ডাউন সিনড্রোম কেন হয়? কিভাবে বাঁচা যায়?
শাবিপ্রবি প্রতিনিধি : নুরুল ইসলাম রুদ্র
‘একীভূত সমাজব্যবস্থা, অংশগ্রহণে বাড়ায় আস্থা’-প্রতিপাদ্যটিতে সিলেটের ‘শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (শাবিপ্রবি)’তে ‘বিশ্ব ডাউন সিনড্রোম দিবস’ উদযাপন করা হয়েছে। বায়োকেমেস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি’র উদ্যোগে তাদের ‘ডাউন সিনড্রোম রিচার্স গ্রুপ’র আয়োজনে ও ‘টিটুয়ান্টিওয়ানআরএস (T21RS, https://www.t21rs.org)’র সাহায্যে ‘২১ মার্চ’ দিবসটি উদযাপন করা হয়।
গতকাল ছিল এই দিন, সোমবার। ক্লাস শেষে, দুপুর ১টায়, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ‘অ্যাকাডেমিক ভবন-এ’র সামনে থেকে বর্ণাঢ্য র্যালি বের করা হয়। অর্জুনতলা হয়ে গোলচত্বর, বঙ্গবন্ধু চত্বর পেরিয়ে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবন ঘুরে অর্জুনতলায় ফিরেছে। শাবিপ্রবি ছাড়াও সিলেটের বিভিন্ন এলাকার ডাউন সিনড্রোমাক্রান্ত শিশুরাও অংশ নিয়েছে।
এরপর সংক্ষিপ্ত সমাবেশ। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় বায়োকেমেস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি (বিএমবি)’র সহকারী অধ্যাপক ড. শেখ মির্জা নুরুন্নবী বিশেষ সভাটি উপস্থাপনা করেছেন। প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়রুল ইসলাম। বক্তব্য দিয়েছেন লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের ডিন, অধ্যাপক ড. কামরুল ইসলাম, বিএমবি’র প্রধান ও সহযোগী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ-আল-শোয়েব এবং এম. এ. জি. ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের কলেজের পিডিয়াট্রিশিয়ান বা অন্যতম শিশু রোগ বিশেষজ্ঞ ডা. জিয়াউল রহমান।
ডা. জিয়াউল রহমান বলেছেন, ‘এই রোগটি কিন্তু বংশ পরস্পরায় সঞ্চারিত হয় না। বাবা ও মায়ের শুক্রানু ও ডিম্বানু এবং জাইগোট বেড়ে ওঠার সময়ে রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে রোগাক্রান্ত শিশু জন্ম নিতে পারে।’ তিনি আরো বলেছেন, ‘পরীক্ষালব্ধ গবেষণার ফলাফলে জানা যায়, সাধারণত গর্ভবতী মায়ের শরীরে ফলিক এসিডের পরিমাণ কম থাকলে বা তার খাদ্য পরিপাক ক্রিয়া বাধাগ্রস্থ হলে ডাউন সিনড্রোম রোগটি তার সন্তানের হওয়ার প্রবণতা ৯০ শতাংশ পযন্ত বেড়ে যায়। এর মধ্যে গর্ভবতী মায়ের বয়স ৩০ বছর বা বেশি হলে ক্রটিপূর্ণ মিয়োসিস কোষ বিভাজনের হার বাড়ে। এসব কারণেই শিশুটি রোগে আক্রান্ত হয়। ফলে মায়ের খাবার-দাবার ও চলাফেরার খুব মনোযোগ দিতে হবে। কেননা, এই কারণগুলোই ত্রুটিপূর্ণ মিয়োসিস কোষ বিভাজনের অন্যতম নিয়ামক হিসেবে কাজ করে। কোনো, কোনো ক্ষেত্রে বাবার বয়স ৩০’র বেশি হলে ত্রুটিপূর্ণ মিয়োসিস কোষ বিভাজনের হার ১০ ভাগ পর্যন্ত বাড়ে। ফলে আমি ছাত্র, ছাত্রীদের অনুরোধ করব, ক্যারিয়ারে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি ৩০ বছরের মধ্যে বিবাহ করতে হবে। স্ত্রীর সঙ্গে অবশ্যই ভালো ব্যবহার করতে হবে। তাকে ভালোবাসতে হবে। তার যত্ন নিতে হবে।’
তিনি আরো জানিয়েছেন, ‘ডাউন সিনড্রোম রোগের উপসর্গগুলো হলো-শিশুর মুখমন্ডল ও নাকের সংযোগ চ্যাপ্টা হয়, মাথা-নাক-মুখ-কান ও গলা খাটো হয়, চক্ষু উপরে উঠানো থাকে, জিহ্বা বের হয়ে থাকে, শুষ্ক ত্বক থাকে, শরীরে বয়সের ছাপ পড়ে যায় ও কনজেনিটাল হার্ট ডিফেক্ট ঘটে।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমেস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি’র প্রধান অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ আব্দুল্লাহ আল শোয়েব বলেছেন, “মানব শরীরে সাধারণত ২১ নম্বর ক্রোমোজমটির দুটি করে থাকে। তবে ডাউন সিনড্রোমে রোগে আক্রান্ত মানুষের তিনটি থাকে। ফলে রোগটিকে ‘২১ ট্রাইজমি বা ৩ কপি’ বলা হয়।”
লাইফ সায়েন্সেস অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. কামরুল ইসলাম বলেছেন, ‘ডাউন সিনড্রোমে আক্রান্তদের ব্রেন খুব সচেতন। তারা কিন্তু যেকোনো কাজে পূর্ণ মনোযোগ দিতে পারে ও সেভাবে কাজ করে। ফলে অন্যান্যদের মতো তাদেরও সমাজে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের একটি অঞ্চলে তৃতীয় লিঙ্গের একজনকে নির্বাচনের মাধ্যমে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। আমরা আশা করি, ভবিষ্যতে এ রোগাক্রান্ত মানুষরাও ভালো কিছু করতে পারবে।’
প্রধান অতিথি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. আনোয়ারুল ইসলাম বলেছেন, ‘ডাউন সিনড্রোমাক্রান্তরা পরিবারের ও সমাজের বোঝা নয়। চিকিৎসা ও সচেতনতায় অবশ্যই রোগটি প্রতিরোধযোগ্য। সচেতনতা বাড়িয়ে অন্যান্য রোগের মতো এই রোগটিরও বিস্তার কমানো সম্ভব হয়। জন্ম থেকে রোগে আক্রান্তদের সাধারণ মানুষের ভিন্ন ভাবার কোনো সুযোগ নেই। আমাদেরকে বাংলাদেশের সব মানুষকে দক্ষতা বাড়ানোর মাধ্যমে যেমন দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হয়, তেমনি এই রোগের শিশুরা তাদের অংশ হয়ে সফল হবে বলে আমি তাদের সাফল্য কামনা করি।’
ওএস।