ফিরে দেখা ২০২১
বছরজুড়ে সরগরম ছিল টিকা কূটনীতি
টিকা কূটনীতিতে ২০২১ সাল জুড়ে সরকারের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। টিকার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বিভিন্নভাবে উন্নত দেশগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। অবশেষে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে টিকা পাওয়া শুরু হয়।
ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটের সঙ্গে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার তিন কোটি ডোজের চুক্তি করেছিল বেক্সিমকো ফার্মা। কিন্তু চুক্তি অনুযায়ী ভারত ৭০ লাখ ডোজ টিকা দেওয়ার পর রপ্তানি বন্ধ করে দেয়।
কারণ হিসেবে দেশটি বলে তাদের অবস্থাই খুব খারাপ। কাজেই টিকা রপ্তানিতে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। যা হোক গত ২ ডিসেম্বর ভারত থেকে চুক্তির আওতায় আরও ৪৫ লাখ ডোজ টিকা এসেছে।
ভারত থেকে টিকা না পাওয়ার কারণে বিপদে পড়ে যায় বাংলাদেশ। শুরু হয় টিকা পেতে কূটনৈতিক তৎপরতা। কিন্তু সে সময় টিকা পাওয়া ততটা সহজ ছিল না। সব দেশই টিকা দিতে চায় কিন্তু খুব কম দেশই কথা রাখে।
যুক্তরাষ্ট্র সে সময় টিকা দিতে চাইলেও দিতে দেরি করে। টিকার ব্যাপক চাহিদা থাকায় তখন বাংলাদেশ পায়নি। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশকে জানায়, তারা যে তালিকা করেছে সে তালিকায় বাংলাদেশের অবস্থান অনেক নিচে। তালিকাটি করা হয়েছে সংক্রমণ ও মৃত্যুর বিষয়টি বিবেচনা করে। যেসব দেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু বেশি সে সব দেশ আগে টিকা পাবে। বাংলাদেশে সংক্রমণ ও মৃত্যু তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় টিকা প্রাপ্তির তালিকায় নিচে অবস্থান করছে।
এরপর চীনের সঙ্গে টিকার জন্য আলোচনা শুরু করে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং জানান, টিকা পেতে একটু দেরি হবে। প্রথমবার টিকার জন্য যোগাযোগ করেছিল বাংলাদেশ। তারপর যোগাযোগ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ কারণে তালিকার নিচের দিকে চলে গেছে দেশটি।
তারপরও বাংলাদেশ কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, পৃথকভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর সঙ্গে এবং যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে টিকার জন্য অব্যাহতভাবে যোগাযোগ করেছে, লেগে থেকেছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু টিকা পাওয়া যাচ্ছিল না। পাওয়া যাচ্ছিল শুধু আশ্বাস।
সে সময় পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন হতাশা প্রকাশ করে এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের বলেন, ‘সবাই শুধু টিকা দেবে বলে। কিন্তু হাতে তো পাই না।’
সে অনুষ্ঠানে পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, দরিদ্র দেশগুলো মাত্র ০.৩ শতাংশ টিকা পেয়েছে। বাকি ৯৭.৭ শতাংশ ধনী দেশগুলো রেখে দিয়েছে।
অবশেষে সফলতা আসে বছরের দ্বিতীয়ার্ধে। টিকার বৈশ্বিক প্লাটফরম কোভ্যাক্সের আওতায় বিভিন্ন দেশ থেকে টিকা পাওয়া শুরু করে বাংলাদেশ। পৃথকভাবেও অনেক দেশ বাংলাদেশকে টিকা দেওয়া শুরু করে।
গত ২১ ডিসেম্বর বুস্টার ডোজ নিয়ে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘আমাদের যথেষ্ট পরিমাণ টিকা মজুত আছে। সাপ্লাইয়ের কোনো সমস্যা নেই। তাই বুস্টার ডোজ দেওয়া শুরু করেছি। কারণ, আমরা যথাযথভাবে টিকা না দিলে নতুন যে সাপ্লাই আসার কথা তা আসতে দেরি হবে।’
টিকার যৌথ উৎপাদন
এর মধ্যে টিকার যৌথ উৎপাদন নিয়েও বেশ কয়েকটি দেশের সঙ্গে আলোচনা করে বাংলাদেশ। প্রথমে রাশিয়ার স্পুৎনিক ভি টিকা দেশে উৎপাদিত হবে বলে জানা যায়। এ সংক্রান্ত একটি চুক্তিও হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত রাশিয়ার সঙ্গে বিষয়টি আর এগোয়নি।
এরপর টিকার যৌথ উৎপাদন নিয়ে আলোচনা শুরু হয় চীনের সঙ্গে। অনেক আলোচনার পর অবশেষে ১৬ আগস্ট সিনোফার্ম, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও ইনসেপ্টা ভ্যাকসিন লিমিটেডের মধ্যে টিকার যৌথ উৎপাদনে চুক্তি স্বাক্ষর হয়।
আরইউ/এএন