কোক স্টুডিও কনসার্টে থাকছেন না জেমস
ছবি সংগৃহিত
বেশ ক’দিন ধরে গানবাজারে প্রচলিত রয়েছে এবারের ‘কোক কনসার্ট’-এর আর্মি স্টেডিয়াম আয়োজনে ‘সারপ্রাইজ গেস্ট’ হিসেবে হাজির হবেন রকস্টার জেমস। এমন আভাস ধরে গত ৫ দিন ধরে নগরবাউল রয়েছেন সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে।
অথচ রবিবার (২৯ অক্টোবর) নাগাদ নিশ্চিত হওয়া গেলো, সারপ্রাইজ তো দূরের কথা স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেও ১০ নভেম্বরের আর্মি স্টেডিয়াম কনসার্ট-এ অংশ নিচ্ছেন না জেমস ও তার দল। গণমাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন দলটির মুখপাত্র রুবাইয়াৎ ঠাকুর রবিন।
তিনি বলেন, ‘এই কনসার্টে অংশ নেওয়ার বিষয়ে আমাদের সঙ্গে কোক কর্তৃপক্ষের আলাপ হয়েছে ঠিকই। তবে সেটি কখনোই চূড়ান্ত ছিলো না। কারণ, আমরা বলেছি সেদিন সম্ভব নয়। একই দিন (১০ নভেম্বর) আমরা বরিশালে শো কনফার্ম করেছি। সেখানেই অংশ নেবো সেদিন। যদিও এরমধ্যে আমরা লক্ষ্য করছি, আমাদের নাম ও ছবি দিয়ে প্রচারণা চলছে হরদম! গণমাধ্যমেও খবর দেখছি তিন/চার দিন ধরে। প্রতিটি খবরের শিরোনাম ও ছবি জেমস ভাইয়ের। এটা আমাদের জন্য খুবই বিব্রতকর ও বাজে অভিজ্ঞতা হলো। এমনটা আশা করিনি কোক বাংলা আর গণমাধ্যমের কাছে।’
অভিযোগ রয়েছে, জেমসকে ঘিরে ফেসবুক প্রচারণা ও খবর প্রকাশের মধ্য দিয়ে ‘কোক স্টুডিও বাংলা’ কর্তৃপক্ষ চালাচ্ছে ‘জেমস’ বাণিজ্য!
তাহলে কেন ও কিভাবে এমন খবর ছড়ালো সোশ্যাল হ্যান্ডেল ও গণমাধ্যমে? চেক করে দেখা গেছে, কোক স্টুডিও বাংলা’র ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজজুড়ে এই কনসার্টের নানা প্রচারণা চলছে। যেখানে অবশ্য কনসার্টে অংশ নেওয়া শিল্পীদের নাম-পরিচয়ের চেয়ে বিভিন্ন পণ্যের বিজ্ঞাপন বা অফারের প্রচারণাই চোখে পড়ছে বেশি। আলাদা করে এই কনসার্টের প্রচারণায় দেখা গেছে অর্ণব, ফুয়াদ ও ইমন চৌধুরীকে। বাদবাকি সব প্রচারণায় উঠে এসেছে ‘পাগলা বাবুর্চি’ থেকে ‘ফুড পাণ্ডা’র নানাবিধ অফার। যেগুলো এমন, ‘কম্বো বার্গার খাও, কনসার্টের টিকিট বুঝে নাও’। তবে এসব বাণিজ্যের ভিড়ে জেমস-এর নাম এখন আর খুঁজে পাওয়া যায়নি পেজটিতে। যদিও কেউ কেউ বলছেন, শুরুতেই কনসার্ট ঘোষণায় জেমস-এর নামও পাওয়া গিয়েছিলো, সেখান থেকেই খবরটি ছড়ায় গণমাধ্যমে। যা পরে মুছে ফেলা হয়েছে ফেসবুক পেজ থেকে। যদিও কোক কর্তৃপক্ষ সেটির সত্যতা স্বীকার করেনি।
এসব বিষয়ে নিশ্চিত হতে যোগাযোগ করা হয় কোক স্টুডিও বাংলা’র ইভেন্ট পিআর বেঞ্চমার্ক-এর সঙ্গে। প্রতিষ্ঠানটির অ্যাসিসটেন্ট ম্যানেজার (পাবলিক রিলেশন) ইমরান হোসাইন মিলন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সত্যি বলতে জেমস ভাইর খবরটি আমি নিজেও ক’দিন ধরে দেখছি সংবাদ মাধ্যমে। তবে এই সংবাদ আমরা কাউকে পাঠাইনি, পাঠালে সকলেই পেতেন। এমনকি আমি যতদূর জেনেছি, কোক কর্তৃপক্ষও এমন কোনও ঘোষণা দেয়নি কনসার্টের এবং লক্ষ্য করবেন, পত্রিকার খবরগুলোতে কোনও সূত্র বা কারও মন্তব্য নেই। ফলে এই খবর কেন ও কিভাবে গণমাধ্যমে এভাবে নিয়মিত প্রকাশ হলো, সে বিষয়ে আমি কিছুই জানি না।’
মিলন নিশ্চিত করেন, শুধু বেঞ্চমার্কই নয়; কোক স্টুডিও বাংলার ফেসবুক পেজ কিংবা এই ইভেন্টের সঙ্গে জড়িত কেউই ‘জেমস’-এর খবরটি কোথাও প্রকাশ করেনি। আবার এটাও জানালেন, জেমস এই কনসার্টে অংশ নেবেন কি নেবেন না, সেটাও তিনি জানেন না। তালিকা চূড়ান্ত হলেই জানাবেন, দিলেন নিশ্চয়তা।
সংশ্লিষ্টদের এই ‘না জানা’র মধ্যেই রয়েছে ‘বাণিজ্যিক ভূত’, মনে করছে নগর বাউল কর্তৃপক্ষ। কারণ, দিনশেষে বড় তারকা কনসার্টের ব্যানারে থাকলে টিকিট বিক্রিটা বাড়ে হু..হু করে, লোকে বলে।
গত বছর ৯ জুন একই ভেন্যুতে প্রথম কনসার্ট করে ‘কোক স্টুডিও বাংলা’। যেখানে প্রথম সিজনের শিল্পীদের সঙ্গে বাড়তি চমক হিসেবে ছিলেন জেমস। আয়োজকরা এবারও সেই ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হলেন, যদিও এগিয়ে থাকলেন ভৌতিক অথবা বাণিজ্যিক প্রচারণায়!
‘কোক স্টুডিও বাংলা’র দ্বিতীয় মৌসুমে ‘কথা কইয়ো না’, ‘নদীর কূল’, ‘দেওরা’, ‘দাঁড়ালে দুয়ারে’, ‘দিলারাম’ গানগুলো প্রকাশ করা হয়েছে।
গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো যাত্রা করে ‘কোক স্টুডিও বাংলা’। গত বছরই প্রথম মৌসুমে বেশ কিছু আলোচিত গান করেছে প্ল্যাটফর্মটি; এই বছর দ্বিতীয় মৌসুমও শেষ হয়েছে। প্রস্তুতি চলছে তৃতীয় মৌসুমের।
জানা গেছে, ‘কোক স্টুডিও বাংলা’ সিজন-২-এর শিল্পীদের নিয়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে এবারের কনসার্ট। এবার গান করবেন শায়ান চৌধুরী অর্ণব, সুনিধি নায়েক, ইসলাম উদ্দিন পালাকার, প্রীতম হাসান, হামিদা বানু, মেঘদল, ফুয়াদ লাইভ, ইমন চৌধুরী, অনিমেষ রায়, ডটার অব কোস্টাল, ফাইরোজ নাফিজা ও শুভেন্দু দাস।
একটি সূত্র জানিয়েছে, এবার তৃতীয় আসরের প্রস্তুতি নিচ্ছে কোক স্টুডিও বাংলার কর্তৃপক্ষ। শিগগিরই এর কাজ শুরু হবে।