ঘুষ যেখানে বকশিশ!
সঠিক সময়ে পাওয়া যায় না চিকিৎসক, নার্স এবং ওষুধ। সেবার মান তথৈবচ।জাতীয় অর্থোপেডিক হাসপাতাল (পঙ্গু) ঢুকলেই এমন চিত্র পাবেন যে কেউ। সাধারণ রোগী ও তাদের আত্মীয়-স্বজনদের অভিযোগ, বকশিশ ছাড়া কোনো কাজ হয় না পঙ্গু হাসপাতালে। রোগীদের ভাষায়, পঙ্গ হাসপাতালে ঘুষ এখন বকশিশ হয়ে গেছে।
রোগী ভর্ভির সময় বিভিন্ন সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় রোগীর লোকজনদের। আর ভালো বেডে যেতে ওয়ার্ড বয়দের দিতে হয় ১ হাজার থেকে ১৫ শত টাকা।
রোগী ও তাদের স্বজনদের অভিযোগ, জরুরি ও বহির্বিভাগের গেট থেকেই ভর্তি পযর্ন্ত শুরু হয় রোগীদের ভোগান্তি। রোগীদেরকে সরকারি ওষুধ সরবরাহের কথা থাকলেও সেই সেবা থেকে বঞ্চিত রোগীরা। শুধু রোগীই যে ভোগান্তির শিকার তা নয়, এই হাসপাতালে দালালদের খপ্পরে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন রোগীদের সঙ্গে থাকা আত্মীয়-স্বজনরাও দালালরা।
রবিবার (২৮ আগস্ট) সকাল থেকে দুপুর পযর্ন্ত রাজধানীর জাতীয় অর্থোপেডিক (পঙ্গু) হাসপাতালে ঘুরে এসব অভিযোগ পাওয়া গেছে।
অবশ্যই এসব অভিযোগের বিষয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, কেউ যদি কাউকে বকশিশ দেয় অথবা দালালের খপ্পরে পড়ে অন্য জায়গায় পেশেন্ট নিয়ে যায় তাহলে আমাদের করার কিছু নাই। সাধারণ রোগীরা ভাবেন, ওয়ার্ড বয়, ক্লিনার হয়তো রোগীদের ভালো একটি বেডের ব্যবস্থা করে দিতে পারবেন এজন্য তারা অনেক সময় তাদের দিয়ে বিভিন্ন কাজ করায় এবং বকশিশ দেয়। এটা একান্ত রোগীদের ব্যাপার, এখানে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কিছু বলার নেই।
পা ভাঙা নিয়ে ময়মনসিংহ থেকে এসে দুদিন আগে এই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন রায়হান নামে এক তরুণ। সঙ্গে থাকা তার বড় ভাই মোহাম্মদ সুমন মিয়া বলেন, ছোট ভাই রায়হানকে নিয়ে হসপাতালে ভর্তি হয়েছে। কিন্তু এখানে এসে দেখি ওয়ার্ড বয়, ক্লিনারসহ অন্যান্য স্টাফদের অনেকে বকশিশ দেয়। আমিও একজনকে ৫০০ টাকা দিয়েছি ভালো একটি বেডের ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য। বাকি ৫০০ টাকা বেড পেলে দিব। কারণ, আমার ছোট ভাই সাধারণ ওয়ার্ডে থাকতে চাচ্ছে না।
মোহাম্মদ তালুকদার নামের আরেকজন বলেন, সকালে আউটডোরে এসে ডাক্তার দেখাতে দাঁড়িয়েছি, প্রায় ৫০ মিনিট হলো। পিছন থেকে একজন আনসার মতিউরকে ২০০ টাকা বকশিশ দিয়ে আগে চলে গেছে। এখন ঘুষ নাই, সব জায়গায় বকশিশ হয়ে গেছে।
রাজধানীর শেওড়াপাড়ার আমেনা খাতুন তার বারো বছরের ছেলেকে নিয়ে পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন শনিবার (২৭ আগস্ট) রাতে। আমেনা বলেন, বন্ধুদের সঙ্গে বল খেলতে গিয়ে আমার ছেলেটার হাত ভেঙে গেছে। ডাক্তার বলছে কয়েকদিন হাসপাতালে ভর্তি থাকতে। সাধারণ ওয়ার্ডে মোটেও আমার বাচ্চাটা থাকতে চাচ্ছে না। ওয়ার্ড বয় রসুলকে বলেছি আমাকে একটা বেড ব্যবস্থা করে দিতে এবং কোনো রোগী চলে গেলে জানাতে। এজন্য আমি তাকে কিছু টাকা দিতে চেয়েছি, সবাই দিচ্ছে আমিও দিচ্ছি।
তিনি বলেন, আমার পাশে যে রোগী ছিল ওই রোগী চলে যাওয়ার সময় আমাকে বলেছে রসূলকে ধরলে কাজ হবে, এজন্য আমি রসূলকে ধরেছি। আশা করি বেড পেয়ে যাব।
সরজমিন পাওয়া তথ্য অনুযায়ি, বকশিশ ছাড়া কোনো কাজ হচ্ছে না পঙ্গু হাসপাতালে। চিকিৎসা সেবা প্রদানের পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা থাকলেও অভ্যন্তরীণ সিন্ডিকেটের দুর্নীতি ও অনিয়মের কারণে চরম ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন রোগীরা।
হাসপাতালে জরুরি বিভাগ থেকে শুরু করে কেবিন, ওয়ার্ড, প্যাথলজি বিভাগ, অপারেশন থিয়েটারসহ বহির্বিভাগ পর্যন্ত সবকিছু সিন্ডিকেটের নিয়ন্ত্রণে। পঙ্গু হাসপাতালে টাকা ছাড়া কোনো রোগী ওয়ার্ডবয় ও আয়াদের কাছ থেকে ন্যূনতম সেবা পান না বলে অভিযোগ উঠেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে হাসপাতালের পরিচালকের সহকারী মোহাম্মাদ জাহিদ ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, কোনা রোগী যদি সাধারন কোন ওয়ার্ড বয়, খালা, ক্লিনার বা অন্য কাউকে বকশিস দেয় সেক্ষেত্রে আমরা কি করতে পারি।
তিনি আরও বলেন, নিয়ম অনুযায়ী রোগীদের সাধারণ ওয়ার্ড থেকে বেডে দেওয়া হয়। আমরা চেষ্টা করি মানুষকে সেবা দিতে। পঙ্গু হাসপাতাল অনেক বড় একটা প্রতিষ্ঠান। সারাদেশের মানুষ এখানে এসে সেবা নেয়। এখানে কিছু ত্রুটি থাকবে, কিন্তু বর্তমানে আগের থেকে অনেক ভালো আছে। এখন আর দালাল বা অন্য চক্রের সদস্যরা রোগীদের ভুল বোঝাতে পারে না।
তিনি বলেন, ‘সাধারণ রোগীরা একটু সজাগ থাকলেই দালালের খপ্পড় বা অন্যান্য অসুবিধা থেকে অনেকটা মুক্ত থাকবেন।’
এনএইচবি/এমএমএ/