'দুর্নীতির কারণে রোগীরা হাসপাতালে ওষুধ পায় না'
জনগণের স্বাস্থ্যখাতের জন্য অনেক ওষুধ হাসপাতালে বরাদ্দ রাখা হয়। কিন্তু দুর্নীতির কারণে রোগীরা তা পায় না। স্বাস্থ্যের বিভিন্ন উপ-খাতে যে অর্থ বরাদ্দ রাখা হয় সক্ষমতার অভাবে তাও ব্যয় করতে পারে না। ১০০ বেডের হাসপাতালকে ২৫০ বেডের করা হলেও সেবা বাড়ানো হয় না। তাই আগামী বাজেটে স্বাস্থ্যখাতে তিনগুণ অর্থ বরাদ্দ রাখা দরকার। এটা করা হলে বৈষম্যহীন স্বাস্থ্য সেবার সুযোগ বাড়বে।
মঙ্গলবার (২৬ এপ্রিল) বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচ এবং উন্নয়ন সমন্বয়ের যৌথ উদ্যোগে ‘স্বাস্থ্য বাজেট ২০২২-২৩’ বিষয়ক অনলাইন জাতীয় সংলাপে বক্তারা এ সব কথা বলেন।
অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের সভাপতি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. আতিউর রহমান।
সংসদ সদস্য লুৎফুন নেসা খান বলেন, ‘সরকার জনগণের জন্য হাসপাতালে ৩৩ ধরনের ওষুধ দিয়ে থাকে। কিন্তু দুর্নীতির কারণে রোগীরা তা পায় না। আমাদের দেশে স্বাস্থ্যখাতে অর্থ বরাদ্দ খুবই কম। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে এটা সর্বনিম্নে। তাই বর্তমানের চেয়ে তিনগুণ বরাদ্দ বাড়ানো দরকার। কমিউনিটি ক্লিনিক আরও ঢেলে সাজাতে হবে। অনেক হাসপাতালের ছাদের পলেস্তার খসে রোগীর উপর পড়ে।’
তিনি আরও বলেন, ‘করোনার পরে দেশে ৩৫ থেকে ৪০ হাজার ডাক্তার নিয়োগ দেওয়া হলেও নার্স এখনো কম। দেশে প্রতি ১০ হাজার মানুষের জন্য মাত্র এক জন ডাক্তার। তাই স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ বাড়ানো দরকার।’
সংসদ সদস্য অ্যারোমা দত্ত বলেন, ‘সাধারণ মানুষের জীবন মান উন্নয়নে স্বাস্থ্যখাতে অর্থ বরাদ্দ বেশি করে রাখা দরকার। আগামী বাজেটে তিন গুণ নয়, চার গুণ অর্থ বরাদ্দ করা দরকার। সাধারণ মানুষ যাতে সেবা পায়।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব হেলথ ইকোনমিক্সের অধ্যাপক ড. সৈয়দ আব্দুল হামিদ বলেন, ‘মোট বাজেটের মাত্র ৫ শতাংশ স্বাস্থ্যখাতে বরাদ্দ রাখা হয়েছে। তা ১৫ শতাংশ করা দরকার। উন্নয়ন বাজেটেই শুধু অর্থ ব্যয় করা হয়। কিন্তু অপারেশন কাজে ব্যয় করা হয় না। ১০০ বেডের হাসপাতালকে ২৫০ বেডে উন্নতি করা হয়, শুধু বিল্ডিং করা হয়। কিন্তু বিল্ডিং, বেড বাড়লেও ডাক্তার, নার্স ও টেকনেশিয়ান বাড়ানো হয় না। দেশে হাজার হাজার গ্রাজুয়েশন বেকার থাকলেও ডিপ্লোমাদের দিয়ে সেবা দেওয়া হচ্ছে। আবার উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কোনো ডায়াগনস্টিকের ব্যবস্থা নেই। তাই সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সাধারণ মানুষ।’
বিআইডিএস মহাপরিচালক ড. বিনায়ক সেন বলেন, ‘গ্রামাঞ্চলে কমিইউনিটি ক্লিনিক ভালো সফলতা দেখিয়েছে। বর্তমানে শহরে প্রচুর লোক বাড়ছে। তাই শেহরের সব ওয়ার্ডে না হলে প্রতি ২ থেকে ৩টায় একটি করে এই ক্লিনিক করা দরকার। স্বাস্থ্য বীমার আওতায় আনতে হবে জনগণকে। এভাবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিতে হবে। আগামী বাজেটে অর্থ বাড়াতে হবে।’
ড. আতিউর রহমান বলেন, করোনার কারণে সরকার হয়ত আগামী বাজেট সংকোচনমূলক করতে পারে। কিন্তু স্বাস্থ্যখাতে বাজেটে বরাদ্দ কাটছাট করা ঠিক হবে না। অনেক মন্ত্রণালয় বরাদ্দের ব্যয় করতে পারলেও স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় তা পারে না সক্ষমতার অভাবে। তাই স্বাস্থ্যখাতে অর্থ বরাদ্দ বাড়াতে হবে।
সংলাপে সম্মানিত অতিথি ছিলেন সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহল হক, এমপি। আলোচক ছিলেন বাংলাদেশ হেলথ ওয়াচের আহ্বায়ক ডা. মোশতাক রাজা চৌধুরী।
জেডএ/আরএ/