নবজাতকের থাইরয়েড অভাবজনিত রোগ নির্ণয়ে প্রশিক্ষণ
নবজাতকের জন্মগত থাইরয়েড হরমোনের অভাবজনিত রোগ অথবা জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম নবজাতক শিশুর জন্য একটি সংকটজনক অবস্থা। যা জন্মের প্রথম কয়েক সপ্তাহের মধ্যে শনাক্ত করে চিকিৎসা করা না হলে শিশুটি স্থায়ীভাবে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীতে পরিণত হয়। শিশুর জন্মের ৪ সপ্তাহের মধ্যে জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম নির্ণয় ও চিকিৎসা শুরু করা গেলে তাকে শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধিতার অভিশাপ থেকে রক্ষা করা সম্ভব।
'ড্রাইড ব্লাড স্পট (ডিবিএস) পদ্ধতিতে নবজাতকের রক্তের নমুনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও জন্মগত থাইরয়েড হরমোনের অভাবজনিত রোগ নির্ণয়' শীর্ষক প্রশিক্ষণ কর্মসূচি অনুষ্ঠানে এসব বলেন বিশেষজ্ঞরা। গতকাল বৃহস্পতিবার (২৩ ডিসেম্বর) ঢাকা মেডিকেল কলেজ সংলগ্ন ইনস্টিটিউট অব নিউক্লিয়ার মেডিসিন অ্যান্ড অ্যালায়েড সায়েন্সেসের (ইনমাস) অডিটোরিয়ামে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।
ইনমাসের পরিচালক প্রফেসর ডা. জেসমিন আরা হকের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশনের (বাপশক) চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. সানোয়ার হোসেনের উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু জরুরি প্রয়োজনের কারণে তিনি উপস্থিত ছিলেন না। বিশেষ অতিথি ছিলেন বাপশকের সদস্য (জীববিজ্ঞান) প্রফেসর ডা. অশোক কুমার পাল। অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন প্রকল্প পরিচালক ড. মোহাম্মাদ আনোয়ার-উল-আজিম।
দিনব্যাপী প্রশিক্ষণ কর্মসূচিতে নবজাতকের ডিবিএস পদ্ধতিতে রক্তের নমুনা সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও জন্মগত থাইরয়েড হরমোনের অভাবজনিত রোগ নির্ণয় পদ্ধতি সম্পর্কে উপস্থিত প্রশিক্ষণার্থীদের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এই পদ্ধতিতে জন্মের সঙ্গে সঙ্গে শিশুর নাড়ী অথবা জন্মের ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে শিশুর পায়ের গোড়ালি থেকে কয়েক ফোটা রক্ত নিয়ে তা বিশেষ পদ্ধতিতে ফিল্টার পেপারে সংরক্ষণ করা হয়। পরবর্তীকালে তা ল্যাবরেটরিতে পরীক্ষা করে জানা যায় তার জন্মগত হাইপোথাইরয়েড রোগ আছে কি না?
বাপশক সদস্য (জীববিজ্ঞান) প্রফেসর ডা. অশোক কুমার পাল জানান, চলমান প্রকল্পের মাধ্যমে নবজাতকের রক্ত পরীক্ষার মধ্য দিয়ে জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম শনাক্তকরণের লক্ষ্যে সমগ্র দেশব্যাপী ডিবিএস পদ্ধতিতে নবজাতক শিশুর রক্তের নমুনা সংগ্রহ করা হবে। এই প্রকল্পের মাধ্যমে জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজম শনাক্তকরণের বিশেষায়িত গবেষণাগার নির্মাণ ছাড়াও নবজাতক শিশুর এ রোগ শনাক্তকরণ বিষয়ে জন সচেতনতা বৃদ্ধি করা হবে। এ ছাড়া জন্মগত রোগ শনাক্তকরণ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক, নার্স, হেলথ টেকনোলজিস্ট, প্যারাম্যাডিকস, স্বাস্থ্যকর্মী এবং এনজিও কর্মীদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান করা হবে। প্রকল্পের মাধ্যমে বাংলাদেশে জন্মগত হাইপোথাইরয়েডিজমের প্রাদুর্ভাব বিষয়ে অধিক পরিমাণ উপাত্ত সংগ্রহ করা হবে। যা পরবর্তীসময়ে জন্মগত এ রোগ শনাক্তকরণ বিষয়ে জাতীয় নীতি প্রণয়ন করতে সংশ্লিষ্ট পেশাজীবী মহল ও নীতি নির্ধারকদের জন্য সহায়ক হবে।
'নবজাতকের মধ্যে জন্মগত হাইপোথাইরয়েড রোগের প্রাদুর্ভাব শনাক্তকরণ (দ্বিতীয় পর্যায়)' নামক উন্নয়ন প্রকল্প কর্তৃক গৃহীত এই কর্মসূচিতে বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মিটফোর্ড মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালসহ দেশের বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল থেকে আগত প্রায় ১১০ জন নার্স ও মেডিক্যাল টেকনোলজিস্ট অংশগ্রহণ করেন।
টিটি/