মিটফোর্ড হাসপাতাল
টেস্ট করাতে হয় ‘বলে দেওয়া’ প্রতিষ্ঠানে!
স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে বেশিরভাগ রোগীদের ডায়াগনস্টিক পরীক্ষা (টেস্ট) করাতে হয় বেসরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে।
হাসপাতালে খুব কম পরীক্ষারই ব্যবস্থা আছে। রোগীদের অভিযোগ, বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই হাসপাতালের সংশ্লিষ্টরা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পরীক্ষা করতে হবে সেটিও বলে দেন।
বৃহস্পতিবার (৮ সেপ্টেম্বর) সরেজমিন প্রতিবেদন করতে গেলে এসব তথ্য জানা যায়।
পুরান ঢাকার বাসিন্দা কামরুল ইসলাম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন মিটফোর্ড হাসপাতালে। ১৫ দিন তাকে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিতে হয়েছে। এই সময়ে বিভিন্ন ধরনের ৩২টি পরীক্ষা তাকে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। মাত্র ৩টি পরীক্ষা তিনি হাসপাতাল থেকে করতে পেরেছিলেন। বাকি সব পরীক্ষা তাকে হাসপাতালের বাইরে অবস্থিত বিভিন্ন ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে করতে হয়েছে।
কামরুল ইসলাম বলেন, প্রতিদিনই ৩/৪টি করে পরীক্ষা দিত চিকিৎসকরা। সেটাও সমস্যা না। সমস্যা হলো প্রায় সব পরীক্ষাই বাইরে করাতে হয়। এসব পরীক্ষা হাসপাতালে করাতে পারলে অনেক কম টাকা লাগত।
কামরুল ইসলাম এমন অভিযোগও করলেন, কিছু চিকিৎসক কোনো ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করাতে হবে সেটিও বলে দেন। এসব ডায়গনস্টিক সেন্টার থেকে লোকজন এসে হাসপাতাল থেকেই নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। আবার রিপোর্টও দিয়ে যান।
এমন অভিযোগ সেবা নিতে আসা অন্য অনেক রোগীও করলেন। তাদের অভিযোগ, হাসপাতালে ৩০০ টাকায় যে পরীক্ষা হয় বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাগে ১২০০ টাকা। অনেক পরীক্ষা দেওয়া হয় এবং প্রায় ৯০ ভাগ পরীক্ষাই বাইরে থেকে করতে বাধ্য করা হয়।
এর প্রমাণও মিলল কিছুক্ষণ পরে। দেখা গেল এমআরআই কক্ষ তালাবদ্ধ। কতদিন ধরে তালাবদ্ধ এমন খোঁজ করতেই জানা গেল প্রায় দুই মাস ধরে এমআরআই হয় না হাসপাতালে। মানুষ বাধ্য হয়ে উচ্চমূল্যে হাসপাতালের বাইরের প্রতিষ্ঠানগুলো থেকে এমআরআই করান।
এসব নিয়ে খোঁজ নিতে হাসপাতালের দুই নাম্বার ভবনে গেলে কর্তব্যরত আনসার সদস্য তথ্য সংগ্রহে বাধা দেন। এরপর তিনি এ প্রতিবেদককে প্রথমে ওয়ার্ড মাস্টারের কাছে নিয়ে যান। ওয়ার্ড মাস্টার পাঠান সহকারী পরিচালকের কাছে। সহকারী পরিচালক মফিজুর রহমান মোল্লা পরামর্শ দেন পরিচালকের ‘অনুমতি’ নিয়ে তথ্য সংগ্রহ করার কথা।
অবশেষে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল কাজী মো. রশীদ উন নবীর সঙ্গে কথা হয়। পরিচালক ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এখানে রোগীর চাপ বেশি। এ কারণে বাধ্য হয়ে কিছু পরীক্ষা বাইরে করানো হয়।
এক প্রশ্নের জবাবে রশীদ উন নবী বলেন, ‘এটা এমন নয় যে বিশেষ কোনো প্রতিষ্ঠানে পরীক্ষা করার নির্দেশনা রোগীদের দেওয়া হয়। রোগী যেখানে ইচ্ছা পরীক্ষা করাতে পারেন।’
আরইউ/এমএমএ/