ঘূর্ণিঝড় হামুনের তাণ্ডবে লন্ডভন্ড কক্সবাজার, মৃত্যু ৩ জন
ছবি সংগৃহিত
উপকূল অতিক্রম করছে ঘূর্ণিঝড় হামুন। ঝড়ের কবলে পড়ে কক্সবাজারে ইতোমধ্যে তিন জনের মৃত্যু হয়েছে। শতাধিক বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) রাতে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক বিভীষণ কান্তি দাশ এ তথ্য জানিয়েছেন।
ঘূর্ণিঝড় ‘হামুন’র প্রভাবে কক্সবাজারে মঙ্গলবার (২৪ অক্টোবর) সন্ধ্যার পর থেকে প্রবল বেগে ঝোড়ো হাওয়ার তাণ্ডব শুরু হয়। তা প্রায় দুই ঘণ্টাব্যাপী স্থায়ী হয়।
কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাস বলেছেন, 'এ পর্যন্ত দুই জনের মৃত্যু হয়েছে বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। তাদের বাড়ি সদর ও মহেশখালী উপজেলায়।'
তিনি আরও বলেন, 'জেলা প্রশাসনের একটি দল ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা পরিদর্শন করেছে। শহরের সমিতি পাড়ায় অসংখ্য বাড়ি-ঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।'
স্থানীয় সূত্র জানিয়েছে, শহরের পাহাড়তলীতে দেয়ালচাপায় আব্দুল খালেক নামে একজনের মৃত্যু হয়েছে। অন্যদিকে মহেশখালীতে মাটিচাপা পড়ে হারাধন নামে আরেকজন মারা গেছেন।
এছাড়া কক্সবাজারের চকরিয়া উপজেলার বদরখালী ইউনিয়নে আজগর আলী নামে একজন গাছচাপা পড়ে মারা গেছেন।
অন্যদিকে বাতাসের তোড়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কসহ বিভিন্ন সড়কে গাছ ভেঙে পড়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
কক্সবাজার শহরের বাংলাবাজার এলাকার বাসিন্দা মো. সাইফ উদ্দিন জানান, রাত পৌনে আটটার দিকে বাংলাবাজার ও খরুলিয়া এলাকায় সড়কের ওপর বড় বড় দুটি গাছ ভেঙে পড়লে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এতে দুই দিক থেকে আসা শত শত দূরপাল্লার বাস কয়েক ঘণ্টা ধরে আটকা পড়ে। এতে দূর-দূরান্ত থেকে আসা যাত্রী ও পর্যটকদের ভোগান্তি পোহাতে হয়। রাত প্রায় সাড়ে ১০টার দিকে পুনরায় যান চলাচল শুরু হয়।
কক্সবাজার শহরের দরিয়া নগর এলাকার বাসিন্দা নুরুল ইসলাম জানান, সন্ধ্যা সাতটার দিকে পর পর তীব্র বেগে বাতাস শুরু হয়। বাতাসের তাণ্ডব চলে প্রায় দুই ঘণ্টা। এতে ওই এলাকার কয়েকশ ঘরবাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। মেরিন ড্রাইভ সড়কে গাছ পড়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। কলাতলী থেকে টেকনাফ পর্যন্ত শত শত গাছ ভেঙে সড়কের ওপর পড়েছে।
তিনি বলেন, এবারের বাতাস যে গতি তা গত ১০ বছরেও আমরা দেখিনি হয়নি। গত বছর ২৪ অক্টোবর ঘূর্ণিঝড় সিত্রাং আঘাত হেনেছিল তখন জলোচ্ছ্বাস হলেও বাতাসের তীব্রতা এবারের মতো ছিল না।
সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মজিবর রহমান জানিয়েছেন, ঘূর্ণিঝড় হামুনের প্রভাবে তীব্র ঝড়ো বাতাস বয়ে যাচ্ছে। সেন্টমার্টিন দ্বীপের বড় কোনো ক্ষতির খবর এখনো তিনি পাননি।
রোহিঙ্গা ক্যাম্পে ক্ষতির ব্যাপারে তারা খোঁজ-খবর করছেন বলে জানিয়েছেন শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনারের কার্যালয়ের (আরআরআরসি) অতিরিক্ত কমিশনার সামসুদ্দোজা। ঘর-বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার পাশাপাশি অনেক জায়গায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়ে পড়েছে। বর্তমানে কক্সবাজার শহর ও আশেপাশের এলাকা বিদ্যুৎহীন রয়েছে।
কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) বিভীষণ কান্তি দাশ জানান, বিভিন্ন উপজেলা থেকে ক্ষয়ক্ষতির খবর আসছে। বিশেষ করে উপকূলীয় উপজেলা মহেশখালী, কুতুবদিয়া, পেকুয়ায় ক্ষয়ক্ষতির বেশি আশঙ্কা করা হচ্ছে। তবে ক্ষয়ক্ষতি নিরুপণ শেষে বিস্তারিত জানা যাবে। ইতোমধ্যে দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রাথমিকভাবে নয়টি উপজেলার জন্য ৫০ হাজার টাকা এবং ১৪ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও সৈকতের বিভিন্ন পয়েন্টে লাল পতাকা উঁচিয়ে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, পর্যটকদের সৈকতে না নামতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। পর্যটকদের সতর্ক করতে বিচকর্মীরা সেখানে মাইকিং করছেন।