অবৈধ হাসপাতাল-ক্লিনিক বন্ধে অভিযান
রাজধানীর বাড্ডার অবৈধ হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে অভিযান চালাচ্ছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর।
রবিবার (২৯ মে) দুপুর ১২টার দিকে অধিদপ্তরের সহ-পরিচালক ফাহমিনা আক্তারের নেতৃত্বে ঢাকা ক্রাউন মেডিকেল সেন্টারে অভিযান চালানো হয়। এসময় বেশ কিছু অনিয়মের কারণে এটির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, লাইসেন্সবিহীন হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধে সারাদেশে অভিযান শুরু করা হয়েছে।
জানা যায়, লাইসেন্স ছাড়াই প্রায় ৯ হাজার প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে যাচ্ছে বলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ধারণা, যা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। অবৈধ স্বাস্থ্যসেবা প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে এ অভিযান চলছে বলেও জানা গেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (হাসপাতাল ও ক্লিনিক) ডা. মো. বেলাল হোসেন জানাান, আমরা ঘোষণা দিচ্ছি, যেন তারা নিজেরাই এসব প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেয়। তাহলে আমরা তাদের সাধুবাদ জানাব। আর তা না হলে আমরা নিজেরা ব্যবস্থা গ্রহণ করব। এক্ষেত্রে সিলগালা করে দেওয়াসহ কঠোর শাস্তি দেওয়া হবে।
তিনি বলেন, ‘আমরা অনুমোদনহীন বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলোকে ৭২ ঘণ্টার সময় দিয়েছি। আজ রবিবার এই সময় শেষ হচ্ছে। আজ থেকে স্বাস্থ্য অধিদফতরের পক্ষে রাজধানীসহ সারাদেশে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করা হচ্ছে। বিস্তারিত এ বিষয়ে পরে জানানো যাবে।
তিনি বলেন, ‘আমাদের কাছে অনিবন্ধিত বা অবৈধ কোনো স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানের তালিকা নেই। তবে নিবন্ধিত বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের তালিকা রয়েছে। প্রত্যেকটি শহরে ও জেলায় একটি নির্দিষ্টসংখ্যক নিবন্ধিত ক্লিনিক ও হাসপাতাল আছে। তার তালিকা সিভিল সার্জনদের কাছে রয়েছে। এর বাইরে কোনো প্রতিষ্ঠান থাকলে তারা তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে এবং সেগুলোর তালিকা তৈরি করে আমাদের কাছে পাঠাবে।’
তবে বিভিন্ন সময় অবৈধ ও অনিবন্ধিত হাসপাতাল ও ক্লিনিকের বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালিত হলেও এর ধারাবাহিকতা খুব একটা লক্ষ করা যায়নি। জনবলের অভাব, স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের উদাসীনতা, অভিযানকালে নিরাপত্তার অভাব এবং রাজনৈতিক নেতৃবৃন্ধের অসহযোগিতার কারণে মনিটরিং অব্যাহত থাকে না বলে জানিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেওয়া তথ্য মতে জানা যায়, শনিবার অভিযানের প্রথম দিনে নাটোর, চুয়াডাঙ্গা, টাঙ্গাইল, সিলেট, পাবনা, চট্টগ্রাম, সাভার, ধামরাই, মানিকগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় অন্তত ৮৮টি হাসপাতাল ও ক্লিনিককে জরিমানা এবং সিলগালা করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। আজ রোববার ঢাকাসহ জেলা ও বিভাগীয় পর্যায়ের অবৈধ হাসপাতাল ক্লিনিকের তথ্য নিয়ে কাজ করছে অধিদপ্তরের ভ্রাম্যমাণ আদালত।
ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান শুরু করেছেন। জানা যায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে, রাজধানীর বাড্ডা নতুন বাজার ও চকবাজার এলাকাসহ সারাদেশের বিভিন্ন জায়গায় অবৈধ ক্লিনিক ডায়াগনস্টিক সেন্টার বন্ধের অভিযান অব্যাহত রেখেছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, দেশে প্রায় ২০ হাজার বেসরকারি হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়াগনস্টিক সেন্টার রয়েছে যার মধ্যে লাইসেন্স আছে ১০,৮৯৩টির। কর্তৃপক্ষের ইনস্পেকশনের অধীনে আছে আরও ৬ হাজার প্রতিষ্ঠান।
এছাড়াও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে লাইসেন্সের জন্য আবেদন না করেই ৩ হাজারের বেশি প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এক কর্মকর্তা।
জানা যায়, ২০১৮ সালের নভেম্বর থেকে অনলাইন পদ্ধতিতে বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের নিবন্ধন প্রক্রিয়া চালু হয়। চার বছরের বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও এখনো পর্যন্ত এর আওতায় আসেনি সবগুলো বেসরকারি হাসপাতাল-ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। এর আগে ২০২০ সালের ২৩ আগস্টের মধ্যে বেসরকারি হাসপাতালের লাইসেন্স নবায়ন না করলে হাসপাতাল বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সে সময় জোরালোভাবে অভিযান চলে। তারপর তা থেমে গেছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হাসপাতাল শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, প্রাইভেট হাসপাতাল-ক্লিনিক নিবন্ধিত করা একটি চলমান প্রক্রিয়া। তবে সময় বেধে দিয়ে অভিযান চালালে কাজ হয়। ২০২০ সালের আগে নিবন্ধিত প্রাইভেট হাসপাতাল ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার ছিল মাত্র ৪ হাজার, গত দেড় বছরে কিন্তু সেটি ১০ হাজার ছাড়িয়েছে। তিনি আরও বলেন, এবারও দ্রুত অধিক প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনা ও সঠিকভাবে পরিচালনার জন্য অভিযান চালানো হচ্ছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযানের নেতৃত্ব দেওয়া অধিদপ্তরের সহ-পরিচালক ফাহমিনা আক্তার ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, আমরা ঢাকা ক্রাউন মেডিকেল সেন্টারে অভিযান পরিচালনা করে বেশ কিছু অনিয়ম পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে আইগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের অভিযান চলমান রয়েছে, অভিযান শেষে বিস্তারিত পরে জানানো যাবে।
কেএম/আরএ/