ঢাকা মেডিকেলে বেড়েছে দালালদের উৎপাত!
ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে প্রতিদিন অসংখ্য রোগী চিকিৎসা সেবা নেন। বিপুলসংখ্যক এই রোগীদের ঘিরে ঢাকা মেডিকেলে বেড়েই চলেছে দালালদের উৎপাত। দেশের এই অন্যতম প্রধান হাসপাতাল ঘুরে দালালদের হাতে রোগী বা তাদের স্বজনদের হয়রানি হতে দেখা গেছে।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সরেজমিনে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, হাসপাতালে বিভিন্ন শ্রেণির দালাল এবং আনসার সদস্যরা দালালের ভূমিকায় রয়েছে।
জরুরি বিভাগে কথা হয় আনসার সদস্য রাহানের সঙ্গে। তিনি বলেন, আমরা দালালি করি না, মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করি। বিনিময়ে অনেকে আমাদের চা নাস্তার খরচ দিতে চাই। আমরা সেটা নিতে অনীহা প্রকাশ করি।
ঢাকা মেডিকেল সূত্রে জানা যায়, ঢাকা ও এর আশপাশের জেলা থেকে চিকিৎসা নিতে ঢাকা মেডিকেলে প্রতিদিনই কমপক্ষে পাঁচ থেকে সাত হাজার রোগী আসেন। এদের মধ্যে বেশিরভাগই আসেন বহির্বিভাগে সেবা নিতে।
এদিকে হাসপাতালটির সহকারী পরিচালকের দাবি, দালাল নিয়ে রোগীরা কোনো অভিযোগ করেন না। দালাল থাকলে তাদের ছবি বা তথ্য দিলে আমরা আইনগত ব্যবস্থা নিব।
ঢাকা মেডিকেলের বর্হিবিভাগে ঘুরে দেখা যায়, রোগীদের আশপাশে ঘুরঘুর করছেন বেশ কয়েকজন দালাল। অনেক দালাল রোগীদের প্রেসক্রিপশন নিয়ে টানাহেঁচড়া করছে। রোগীদের তারা বলছে, লাইনে দাঁড়ানোর দরকার নাই। সামনে আসেন, ডাক্তার দেখিয়ে দিচ্ছি ১০০ টাকা দিবেন।
আজিমপুর থেকে ঢাকা মেডিকেলে জরুরি বিভাগে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে দালালের খপ্পরে পড়েন নার্গিস বেগম। তিনি বলেন, ঢাকা মেডিকেল এখন দালালের উৎপাত। আনসাররা দালালের সঙ্গে থাকে।
তিনি আরও বলেন, রোগীদের কাছে গিয়ে তারা টাকা চায়। পরে টাকা দিলে ডাক্তার দেখানোর ব্যবস্থা করে দেওয়ার আশ্বাস দেয় দালাল চক্র। এ কারণে লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা রোগীরা ভোগান্তির শিকার হয়। রোগীদের তারা প্রলোভন দেখায়, এখানে অনেক ভিড়, চিকিৎসা পেতে দেরি হবে। তাদের বিরুদ্ধে কিছু বললে আক্রমণাত্মক আচরণের শিকার হতে হয় রোগী বা তাদের স্বজনদের এমন অভিযোগ ও রয়েছে।
দেখা গেছে, বর্হিবিভাগের টিকিট কাউন্টারে সিরিয়াল ধরেছেন প্রায় শতাধিক রোগী। মধ্যবয়সী এক নারী শেলী বেগম বলেন, ঢাকা মেডিকেলে দালাল চক্র সক্রিয়। তাদের জন্য সিরিয়াল কমে না। জটলা লেগেই থাকে এবং ঠিকমতো ওষুধ পাওয়া যায় না। ডাক্তার যে ওষুধ লিখে দেয় সেই ওষুধও তারা দেয় না।
বহির্বিভাগের নিউরো সার্জারি, অর্থপেডিক্স, ক্যান্সার, গাইনি, মেডিসিন বিভাগের সামনে বিভিন্ন বয়সী নারী ও পুরুষ দালালদের ঘোরাফেরা করতে দেখা গেছে। দালালরা রোগীদের ডাক্তার দেখাতে সময় লাগার কথা বলে বাইরে বিভিন্ন হাসপাতালেও ভাগিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগীরা।
নরসিংদী থেকে ক্যান্সার বিভাগে মেয়েকে নিয়ে ভর্তি করিয়েছেন মো. সুমন মিয়া। তিনি বলেন, একটি বেসরকারি হাসপাতালে আমার মেয়ের ট্রিটমেন্টে খরচ হয়েছে ৫-৭ লাখ টাকা, আর পেরে উঠছি না। অবশেষে ঢাকা মেডিকেলের ক্যান্সার ইউনিটে ভর্তি করেছি।
এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, প্রথমে ক্যান্সার বিভাগের ফ্লোরে ছিলাম। পরে দালালকে টাকা দিয়ে বেডে উঠেছি।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে দালালদের বেপরোয়া উৎপাত নিয়ে জানতে চাইলে সহকারী পরিচালক ডা. আশরাফুল আলম বলেন, দালাল থাকলে তাদের তথ্য আমাদের কাছে দিন, আমরা আইনগত ব্যবস্থা নেব। তা ছাড়া আপনি যে অভিযোগের কথা বললেন এসবের কোনো তথ্য আমাদের কাছে আসেনি। যদি আসে তাহলে আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইনগত ব্যবস্থা নিব। আর আপনি এসব বিষয় নিয়ে পরিচালক স্যারের সঙ্গে কথা বলেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আনসার ক্যাম্প ইনচার্জ (পিসি) আ. রউফ বলেন, আনসাররা দালাল এমন কোনো প্রমাণ কেউ দিতে পারবে না। আনসার সদস্যরা সবাইকে বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে। হয়তো অনেকের ক্ষেত্রে এমনটি হয়েছে যার জন্য অনেক মানুষ তাদের দালাল ভাবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা সাধারণ মানুষকে সেবা দিতে এবং নিরাপত্তা দিতে সর্বোচ্চ দায়িত্ব পালন করে থাকি কিন্তু অনেক সময় কিছু ভুল বোঝাবুঝি হয় যার কারণে দায়ভার আমাদের উপর পড়ে।
কেএম/এসজি