ডায়রিয়া: রাজধানীতে শিশুরাই আক্রান্ত হচ্ছে বেশি
রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র, বাংলাদেশ (আইসিডিডিআর’বি) হাসপাতালে সব শ্রেণির মানুষের ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা কয়েকদিন বাড়লেও বর্তমান তা স্বাভাবিক রয়েছে। কিন্তু হঠাৎ করে সোমবার (৪ এপ্রিল) সকাল থেকে মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) এ দুদিন ধরে শিশুরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হচ্ছে বলে মনে করছেন আইসিডিডিআরবির হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। তাদের দাবি, বিভিন্ন বয়সের রোগীর চাপ কমে গেলেও দুদিন ধরে রাজধানীতে শিশুরা বেশি ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে।
মহাখালী আইসিডিডিআরবির হাসপাতালে সরেজমিনে গিয়ে এ সব চিত্র ছিল চোখে পড়ার মতো।
চিকিৎসকরা জানান, মানুষ একটু সচেতন হয়েছে বলে মনে হচ্ছে। তবে, এ দুদিনে শিশু রোগীর সংখ্যা একটু বেশি। চিকিৎসকদের দাবি, প্রচণ্ড গরমে শিশুরা একটু বেশি ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। তবে শিশুদের পরিবার একটু সচেতন হলে এর সংখ্যাও কমে আসবে বলে মনে করেন তারা।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বাড়তে শুরু করে। তিনদিন আগে প্রতিদিন হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছে ঢাকার আইসিডিডিআরবিতে। বর্তমানে রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক স্বাভাবিক রয়েছে।
আইসিডিডিআরবির হাসপাতাল প্রধান ডা. বাহারুল আলম জানিয়েছেন, ২ থেকে ৩ দিন আগে রোগীর সংখ্যা অনেক ছিল। কিন্তু ২ দিন ধরে দিন মজুর ও শিশু রোগীরা বেশি ভর্তি হচ্ছে।
আইসিডিডিআরবি বলছে, গেল ১৫ দিনের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ মার্চ এক হাজার ৫৭ জন, ১৭ মার্চ ১ হাজার ১৪১ জন, ১৮ মার্চ ১ হাজার ১৭৪ জন, ১৯ মার্চ ১ হাজার ১৩৫ জন, ২০ মার্চ ১ হাজার ১৫৭ জন, ২১ মার্চ ১ হাজার ২১৬ জন, ২২ মার্চ ১ হাজার ২৭২ জন, ২৩ মার্চ ১ হাজার ২৩৩ জন, ২৪ মার্চ ১ হাজার ১৭৬ জন, ২৫ মার্চ ১ হাজার ১৩৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন।
এ ছাড়া ২৬ মার্চ ১ হাজার ২৪৫ জন, ২৭ মার্চ ১ হাজার ২৩০ জন, ২৮ মার্চ ১ হাজার ৩৩৪ জন, ২৯ মার্চ ১ হাজার ৩১৭ জন, ৩০ মার্চ ১ হাজার ৩৩১ জন, ৩১ মার্চ ১ হাজার ২৮৫ জন, ১ এপ্রিল ১ হাজার ২৭৪ জন এবং ২ এপ্রিল বিকাল ৪টা পর্যন্ত ৮৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। ৩ এপ্রিল থেকে ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যা কমতে থাকে।
আইসিডিডিআরবি ঢাকা হাসপাতালের তথ্য বলছে, ২০১৭ সালে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ জন রোগী, ২০১৮ সালে প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের বেশি, ২০১৯ সালে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ জন, ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে প্রতিদিন গড়ে ৪১৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন। ২০২১ সালে করোনা মহামারিতে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ জন, ২০২২ সালে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৩১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে শিশু নেয়ামুলকে (৮) নিয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন মিরপুরের সৈয়দ নজরুল মিয়া। এ সময় সৈয়দ নজরুল মিয়া বলেন, দুদিন ধরে বাচ্চা অসুস্থ। ডায়রিয়া হয়েছে হসপিটালে দুদিন ভর্তি আছি। আজ বাসায় চলে যাব।
আইসিডিডিআরবি হাসপাতালে ভাষানটেক বস্তি থেকে শিশু (৬) তন্বীকে নিয়ে বের হওয়ার পথে তার মা আনোয়ারা বেগম বলেন, দুদিন হাপাতালে ভর্তি ছিলাম। তিন চারদিন ধরে বমি করছিল তন্বী। এর পর বমি একটু বেশি হয়, এজন্য হাসপাতালে ভর্তি থাকি। এখন আমার মা সুস্থ আছে।
যাত্রাবাড়ী থেকে দুই বছরের শিশুকে নিয়ে তিন দিন ধরে কলেরা হাসপাতালে ভর্তি আছেন সবুজ ও তার পরিবার। সবুজ বলেন, যাত্রাবাড়ী এলাকায় মনে হয় বেশি ডায়রিয়া হচ্ছে। আমার আশেপাশে এখানে সবই প্রায় যাত্রাবাড়ী এলাকার রোগী। তিন দিন ধরে হাসপাতালে আছি। আজকে আমার বাচ্চার অবস্থা ভালো, একটু পরে চলে যাব।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে আইসিডিডিআরবি হাসপাতালের জনসংযোগ কর্মকর্তা তারিফুল ইসলাম বলেন, দুদিন ধরে সাধারণ রোগীর সংখ্যা কমে আসছে। বর্তমান শিশু রোগীর সংখ্যা কেমন? বেশি মনে হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসলেই সব ধরনের মানুষ ডায়রিয়া আক্রান্ত হচ্ছে। তবে কাল থেকে শিশু রোগীর সংখ্যা একটু বেশি মনে হচ্ছে।
এ বিষয়ে আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল ঢাকার সহকারী বিজ্ঞানী শহিদুল ইসলাম বলেন, কয়েকদিন ধরে এবারের রোগীর সংখ্যা অন্য বছরগুলোর তুলনায় স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশেই ছিল। তবে, এখন চাপ অনেকটা কমছে। আগের মতই রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে। কিন্তু গতকাল এবং আজ শিশু ও দিনমজুরি রোগীর সংখ্যা স্বাভাবিক তুলনায় বেশি মনে হচ্ছে।
কেএম/আরএ/