সাগরে গভীর নিম্নচাপ, ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’ আঘাত হানতে পারে বাংলাদেশে
ছবি সংগৃহিত
কার্তিকের শেষ দিনে গতকাল পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগর ও তত্সংলগ্ন এলাকায় সৃষ্টি হয়েছে একটি নিম্নচাপের। চোখ রাঙাচ্ছে সম্ভাব্য ঘূর্ণিঝড় ‘মিধিলি’। আজ বৃহস্পতিবার এটি গভীর নিম্নচাপে পরিণত হয়ে ঘূর্ণাবর্তে পরিণত হতে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, ঘূর্ণিঝড়প্রবণ নভেম্বর মাসে এটাই হতে পারে শেষ ঘূর্ণিঝড়। এটি আগামীকাল শুক্রবার দুপুরে পর থেকে ১৮ নভেম্বর শনিবার ভোর ৬টার মধ্যে খুলনা ও বরিশাল বিভাগের উপকূলের ওপর দিয়ে বাংলাদেশের স্থলভাগে উঠে আসতে পারে। তখন বাতাসের সম্ভাব্য গতিবেগ হতে পারে ঘণ্টায় দমকা হাওয়াসহ ৬০-৮০ কিলোমিটার। সম্ভাব্য জলোচ্ছ্বাসের উচ্চতা হতে পারে তিন থেকে পাঁচ ফুটের বেশি।
আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, পশ্চিম-মধ্য বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট লঘুচাপটি গতকাল বুধবার নিম্নচাপে পরিণত হয়েছে। যার ফলে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্কসংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর বলছে, বৃহস্পতিবার সকাল ৬টায় চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৮৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ৭৪৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে, মোংলা সমুদ্র বন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ৬৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-পশ্চিমে অবস্থান করছিল। এটি আরও উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর ও ঘনীভূত হতে পারে।
তবে গভীর নিম্নচাপটি আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। আর ঘূর্ণিঝড়টির নাম হবে ‘মিধিলি’।
আজ বৃহস্পতিবার সকালে আবহাওয়া অধিদপ্তরের আবহাওয়াবিদ কাজী জেবুন্নেসা গণমাধ্যমকে বলেন, ‘গভীর নিম্নচাপটি এখন যেখানে আছে, সেটি আরও ঘনীভূত হতে পারে। ঘূর্ণিঝড়ে রূপ নিতে পারে।’
ঘূর্ণিঝড় বা সাইক্লোনে রূপ নিলে বাংলাদেশের কোন উপকূল অতিক্রম করতে পারে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এটি খুলনা-মোংলা হয়ে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের দিক দিয়ে অতিক্রম করতে পারে। এখন পর্যন্ত যে অবস্থানে আছে তাতে সেটি গতিপথ পরিবর্তন করতেও পারে।’
ভারতীয় আবহাওয়া অধিদপ্তরের তথ্যমতে, মালদ্বীপের দেওয়া নতুন এই ঘূর্ণিঝড়টি বাংলাদেশ বা ভারতের পশ্চিমবঙ্গের উপকূলেও আঘাত হানার আশঙ্কা রয়েছে।
এ দিকে নিম্নচাপের প্রভাবে সকাল থেকে ঢাকাসহ দেশের বেশির ভাগ অঞ্চলে আকাশ মেঘাচ্ছন্ন রয়েছে। এর ফলে খুলনা, বরিশাল, চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু জায়গায় একই সঙ্গে ঢাকা ও রাজশাহী বিভাগে বৃষ্টি হতে পারে।
গভীর নিম্নচাপের প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা সৃষ্টি অব্যাহত রয়েছে। এর প্রভাবে উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের ওপর দিয়ে ঝোড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে।
গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের ৪৮ কিলোমিটার এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ কিলোমিটার যা দমকা অথবা বড় হাওয়ার আকারে ৬০ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। গভীর নিম্নচাপ কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর উত্তাল রয়েছে।
এ কারণে চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরসমূহকে তিন নম্বর স্থানীয় সতর্ক সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর ও গভীর সাগরে অবস্থানরত মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেই সঙ্গে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।
এ সময় সারাদেশে রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে এবং দিনের তাপমাত্রা ১ থেকে ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমতে পারে বলেও পূর্বাভাসে জানানো হয়েছে।
শনি এবং রবিবারও বৃষ্টির প্রবণতা অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা।