ওষুধের ‘সাপ্লাই নেই’ ঢাকা মেডিকেলে
ডাক্তার ওষুধ লিখে দিয়ে বলছেন হাসপাতাল থেকেই সব ওষুধ দেবে। কিন্তু ওষুধ নেওয়ার জন্য কাগজ নিয়ে নির্ধারিত কাউন্টারে গেলে বলা হচ্ছে, সাপ্লাই নেই। ফাঁকফোকর দিয়ে ওষুধ চুরি হচ্ছে বলে অভিযোগ চিকিৎসা নিতে আসার ভুক্তভোগীদের।
সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) এই চিত্র দেখা গেছে দেশের বৃহত্তম ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে (ঢামেক)। বেলা ১১টার দিকে ভুক্তভোগীদের সঙ্গে কথা হয় ঢাকাপ্রকাশের। অনেকে অনরেকর্ড কথা বললেও, অনেকে নাম প্রকাশ না করেও নানা অভিযোগ করেন।
সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ, ডাক্তার ওষুধের নাম লিখে দিচ্ছেন, তবে সেই কাগজ অনুযায়ী ওষুধ না দিয়ে সেটা বাইরে বিক্রি করে দেওয়া হয়। বহির্বিভাগ ছাড়াও ওষুধের আরেকটা ‘চুরি’ আছে। ভর্তি রোগীদের ক্ষেত্রেও ফাঁকফোকর দিয়ে ওষুধ চুরি হয়। সংখ্যার চেয়ে বেশি রোগী তালিকাভুক্ত করে অতিরিক্ত রোগীর ওষুধ বাইরে বিক্রি করে দেওয়া হয়।
পুরান ঢাকার মোহাম্মদ হোসেন ছেলেকে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে এসেছেন। ডাক্তার ১০টি ওষুধ লিখে দিয়ে বলেছেন, সবগুলো ওষুধই হাসপাতাল থেকে দেবে। কিন্তু ওষুধের জন্য নির্ধারিত কাউন্টারে গেলে দায়িত্বরতকর্মী তাকে পাঁচটা ওষুধ দিয়েছেন।
ক্ষুব্ধ মোহাম্মদ হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ডাক্তার দেখিয়েছি। আমার ছেলের চুলকানির জন্য নিয়ে এসেছি। ট্যাবলেট দিয়েছে ১০টা। এখান থেকে আমাকে দিয়েছে ৫টা। আমি বললাম ডাক্তার সাহেব লিখে দিয়েছে ১০টা। কাউন্টারে দায়িত্বরত হাসপাতালকর্মী বলেছেন, আপনি পাবেন ৫টা। ১০টা পাবেন না। ১০টা লিখলে ১০টা আমরা দেই না, ৫টা দেই।
মোহাম্মদ হোসেনের পাশেই ছিলেন আরেক ভুক্তভোগী এস এম আব্বাস উদ্দিন। তিনি হাজারীবাগ থেকে এসেছেন। বললেন, ‘ডাক্তার লিখেছে ফেক্সো, মোনাস ১০। আমারে তারা দেয় অন্য ওষুধ। কয়, এই ওষুধ নাই। আমি তাকে বললাম, আপনি এই কাগজে লিখে দেন এই ওষুধ নাই। তারপরও কয়, সাপ্লাই নাই। সব চোর একখানে হইছে। চারটা ওষুধের মধ্যে দুইটা ওষুধ দিছে।’
একই সমস্যায় পড়েছেন হতদরিদ্র হাবু। ষাটোর্ধ্ব হাবু বললেন, ‘আমি গরিব মানুষ। কোথা থেকে ওষুধ কিনে খাব? আমারেও এরা কইছে, সাপ্লাই নাই। তারপর তাদের জিগাইছি কোন ওষুধ কখন খেতে হবে? তারা ধমক দেয়। আমরা কি কুত্তা?’
চিকিৎসা নিতে আসা রাবেয়ার সঙ্গে কথা হয় ঢাকাপ্রকাশের। তিনি মিরহাজীরবাগ থেকে এসেছেন। প্রেসক্রিপশন দেখিয়ে রাবেয়া অভিযোগ করে বললেন, ‘ডাক্তার বলেছেন সবগুলো ওষুধই দিবে। কিন্তু এখানে এলে তারা মাত্র দুটি ওষুধ দিছে। কইছে, বাকিগুলোর সাপ্লাই নাই। কিনে নিতে হবে।’
এসব অভিযোগ নিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য নিতে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হকের দপ্তরে গেলে জানানো হয়, তিনি অফিসে নাই। বাইরে কাজে গেছেন।
তবে সহকারী পরিচালক ডা. আশরাফুল আলম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে আগের চেয়ে সেবার মান উন্নত হয়েছে। এসব অনিয়ম আমাদের চোখে পড়েনি। পরিচালক স্যারের সঙ্গে যোগাযোগ করে কথা বলেন। এ বিষয়ে আমি বলতে পারব না ‘
ডাক্তার লিখে দিলেও রোগীকে ওষুধ দেওয়া হচ্ছে না- এমন অভিযোগ সম্পর্কে ডা. আশরাফুল আলম বলেন, ‘এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমাদের কাছে কোনো রোগী এমন অভিযোগ নিয়ে আসেননি।’
আরইউ/এসএন