিফা তাবাসসুম।
আরো ছিলেন ড. শাহেদ জামান প্রমুখ।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তার বলেন, ‘মানুষ পরাজিত হওয়ার জন্য জন্ম নেয়নি। প্রতিনিয়ত বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যাওয়াই তার ধর্ম। বিজ্ঞানের মূল কাজ হলো মানুষের জীবনের অন্ধকার দূর করা। এখানে মূখ্য ভুমিকা বিজ্ঞানীদের। বাংলাদেশের স্বাস্থ্য খাত নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে। আমরা নিজেদের দায়িত্ববোধ যথাযথভাবে পালন করি না। জিডিপির ৫ শতাংশ স্বাস্থ্য খাতে বরাদ্দ দেওয়া হলেও, আমরা যথাযথ ব্যবহার করতে পারি না। এ আমাদের জাতীয় একটা সমস্যা।’
অ্যাকাডেমিক উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. সুলতান-উল-ইসলাম বলেন, ‘প্রযুক্তির কল্যাণে বর্তমানে জনস্বাস্থ্যের বিভিন্ন বিষয় উঠে এসেছে। তাদের গবেষণার ফলাফল সুদূরপ্রসারী। আবার একসময় চিকিৎসার জন্য মানুষ ফকির বা কবিরাজের কাছে যেত। ফলে অনেক সময় মনগড়া ও অপচিকিৎসার কবলে পড়ত। এসব চিকিৎসা প্রায়ই স্বাস্থ্যের জন্য বিপদজনক। কখনো, কখনো প্রাণহানির কারণ। বর্তমান প্রযুক্তির যুগে সেই অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তিগুলো নিখুঁতভাবে রোগ এবং সমস্যাগুলো সনাক্ত করছে। ফের গবেষণার মাধ্যমে প্রতিনিয়ত চিকিৎসা পদ্ধতি ও ঔষধগুলো আবিস্কার করা হচ্ছে। আশার কথা হলো, ২০০৫ থেকে ২০১৭ সালে আমাদের আয়ুষ্কাল ছিল ৬৩ বছর, এখন ৭৩। ২০০৫ সালে শিশু মৃত্যু হার ছিল হাজারে ৫২টি শিশু। এখন ২৪ জন। ২০০৫ সালে মাতৃমৃত্যু হার ছিল লাখে ৩শ ৪৮ জন। এখন কমে প্রায় ১শ ৪৮। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নিরলস প্রচেষ্টার কারণে অর্জনগুলো সম্ভবপর হয়েছে।’
প্রধান বক্তার বক্তব্যে বাংলাদেশ শিশু স্বাস্থ্য গবেষণা ফাউন্ডেশনের ড. সেজুতি সাহা বলেছেন, ‘যেখানে বেশি প্রযুক্তি আছে, সেখানে রোগী কম থাকে। যেখানে বেশি রোগী আছে, সেখানে প্রযুক্তিগত সুবিধা বাড়াতে হবে। বর্তমানে অবস্থাটির অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। চিকিৎসা ও গবেষণাখাতে আমাদের প্রযুক্তিগত সুবিধা আরো অনেক বাড়াতে হবে। ফলে রোগগুলো দূর হয়ে যাবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশের শিশুর স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করছি। টাইফয়েড, নিউমোনিয়াসহ বিভিন্ন রোগ সনাক্তকরণ ও প্রযুক্তির মাধ্যমে কার্যকরী সমাধান দেয়ার চেষ্টা চলছে। তবে এসব ক্ষেত্রে কাজ করতে গিয়ে অনেক আথিক ও সামাজিক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের সরবরাহ কম ও দাম বেশি। গবেষণার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামোর অপ্রতুলতা আছে। ভালো গবেষক নেই। তবে এসব প্রতিবন্ধকতা ছাপিয়ে আমরা এগিয়ে যেতে চাই। দেশে তরুণদের প্রকৃত বিজ্ঞান চিন্তায় অনুপ্রেরণাময় করতে চাই। তাতে একঝাঁক তরুণ বিজ্ঞানী দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে পারবেন।’
বাংলাদেশী শিশুদের চিকনগুনিয়া ও মেনিনজাইটিস রোগনির্ণয় ও চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরণের বাধা ও সম্ভাবনা এবং এক্ষেত্রে নিজের সাফল্য নিয়ে আলোচনা করেন তিনি।
প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্র, ছাত্রী, গবেষক, অধ্যাপক ও অন্যান্য বিভাগের আগ্রহী অধ্যাপক এবং গবেষক, ছাত্র, ছাত্রীরা এই সেমিনারে অংশগ্রহণ করেছেন।
লেখা ও ছবি : আসাদুল্লাহ গালিব।
ওএফএস।