অপরাধীদের অভয়ারণ্য সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল!
রাজধানীর শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতাল। যেখান থেকে প্রায় প্রতিদিনই চুরি যায় রোগী ও তাদের সঙ্গে থাকা স্বজনদের মোবাইল ফোনসহ অন্যান্য জিনিসপত্র। রোগীদের ভাষায় এই হাসপাতালটি এখন চোর, দালাল আর হেরোইনসেবীদের নিরাপদ আবাসস্থল।
রোগীদের অভিযোগ, মোবাইল ফোন বা অন্যান্য জিনিস চুরি হওয়ার পর হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে গেলে তারা কোনো সহযোগিতা করে না। সিসিটিভির ফুটেজ দেখতে চাইলে বলে, এগুলো দেখে কোনো লাভ নেই।
এক্ষেত্রে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ রোগীদের রীতিমতো হাইকোর্ট দেখান। তারা বলেন, সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ লন্ডন থেকে দেখা যায়, বাংলাদেশে এই ফুটেজ দেখা যায় না। বলে, থানায় জিডি কিংবা মামলা করেন। যার কারণে কর্তৃপক্ষের উপর বিরক্ত রোগী ও তাদের সঙ্গে থাকা আত্মীয়-স্বজনরা।
রবিবার (২৮ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত সরেজমিনে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে ঘুরে রোগী ও তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে এসব অনিয়মের চিত্র পাওয়া গেছে।
নোয়াখালীর ফিরোজ দুদিন ধরে রোগী নিয়ে আছেন এই হাসপাতালে। সকালের দিকে ক্যানটিনে নাস্তা করতে আসলে ক্যানটিন থেকে তার ছোট বোনের মোবাইল ফোন চুরি হয়। এরপর তিনি পরিচালকের রুমে গেলে পরিচালক বলেন, এখানে সিসিটিভির ভিডিও ফুটেজ দেখা যাবে না। আপনি থানায় চলে যান। এরপর ফিরোজ নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আনসার সদস্যদের কাছে গেলেও কোনো প্রতিকার পাননি। পরে বাধ্য হয়ে তিনি থানায় যান।
ফিরোজ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, প্রায় প্রতিদিন এই হাসপাতাল থেকে অসংখ্য মানুষের মোবাইল ফোন ও অন্যান্য জিনিস হারায়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো ব্যবস্থা নেয় না। তাদের গাফিলতির জন্য এসব ঘটনা ঘটে। সোহরাওয়ার্দী হাসপাতাল এখন দালাল, চোর, হেরোইনসেবীদের আখড়া হয়ে গেছে। যা দেখার কেউ নেই।
অবশ্য চোর ও হেরোইনসেবীদের ব্যাপারে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে জানতে চাইলে তারা বিরক্ত বোধ করেন এবং কর্তৃপক্ষ জানায়, হাসপাতালের দালাল চক্র, চোর, হেরোইনসেবী যদি থেকে থাকে তাহলে আমাদের কিছু করার নেই। আমরা ডাক্তার, চিকিৎসা দিয়ে থাকি। তাদের ধরা আমাদের কাজ না।
হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা একাধিক আনসার সদস্যরা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, প্রায় প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের মোবাইল ফোন চুরি হয়। চুরির অভিযোগে হেরোইনসেবী ও চোর চক্রের সদস্যদের আটক করা হয়। গেল ৬ মাসে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ জন চোরকে আটক করে সংশ্লিষ্ট থানায় সোপর্দ করা হয়।
আনসার সদস্যদের অভিযোগ, সংশ্লিষ্ট থানায় এসব চোরদের হস্তান্তরের পর পুলিশ অনেককে ছেড়ে দেয়। যেসব চোরের মা-বাবা আছে তাদের মূলত মামলা দিয়ে পুলিশ কোর্টে চালান করে। অন্য যারা হেরোইনসেবী বা চুরি করে, যাদের মা-বাবা নেই পুলিশ তাদের নিতে চায় না। রাস্তা বা অন্যান্য জায়গায় পানিশমেন্ট দিয়ে ছেড়ে দেয়।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমাদের হাসপাতালে দালাল আছে, আপনি দালালের কাছে যাবেন কেন? তা ছাড়া চোর বা হেরোইনসেবীদের সঙ্গে আমাদের কোনো সম্পর্ক নেই। এসব নিরাপত্তার দায়িত্বে রয়েছে আনসার সদস্য বা সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ।
তিনি বলেন, আমাদের হাসপাতালে দালাল বা অন্যান্য অনিয়ম থাকলে আপনার সেটা জেনে লাভ কী? এসব লেখার দরকার নেই।
সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা আনসার কমান্ডার মো. দেলোয়ার হোসেনের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দালাল চক্র, চোর ও হেরোইনসেবীদের ধরতে আমরা প্রতিদিন অভিযান চালাই। তাদের ধরতে আনসার সদস্যরা সিভিল টিমে কাজ করছে।
তিনি বলেন, আজও দুজন চোরকে আমরা আটক করেছি। আর হেরোইনসেবীদের আমরা আটক করে থানায় দিলে পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। এজন্য হেরোইনসেবীদের আটক করে পানিশমেন্ট দিয়ে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ দালাল চক্র, চোর বা অন্যান্য বিষয়ে আপনাদের সতর্ক করেছে কি না- এই প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পরিচালক স্যারের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা কাজ করি। তিনি যেসময় যেটা বলেন সেটা নিয়ে আমাদের পড়ে থাকতে হয়। অনেক সময় অন্যদিকে খেয়াল করার সুযোগ থাকে না। আমরা তার প্রটোকল মেইনটেইন করি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে শেরে বাংলা থানার এক কর্মকর্তা বলেন, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল চলে পরিচালক ডা. মো. খলিলুর রহমানের নেতৃত্বে। তার ওখানে অনিয়ম হলে তিনি পুলিশি সহায়তা চাইবেন। তিনি যদি পুলিশি সহায়তা না চায় তাহলে আমরা তাদের সহযোগিতা করব কীভাবে?
তিনি আরও বলেন, তা ছাড়া সব সময় হাসপাতালের সামনে আমাদের টহল ডিউটি এবং স্পেশাল ফোর্স কাজ করে। চোর, হেরোইনসেবীদের ধরতে আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে।
কেএম/এনএইচবি/এসজি