কলেরা হাসপাতালে প্রতি ৩ মিনিটে একজন রোগী
ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে বলে মনে করছেন চিকিৎসকরা। রাজধানীর মহাখালীতে আন্তর্জাতিক উদারাময় গবেষণা কেন্দ্র বাংলাদেশে (আইসিডিডিআরবি) গেল ৫ দিনের তথ্য অনুযায়ী প্রতি মিনিটে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন অন্তত একজন রোগী।
রবিবার (৩ এপ্রিল) আইসিডিডিআরবির একাধিক চিকিৎসক বলছেন, হাসপাতালে প্রতি ৩ মিনিটে একজন রোগী আসছেন বলে তারা মনে করছে।
ওই চিকিৎসকরা বলেন, রমজানে আমরা ভেবেছিলাম ডায়রিয়া আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা কমে আসবে কিন্তু না। আজ থেকে এ পর্যন্ত অসংখ্য রোগী হাসপাতালে আসছে।
গেল কয়েক বছরের হিসাব বলছে, ২০১৮ সালের পর চলতি বছর দেশে ডায়রিয়া আক্রান্তের সংখ্যা আশঙ্কাজনক। শুরুতে যাত্রাবাড়ী, দক্ষিণখান, কদমতলা, বাসাবো, মোহাম্মদপুর এলাকায় বেশি আক্রান্ত হলেও এখন ছড়িয়ে পরেছে পুরো ঢাকায়। সহ্যের বাঁধ ভাঙলে সাধারণ মানুষ ছুটছেন হাসপাতালে।
গেল ১৫ দিনের তথ্য অনুযায়ী, ১৬ মার্চ এক হাজার ৫৭ জন, ১৭ মার্চ ১ হাজার ১৪১ জন, ১৮ মার্চ ১ হাজার ১৭৪ জন, ১৯ মার্চ ১ হাজার ১৩৫ জন, ২০ মার্চ ১ হাজার ১৫৭ জন, ২১ মার্চ ১ হাজার ২১৬ জন, ২২ মার্চ ১ হাজার ২৭২ জন, ২৩ মার্চ ১ হাজার ২৩৩ জন, ২৪ মার্চ ১ হাজার ১৭৬ জন, ২৫ মার্চ ১ হাজার ১৩৮ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন।
এ ছাড়া ২৬ মার্চ ১ হাজার ২৪৫ জন, ২৭ মার্চ ১ হাজার ২৩০ জন, ২৮ মার্চ ১ হাজার ৩৩৪ জন, ২৯ মার্চ ১ হাজার ৩১৭ জন, ৩০ মার্চ ১ হাজার ৩৩১ জন, ৩১ মার্চ ১ হাজার ২৮৫ জন, ১ এপ্রিল ১ হাজার ২৭৪ জন এবং ২ এপ্রিল বিকেল ৪টা পর্যন্ত ৮৬১ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন।
আইসিডিডিআরবি ঢাকা হাসপাতালের তথ্য বলছে:
১. ২০১৭ সালে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেনে।
২. ২০১৮ সালে প্রতিদিন গড়ে এক হাজারের বেশি রোগী ভর্তি হয়েছিলেন।
৩. ২০১৯ সালে প্রতিদিন গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন।
৪. ২০২০ সালে করোনা মহামারিতে প্রতিদিন গড়ে ৪১৬ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন।
৫. ২০২১ সালে করোনা মহামারিতে প্রতিদিন গড়ে ৫০০ জন রোগী ভর্তি হয়েছিলেন।
৬. ২০২২ সালে প্রতিদিন গড়ে এক হাজার থেকে সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩৩১ জন রোগী ভর্তি হয়েছেন।
চিকিৎসকরা বলছেন, অপরিচ্ছন্ন ও দুর্গন্ধযুক্ত পানির এবং অতিরিক্ত তাপমাত্রার কারণে এ ভোগান্তি এখন চরমে। বাসার পানি ময়লা আছে। পানিতে ফুটিয়ে খেলেও গন্ধ পাওয়া যায় এমন অভিযোগে করেছেন অনেক রোগীরা। তারা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকার মানুষ।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত শয্যার ব্যবস্থা করেছে আইসিডিডিআরবি। মৌসুম ভেদে পানিবাহিত এই রোগ থেকে বাঁচতে সচেতনতায় গুরুত্ব দিচ্ছেন চিকিৎসক।
চিকিৎসকরা বলছেন, গ্রীষ্মকালের গরমের শুরুতে বরাবরের মতোই ডায়রিয়া এবং কলেরার রোগী বেশি ভর্তি হয় হাসপাতালে। তবে অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার রোগীর সংখ্যা অনেক বেশি।
এ বিষয়ে আইসিডিডিআরবি হাসপাতাল ঢাকার সহকারী বিজ্ঞানী শহিদুল ইসলাম বলেন, এবারের রোগীর সংখ্যা অন্য বছরগুলোর তুলনায় স্বাভাবিকের থেকে একটু বেশি মনে হচ্ছে। ত প্রতি বছর মার্চ, এপ্রিল, মে এবং আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে রোগীর চাপ বাড়ে। অন্যান্য বছর দৈনিক গড়ে ৮০০ থেকে ৯০০ রোগী ভর্তি হতো, এবার সংখ্যাটা অনেক বেশি মনে হচ্ছে।
কেএম/এমএমএ/