চট্টগ্রামে এভারকেয়ার হাসপাতাল চালু হলো
গতকাল ১০ অক্টোবর বন্দরনগরী চট্টগ্রামে এভারকেয়ার হাসপাতালের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন ঘোষণা করেছে এভারকেয়ার গ্রুপ।
স্বাস্থ্য সেবাখাতের ইতিবাচক রূপান্তরে উদীয়মান অর্থনীতির দেশগুলোতে বিনিয়োগ করে এই গ্রুপ। ধারাবাহিকতায়, উদ্বোধন করা হাসপাতালটি চট্টগ্রামের সর্বপ্রথম মাল্টিস্পেশালিটি টারশিয়ারি কেয়ার হাসপাতাল।
২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে সেবাদান চালু ও কার্যক্রম শুরু করলেও কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির প্রাদুর্ভাবের কারণে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন বিলম্বিত হয়।
এভারকেয়ারের যাত্রা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি, এমপি; গেস্ট অব অনার উপস্থিত ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, এমপি; সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) চেয়ারম্যান আলহাজ্ব এম. জহিরুল আলম।
অনুষ্ঠানে উদ্বোধনী কার্যক্রম পরিচালনা করেন টিপিজি গ্রোথের কো-ম্যানেজিং পার্টনার ও এভারকেয়ার গ্রুপের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের চেয়ারম্যান ম্যাথু হোবার্ট, এভারকেয়ার হাসপাতাল বাংলাদেশের চেয়ারম্যান বব কুন্দানমাল ও এভারকেয়ার গ্রুপের গ্রুপ সিইও ম্যাসিমিলিয়ানো কোলেলা।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন সম্মানিত অতিথিবৃন্দ।
এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রাম চালু হওয়ার গুরুত্ব প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বলেন, ‘২০১৯ সালে আমরা যখন চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করি, তখন জনগণের কাছে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা স্বপ্নের বাস্তবায়ন। এ লক্ষ্যে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে উন্নত দেশে রূপান্তর করা। উন্নত অর্থনীতির দেশগুলোর মানুষের জন্য বিশ্বসেরা ও গুণগতমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে, স্বীকৃতিপ্রাপ্ত ও উন্নত সেবা প্রদানে সক্ষম বৈশ্বিক হাসপাতাল চেইন এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রামের কার্যক্রমের উদ্বোধন আমাদের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে।’
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন, ‘কোভিড-১৯ বৈশ্বিক মহামারির সময় স্বাস্থ্যসেবা খাতে এক অভূতপূর্ব সঙ্কট তৈরি হয়। তবে, বিশ্বজুড়ে আমাদের সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে সাফল্যের সাথে সে সময়ের প্রতিকূল পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটাতে সক্ষম হই। বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতে বিনিয়োগে অগ্রণী ভূমিকা রাখছে এভারকেয়ার গ্রুপ। এভাবেই তারা এ দেশের প্রতিটি মানুষের স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত তাদের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে আমি মনে করি। আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত এ হাসপাতাণের উদ্বোধন বন্দরনগরী চট্টগ্রামসহ চট্টগ্রাম বিভাগ ও আশেপাশের এলাকার মানুষের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি সাধন করবে।’
এভারকেয়ার গ্রুপের বোর্ড অব ডিরেক্টরসের চেয়ারম্যান ম্যাথু হোবার্ট বলেন, ‘উদীয়মান বাজারে রূপান্তরে লক্ষ্যে যে বিনিয়োগ করা হয় তা কীভাবে উচ্চ মানসম্পন্ন সেবা প্রদান করতে পারে এবং সবার জন্য স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে ফলপ্রসূ ভূমিকা রাখতে পারে তার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে আমাদের এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রাম। ২০২১ সালের এপ্রিল মাস থেকে চালু হওয়ার পর, হাসপাতালে ইতোমধ্যে এ অঞ্চলে মানুষের জন্য স্কোলিওসিস কারেকশন সার্জারি ও চট্টগ্রামের প্রথম কম্প্রিহেনসিভ পেডিয়াট্রিক কার্ডিওলোজি সেবা সহ নতুন এবং জটিল রোগের চিকিৎসা সেবা নিয়ে আসা হয়েছে। আমরা গর্বিত, সেবার মান উন্নত করতে পেরে এবং বাংলাদেশে স্বাস্থ্যসেবা প্রদানের নতুন অধ্যায় শুরু করে।’ তিনি এভারকেয়ার গ্রুপের টিপিজি গ্রোথের কো-ম্যানেজিং পার্টনার। দ্য রাইস ফান্ডের জন্য স্বাস্থ্য সেবাখাতে বিনিয়োগে নেতৃত্ব প্রদান করেন।
এভারকেয়ার গ্রুপের গ্রুপ সিইও ম্যাসিমিলিয়ানো কোলেলা বলেন, ‘দেশের বাইরে চিকিৎসা সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে যেসব প্রতিকূলতা তৈরি হয়, নতুন চালু হওয়া আমাদের হাসপাতালের মানসম্পন্ন সেবার মাধ্যমে তা কমে আসবে বলে আমি মনে করি।’
তিনি আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের স্বাস্থ্যসেবা খাতের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী পথরেখা তৈরি করাই আমাদের লক্ষ্য; একইসঙ্গে স্থানীয় প্রতিভা বিকাশে দেশব্যাপী চিকিৎসা সেবা খাতের অগ্রগতিতে সহায়তা করাও, যাতে কমিউনিটির মানুষের স্বাস্থ্যসেবার চাহিদাপূরণে তারা স্বাস্থ্যসেবা সংক্রান্ত দক্ষতা অর্জন করতে পারেন।’
এভারকেয়ার হাসপাতাল বাংলাদেশর চেয়ারম্যান বব কুন্দানমাল বলেন, ‘এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রাম একটি মাল্টি-স্পেশালিটি হাসপাতাল, যা সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ও বিশ্বমানের মেডিকেল প্রফেশনাল দ্বারা পরিচালিত। আমাদের প্রত্যাশা এ হাসপাতাল চট্টগ্রামে ইতিবাচকভাবে সামাজিক পরিবর্তন ত্বরাণ্বিত করবে এবং ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য সেবাদানের ক্ষেত্রে নতুন মানদণ্ড তৈরি করবে। চট্টগ্রামের প্রথম হাসপাতাল হিসেবে এই হাসপাতাল মেডিকেল, সার্জিক্যাল ও রেডিয়েশনসহ ক্যান্সার চিকিৎসার সম্পূর্ণ ও সর্বাধুনিক সেবা নিশ্চিত করবে।’
চট্টগ্রামের অনন্যা আবাসিক এলাকায় মোট ৪ লাখ ৯২ হাজার বর্গফুট আয়তনের ওপর নির্মিত হয়েছে এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রাম। হাসপাতালটি বাংলাদেশের একমাত্র হাসপাতাল যা ফ্ল্যাগশিপ ফ্যাসিলিটির। এভারকেয়ার হাসপাতাল ঢাকার চেয়েও আয়তনে বড় ও সক্ষমতায় এগিয়ে রয়েছে।
চট্টগ্রাম অঞ্চলে স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা পূরণে ৪৭০ শয্যাবিশিষ্ট এভারকেয়ার হাসপাতালে রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসম্পন্ন ৭ দিনই ২৪ ঘন্টার জরুরি বিভাগ, ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিট (আইসিইউ), মোট ২৭টি বিশেষ ও উপ বিভাগ। শীর্ষস্থানীয় কনসালটেন্ট ও চিকিৎসক, সার্বক্ষণিক সেবা এবং সর্বাধুনিক প্রযুক্তির বিশেষায়িত হাসপাতাল এ অঞ্চলের মানুষের জন্য গুণগতমানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করবে।
এভারকেয়ার হাসপাতাল চট্টগ্রামে প্রতিদিন ২৪ ঘন্টার ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলোজি অ্যান্ড কার্ডিয়াক সার্জারি সার্ভিসসহ কম্প্রিহেনসিভ হার্ট সেন্টার, মা ও শিশু সেন্টার, নিউরোসায়েন্স সেন্টার, বোন অ্যান্ড জয়েন্টস সেন্টার এবং ডাইজেস্টিভ ডিজর্ডার সেন্টারসহ ১৩টি উন্নত মানসম্পন্ন সেন্টার রয়েছে। উন্নত মানসম্পন্ন সেন্টারের প্রত্যেকটির মাধ্যমে চিকিৎসার ক্ষেত্রে সর্বোত্তম সুযোগ নিশ্চিত করার পাশাপাশি বিশ্বমানের স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা যাবে।
ওএফএস।