সংগীত পরিচালক জে কে মজলিশের বিরুদ্ধে মামলা
অবৈধভাবে কনটেন্ট অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আপলোডের অভিযোগে সংগীত পরিচালক জে কে মজলিশের বিরুদ্ধে মামলা করেছে বেসরকারি টিভি চ্যানেল আরটিভি।
বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) জে কে মজলিশের বিরুদ্ধে মতিঝিল থানায় আরটিভির পক্ষে ক্ষমতা প্রাপ্ত হয়ে মামলা দায়ের করেন আরটিভি’র নির্বাহী প্রযোজক নূর হোসেন হীরা।
মামলার এজহারে উল্লেখ করা হয়-আমি মোহাম্মদ নূর হোসেন হীরা (৪৩) নির্বাহী প্রযোজক (অনুষ্ঠান বিভাগ), বেঙ্গল মিডিয়া করপোরেশন লিমিটেড (আরটিভি)-এর পক্ষে ক্ষমতাপ্রাপ্ত হয়ে অত্র থানায় আসিয়া আসামি ১। জাকের খান মজলিশ (জে কে মজলিশ) (৪৫), আসামি ২। অজ্ঞাত, পিতা ও মাতা অজ্ঞাত, সাং-শেয়ারহোল্ডার/স্বত্বাধিকার-গান বাকশো মিউজিক, ৯৩, আজিজ ভবন (৮ তলা), মতিঝিল সি/এ, ঢাকা- ১০০০, আসামি ৩। জুয়েল ডি কস্তা (৩৫), পিতা ও মাতা অজ্ঞাত, সাং- কান্ট্রি ম্যানেজার, গান বাকশো মিউজিক, ৯৩, আজিজ ভবন (৮ তলা), মতিঝিল সি/এ, ঢাকা- ১০০০, মোবাইল: ০১৬৭৮-০০০১৭৯, আসামিদের বিরুদ্ধে এই মর্মে এজাহার দায়ের করেতেছি যে, ২০১৯ সালে বেঙ্গল মিডিয়া নিজস্ব অর্থায়নে ও কারিগরি সহযোগিতায় বাংলার প্রচলিত ও বিলুপ্তপ্রায় লোকসংগীতগুলো পর্যায়ক্রমে নতুনভাবে সংগীতায়োজন ও শুটিং করে ‘ফোক ষ্টেশন’ শিরোনামে একটি অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে প্রচার ও প্রসারের একটি প্রকল্প হাতে নেয়। উক্ত অনুষ্ঠানটি বেঙ্গল মিডিয়ার টিভি চ্যানেল ‘আরটিভি’-তে প্রচার শুরু হয় ১০/০৮/২০১৯ ইং তারিখ থেকে এবং ইউটিউব চ্যানেল ‘আরটিভি মিউজিক’-এ প্রচার হয় ২৭/০৮/২০১৯ ইং তারিখ থেকে। ফোক ষ্টেশন সিজন এক থেকে চার পর্যন্ত মোট ৫২টি পর্বে ৩১২টি লোকগানে নতুন করে সংগীত আয়োজনের জন্য ১নং আসামিকে হায়ার ফর বেসিস -এ নিয়োগ দেয়া হয়। ১নং আসামি ও তার মিউজিশিয়ান টিমের পেমেন্ট বাবদ পর্যায়ক্রমে নগদ মোট ৩০,৯৬,০০০/- (ত্রিশ লক্ষ ছিয়ানব্বই হাজার) টাকা মাত্র বেঙ্গল মিডিয়া ১ নং আসামিকে প্রদান করে। উল্লেখিত গানের সকল কন্ঠশিল্পীদের সম্মানী এবং অনুষাঙ্গিক অন্যান্য খরচ বেঙ্গল মিডিয়া বহন করেছে। উল্লেখ্য যে, ১নং আসামি উল্লেখিত ৫২ পর্বে ৩১২টি গান ‘ফোক ষ্টেশন’-এর ব্যানারে বেঙ্গল মিডিয়ার বিভিন্ন প্লাটফর্মে প্রচার এবং পরিবেশনের জন্য সংগীত আয়োজক হিসেবে কাজ করতেন এবং সেই গানগুলোর গীতিকার, সুরকার বা কন্ঠশিল্পী ১নং আসামি নন বা কোনো প্রকারের কপিরাইট স্বত্ব বা অধিকার তার নাই। তিনি শুধুমাত্র সংগীত আয়োজক হিসেবে কাজ করতেন এবং তার বিনিময়ে উল্লেখিত পরিমান টাকা গ্রহণ করেছেন। তাছাড়া বেঙ্গল কর্তৃক কপিরাইট রেজিষ্ট্রেশন প্রাপ্ত সিজন এক থেকে চার পর্যন্ত কন্ঠশিল্পী সুলতানা ইয়াসমিন লায়লা’র কন্ঠে ‘নয়াবাড়ী’, ‘সখিগো আমার মন ভালা না’, কন্ঠশিল্পী অংকনের কন্ঠে ‘চেংড়া বন্ধুয়া’, কন্ঠশিল্পী অনন্যা আচার্য’র কন্ঠে ‘কলংকিনি রাধা’, ‘লাল পাহাড়ের দেশে যা’, কন্ঠশিল্পী সালমার কন্ঠে ‘মিলন হবে কতদিনে’, কন্ঠশিল্পী মৌমিতা তাশরিন নদীর কন্ঠে ‘মাটিরও পিঞ্জিরার মাঝে বন্দি হইয়ারে’ সহ বিভিন্ন কন্ঠশিল্পীর গাওয়া মোট ৩১২টি গানগুলো আসামিরা পরস্পর যোগসাযোগে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে অবৈধভাবে বিশ্বের বিভিন্ন অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে টাকা উপার্জনের জন্য ১নং আসামি গানগুলোর অডিও ক্লিপের কপি অপরাধমূলক বিশ্বাসভঙ্গ করতঃ চুরি করে নিজের কাছে রেখে দেয় এবং ‘ফোক ষ্টেশনের’ বিভিন্ন গানের ভিডিও থেকে অডিও আলাদা করে নিজের কাছে রেখে দেয়। পরবর্তীকালে, ১নং আসামী অসৎ উদ্দেশ্যে বেঙ্গল মিডিয়ার ‘আরটিভি’ এর ‘ফোক ষ্টেশন’ প্রোগ্রামের ১-৪ সিজনের গানগুলো ১নং আসামির গান বলে দাবি করেন এবং বেঙ্গল মিডিয়া কর্পোরেশন লিমিটেড ‘আরটিভি’-র অনুমতি ছাড়া অবৈধভাবে টাকা আয়ের জন্য ২ ও ৩ নং আসামীর ডিজিটাল ডিস্ট্রিবিউটর প্লাটটফর্ম ‘গানবাক্স মিউজিক’ এ উক্ত গানগুলো আপলোড করেন। তা ছাড়া আসামিরা মাল্টি চ্যানেল নেটওয়ার্ক (এমসিএস) প্রদানকারী কোম্পানি যার এর মাধ্যমে বেঙ্গল মিডিয়ার ফোক ষ্টেশনের গানগুলো বেঙ্গল মিডিয়ার অনুমতি ছাড়া প্রতারনার মাধ্যমে অবৈধভাবে টাকা আয়ের জন্য এবং বেঙ্গল মিডিয়া করপোরেশন লিমিটেড যাতে অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে টাকা আয় না করতে পারে সেই উদ্দেশে গানগুলো ২৬০ এর অধিক অডিও প্লাটটফর্ম-এ আপলোড করেন।
এজাহারে আরও বলা হয়, আসামীগণ ইন্টারন্যাশনাল স্ট্যান্ডার্ড রেকডিং কোড ব্যবহার করে অনুমানিক ২০২২ সালের জুন মাসের আগে কোনো এক সময়ে উল্লেখিত গানগুলোর অডিও পর্যায়ক্রমে আপলোড করে এবং বেঙ্গল মিডিয়া এর অনলাইন প্লাটফর্ম-এ আপলোডকৃত গানগুলোর জন্য ১নং আসামী ইউটিউব কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি করেন যে উক্ত গানগুলোর স্বত্বাধিকারী তিনি এবং সে অনুযায়ী তিনি টাকা দাবি করেন। ফলে ইউটিউব কর্তৃপক্ষ বেঙ্গল মিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে রেভিনিউ ক্লেইম করেছে। যার প্রায় ৩.৩১ মিলিয়ন সাবসক্রাইবার-এর প্রচারকৃত গানগুলো থেকে অর্জিত অর্থ প্রদান করা বন্ধ করে দেয় যার কারনে বেঙ্গল মিডিয়া বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হয়।
মামলার এজাহারে আরও বলা হয়েছে, পক্ষান্তরে, ১নং আসামি বেঙ্গল মিডিয়া করপোরেশন লিমিটেড ‘আরটিভি’-র গানগুলো চুরি করে ২ নং ও ৩ নং আসামীর সাথে যোগসাজসে ২৬০ এর অধিক অডিও প্লাটফর্ম থেকে অবৈধভাবে টাকা উপার্জন করছে। এই তথ্য বেঙ্গল মিডিয়া অবগত হওয়ার পর ১৩/০৬/২০২২ অদ্যাবধি ১নং আসামিকে ডিজিটাল প্লাটফর্ম থেকে উক্ত গানগুলো অপসারনের জন্য অনুরোধ করা হয়। অধিকন্তু, আসামিদেরকে ৭ আগস্ট উক্ত বিষয়ে একখানা লিগ্যাল নোটিশ পাঠানো হয় তা সত্বেও তারা গানগুলো অনলাইন প্লাটফর্ম থেকে অপসারণ করেন নাই এবং অনলাইন থেকে বেঙ্গল মিডিয়ার গান চুরি করে আপলোড করে বিপুল পরিমাণ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এবং বেঙ্গল মিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেল এর গান নিজের বলে দাবি করে বেঙ্গল মিডিয়ার বিপুল পরিমাণ আর্থিক ক্ষতি সাধন করে যাচ্ছে বিধায় আসামিরা ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ও দন্ডবিধি আইনে অপরাধ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে সুরকার ও সংগীত পরিচালক জে কে মজলিশ বলেন, ’এটা আমার সৃষ্টি, আমি যেকোনো জায়গা প্রকাশ করা আমার অধিকার রয়েছে। তা ছাড়া, এ বিষয়ে আর টিভির সঙ্গেে আমার কোনো চুক্তিও হয়নি।’
এএম/এমএমএ/