যে কথা বলে ’পদ্মশ্রী’ প্রত্যাখ্যান করেছিলেন সন্ধ্যা

ভারতের চতুর্থ সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা ‘পদ্মশ্রী’ ফিরিয়ে দিয়েছিলেন বাংলা গানের প্রবাদপ্রতিম সংগীত শিল্পী গীতশ্রী সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়।
ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসের প্রাক্কালে তাকে এই সম্মাননার জন্য মনোনীত করা হয়েছিল, কিন্তু অত্যন্ত ‘অপমানিত ও এবং অসম্মানিত’ বোধ করে তিনি ফিরিয়ে দিলেন ‘পদ্মশ্রী’।
গত ২৫ জানুয়ারির শেষ বিকালে কেন্দ্রীয় সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে সন্ধ্যা মুখোপ্যাধ্যায়কে ফোনে যোগাযোগ করা হয়। কিংবদন্তি এ শিল্পী তখনো বেশ অসুস্থ। কদিন আগে তিনি টয়লেটে পড়ে গিয়েছিলেন। সামান্য সর্দিকাশিও ছিল।
সব মিলিয়ে এ নব্বই বছরে এতটাই অসুস্থ ছিলেন যে সচরাচর কোনো ফোন ধরছিলেন না। তবু দিল্লী থেকে কেন্দ্রীয় সরকারের জরুরি ফোন বলায় কোনো রকমে ধরেন। তাকে বলা হয় ‘আমরা আগামীকাল আপনাকে পদ্মশ্রী সম্মানে ভূষিত করতে চাই। আপনি কি নেবেন? তাহলে অন্যান্য পুরস্কার প্রাপকদের সঙ্গে আগামীকাল সকালের মধ্যে আপনার নামও ঘোষণা করা হবে?’
ওই ফোন পেয়ে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় প্রথমে কিছুটা থমকে যান। এভাবে যে পদ্মশ্রী খেতাব দেওয়া হতে পারে তিনি ভাবতেও পারেননি। তারপর তার মনে হয় এতবছর ধরে সংগীতের জন্য এত অবদানের পর ‘পদ্মশ্রী’? তার সমসাময়িক অনেকেই যেখানে যোগ্যতার কারণেই কেউ ভারতরত্ন, কেউ পদ্মবিভূষণ, পদ্মভূষণ, সেখানে তিনি কিনা ‘পদ্মশ্রী’? যে সম্মানে মুম্বাই সংগীত জগতের অনেকেই ভূষিত। তার আরও খারাপ লাগে শেষ মুহূর্তে এমন প্রস্তাবনার ধরনে। বিশেষ করে সিনিয়রিটি এবং অবদানের কোনো তোয়াক্কা না করে তাকে প্রস্তাব দেওয়া হয়।
সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায় সঙ্গে সঙ্গেই জানিয়ে দেন এ প্রস্তাব তিনি প্রত্যাখ্যান করছেন। কেন্দ্রীয় সরকারের ওই প্রতিনিধিকে তিনি বলেছিলেন ,‘মেরা দিল নাহি চাহতা হায়। আর একটা কথা জেনে রাখুন, আমার শ্রোতারাই আমার পুরস্কার। এরা কী মনে করে বলুন তো আমার নব্বই বছরে এসে এভাবে অপমান করবে? শেষ মুহূর্তে এসে এভাবে প্রস্তাব দিচ্ছে পদ্মশ্রী পুরস্কারের। তা ছাড়া আমি ভারতবর্ষে সে বিরল গায়কদের একজন যে অসংখ্য বাণিজ্যিক ছবির গান শুধু গাইনি, অনেক ক্লাসিক্যাল রেকর্ডও করেছি।’
অনেক অনুরোধেও কোনো কাজ হয়নি। শেষ পর্য়ন্ত সন্ধ্যার কাছে ‘পদ্মশ্রী’ প্রত্যাখ্যাতই রইল।
এমএমএ/
