অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের হাতে জিম্মি ঢাকা মেডিকেলের রোগীরা
রাজধানীর প্রায় সব সরকারি হাসপাতালকে ঘিরে গড়ে উঠেছে ‘বেসরকারি অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট’। এরা খুব শক্তিশালী। এই সিন্ডিকেটের সঙ্গে যুক্ত থাকেন সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের স্টাফরা। ঢাকা মেডিকেল হাসপাতালও এর ব্যতিক্রম নয়। এখানেও শ্রমিক নেতা ও শক্তিশালী স্টাফদের হাতে জিম্মি সেবাগ্রহীতারা।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ঢাকাপ্রকাশের সরেজমিন এক অনুসন্ধানে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের এ সব তথ্য উঠে এসেছে।
তথ্যমতে জানা যায়, মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের শিকড় অনেক গভীরে রয়েছে। রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকতায় এই অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেট এখন আরও বেপরোয়া।
ঢাকা মেডিকেলের জরুরি বিভাগের সামনে কথা হয় সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স চালক জহির রায়হানের সঙ্গে। এসময় তিনি বলেন, এখানে রোগী আনলে অ্যাম্বুলেন্স চক্রদের টাকা দিতে হয়।
ঢাকা কমিউনিটি মেডিকেল হাসপাতাল থেকে জরুরি বিভাগে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে এসেছেন চালক ফারুক হোসেন। তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমরা রোগী নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে ঢুকলে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের সদস্যরা আমাদের কাছ থেকে সিস্টেমে চাঁদা নেন। বাধ্য হয়ে আমাদের এটা দিতে হয়।
রাজধানীর শমরিতা হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে এসেছেন রেনা আক্তার। তিনি বলেন, আমি ঢামেকে রোগী দেখাব না। পরে আমার ভাড়া করা অ্যাম্বুলেন্সে রোগী নিয়ে আবার অন্য হাসপাতালে যেতে চেয়েছি কিন্তু এখানের অ্যাম্বুলেন্সের চালকরা এবং অজ্ঞাত কয়েকজন আমাকে ওই অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যেতে দেননি। পরে বাধ্য হয়ে ঢামেকে থেকে অন্য আরেকটি অ্যাম্বুলেন্সে করে মিরপুর হাসপাতালে রোগী নিয়ে গেছি।
একাধিক রোগীর স্বজনরা বলছেন, অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের কাছে আমরা জিম্মি হয়ে আছি। রোগীর স্বজনদের দাবি, বাইরে থেকে কম টাকায় অ্যাম্বুলেন্স আনলে তারা ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মধ্যে অ্যাম্বুলেন্স প্রবেশ করতে দেয় না, এখান থেকে অ্যাম্বুলেন্স নিয়ে যেতে হবে বলেন।
রাজধানীর মিরপুরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্সে রোজিনা আক্তার তার বাবাকে নিয়ে এসেছেন ঢাকা মেডিকেলে। তার অ্যাম্বুলেন্স ঢাকা মেডিকেলে আসার পর ওই অ্যাম্বুলেন্সে রোজিনা মিরপুরে যেতে চান, পরে অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের সদস্যরা তাকে বাধা দেন এবং বলেন আমাদের অ্যাম্বুলেন্সে যেতে হবে। এই অ্যাম্বুলেন্সে ছেড়ে দেন।
ঢাকা মেডিকেলে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের অন্যতম মূল হোতা হলেন আব্দুল জলিল। এই সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করেন মো. বাবুল।
এ বিষয়ে আব্দুল জলিল এবং বাবুলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি।
বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. আশরাফুল আলম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, অ্যাম্বুলেন্স সিন্ডিকেটের বিষয়টি আমরা অবগত নই।
সঠিক মতো রোগীরা ওষুধ পান না— এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, এ সব বিষয়ে কোনো অভিযোগ নেই। অভিযোগ থাকলে আমরা বিষয়টি আমলে নেব।
তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আপনি সরাসরি পরিচালক স্যারের সঙ্গে কথা বলেন’।
কেএম/আরএ/