বায়ুদূষণের কারণে দিল্লিতে দুই দিন সব স্কুল বন্ধ
ছবি সংগৃহিত
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বায়ুদূষণের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় দুই দিনের জন্য সব প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা করা হয়েছে। এ মৌসুমে প্রথমবারের মতো বায়ুদূষণের মাত্রা গুরুতর স্তরে নামে বৃহস্পতিবার।
গতকাল শুক্রবার (৩ নভেম্বর) রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল এই ঘোষণা দেন। কেজরিওয়াল বলেছেন, ‘বায়ুদূষণ বাড়তে থাকায় দিল্লির সব সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় আগামী দু’দিন বন্ধ থাকবে।’
প্রতি শীতে দিল্লির ওপরে একটি কলুষিত ধোঁয়াশা হাজির হয়। এ সময় নির্মাণস্থলের ধুলাবালু, গাড়ির নির্গমণ ও প্রতিবেশী রাজ্যগুলোর জমিতে পোড়ানো নাড়ার ধোঁয়া নগরীটির ঠান্ডা, ভারি বাতাসে আটকা পড়ে থাকে। এতে ২ কোটি বাসিন্দার নগরীটিতে শ্বাসযন্ত্রের রোগ বেড়ে যায়। শুক্রবার দিল্লির কয়েকটি পর্যবেক্ষণ স্টেশনে একিউআই ৪৮০-এর আশপাশে ছিল। এদিন নগরীর বায়ু ঘন ধূসর রঙের হয়ে ওঠে। বাসিন্দারা চোখ জ্বালা ও গলা চুলকাচ্ছে বলে অভিযোগ করেন। একিউআই ০ থেকে ৫০ এর মধ্যে থাকলে সেটি ভালো বলে বিবেচিত হয়। কিন্তু এই বায়ু মান সূচক ৪০০ থেকে ৫০০-এর মধ্যে থাকলে তা স্বাস্থ্যবান মানুষকেও আক্রান্ত করে আর যারা রোগগ্রস্ত, তাদের জন্য বিপদের কারণ হয়। সুইজারল্যান্ডের গোষ্ঠী আইকিউ এয়ারের করা তালিকায় শুক্রবার নয়াদিল্লি বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত শহরের তালিকার শীর্ষে আছে। গোষ্ঠীটি ভারতের রাজধানীর একিউআই ৬১১ বলে নির্ধারণ করেছে, যা ‘বিপজ্জনক’ শ্রেণিতে পড়েছে।
সাধারণত প্রতিবছর ১ থেকে ১৫ নভেম্বর পর্যন্ত দিল্লির বায়ুদূষণের মাত্রা সর্বোচ্চ থাকে। এসময় দিল্লির পার্শ্ববর্তী রাজ্য পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় খড় পোড়ানোর ঘটনা বেড়ে যায় বলে জানিয়েছে দিল্লি দূষণ নিয়ন্ত্রণ কমিটি।
খবরে বলা হয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় দিল্লির বাতাসে ধূলিকণার ঘনত্ব ছিল ২ দশমিক ৫ পিএম বা পার্টিকুলেট ম্যাটার। এ আকারের ধূলিকণা ফুসফুসে বাসা বাঁধে। এছাড়াও এই ধূলিকণার কারণে নানারকম রোগ দেখা যায়।
সরকারি তথ্য অনুসারে, দিল্লি ও শহরতলির বেশ কয়েকটি অংশে এ পরিমাণের দূষণ বাতাসের প্রতি ঘনমিটারে ৬০ মাইক্রোগ্রামের নিরাপদ সীমা সাত থেকে আট গুণ বেশি।
পরিস্থিতির অবনতি দেখে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল দিল্লির সকল সরকারি ও বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো শুক্রবার ও শনিবার (৩ ও ৪ নভেম্বর) বন্ধ থাকবে বলে ঘোষণা দিয়ে জানিয়েছেন।
এছাড়াও ক্রমবর্ধমান দূষণের প্রভাব মোকাবিলায় গ্রেডেড রেসপন্স অ্যাকশন প্ল্যানের তৃতীয় পর্যায়ের অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ প্যানেল শহরে অপ্রয়োজনীয় নির্মাণকাজ অবিলম্বে নিষিদ্ধ করার আদেশ দিয়েছেন কর্তৃপক্ষ।
এর আগে গত সপ্তাহে দ্বিতীয় পর্যায়ের অংশ হিসেবে দিল্লি মেট্রো ও বৈদ্যুতিক বাসসহ সকল গণপরিবহনকে দূষণ কমানোর নির্দেশ দেয়া হয়। এছাড়া গত মাসেই দিল্লি সরকার আতশবাজি উৎপাদন, বিক্রয় ও ব্যবহারের ওপর ব্যাপক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রতিবছরই দূষিত বায়ুর কারণে দিল্লিতে গুরুতর স্বাস্থ্যগত জটিলতা দেখা দেয়।
এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে ৩৭টা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের মধ্যে কমপক্ষে ১৮টি কেন্দ্রের ফলাফল বলছে, দিল্লির বায়ুমান এয়ার কোয়ালিটি ইনডেক্স অনুযায়ী, তীব্র দূষণের শিকার। দিল্লি সরকার পরিস্থিতি পর্যালোচনার জন্য শুক্রবার (০৩ নভেম্বর) এক জরুরি সভা ডেকেছে।
প্রতিবছরই দীপাবলির সময় দূষণে ঢাকে দিল্লি। নভেম্বর মাস পড়তে না পড়তেই ফের দূষণ ত্রাস। পাশাপাশি এই সময়ে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশ, হরিয়ানা, পাঞ্জাবের বিস্তীর্ণ অংশে ফসলের গোড়া পোড়ানো হয়। তার জেরেও ভয়াবহ দূষণের শিকার হয় দিল্লিসহ বিস্তীর্ণ লাগোয়া এলাকাগুলো। গত বছরও দীপাবলির রাতের পরেই দিল্লির বাতাসের মান চলে যায় ‘খুব খারাপ’ ক্যাটেগরিতে। ধোঁয়াশায় ঢেকে গিয়েছিল দেশটির রাজধানীর আকাশ।