হেনস্তার শিকার দুই শিক্ষিকা, ক্ষোভ ঝাড়লেন চিত্রনায়িকা পরীমনি
হেনস্তার শিকার দুই শিক্ষিকা, ক্ষোভ ঝাড়লেন নায়কা পরীমণি। ছবি: সংগৃহীত
কোটা সংস্কার আন্দোলনের বেশ কিছু স্থিরচিত্র, ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি করেছে। যে সকল ভিডিওর অধিকাংশই সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ তৈরি করেছে।
সম্প্রতি চিত্রনায়িকা পরীমণির ফেসবুক অ্যাকাউন্টেও তেমনই একটি ভিডিওর দেখা মিলল। বুধবার সকালে এই নায়িকা তার ফেসবুক প্রোফাইলে একটি ভিডিও শেয়ার করেছেন। যে ভিডিওর ক্যাপশনে নিজের ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন তিনি।
ভিডিওতে দেখা যায়, একজন শিক্ষিকা কয়েকজন হামলাকারী ও এক পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে তর্ক করছেন। এ সময় তিনি হামলাকারীদের উদ্দেশে প্রশ্ন করেন, আপনারা মারেন নাই? এরা আমার ছাত্র। আপনারা গুলি চালান নাই?
এরপর ওই হামলাকারীদের মাঝে কেউ সেই শিক্ষিকাকে ‘রাজাকার’ বলে মন্তব্য করেন। যেটা শুনে তিনি আরও ক্ষিপ্ত হন। পাল্টা জবাবে, ‘রাজাকার’ বলতে নিষেধ করেন।
এসময় হামলাকারীরা সেই শিক্ষিকার ওপর আরও বেশি চড়াও হওয়ার চেষ্টা করেন। তবে পুলিশ কর্মকর্তা শিক্ষিকাকে সেই স্থান থেকে সরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করেন। একপর্যায়ে হামলাকারীরা ওই নারী শিক্ষিকাকে হেনস্তা করেন।
২ মিনিট ২৮ সেকেন্ডের সেই ভিডিও নিজের ফেসবুকে শেয়ার করে হামলকারীদের প্রতি ঘৃণা প্রকাশ করেছেন পরীমণি। তিনি লিখেছেন, ছি ছি ছি । থুথু এদের মুখের উপর। শকুনের মতন চারপাশ থেকে কিভাবে একজন মহিলার উপর সবার সামনে ঝাপায়ে পরতেছে! তাও একজন শিক্ষক এর উপর!
এসব ঘটনা আর নিতে পারছেন না পরীমণি। সেটা উল্লেখ করে এই নায়িকা বলেন, ‘কত চুপ থাকা যায় আর সরি। চিৎকার করে কান্না আসতেছে……আল্লাহ তুমি ধ্বংস করে দাও পৃথিবী!’
এর আগেও কোটা সংস্কার আন্দোলনে হামলার ঘটনায় প্রতিবাদ জানিয়েছিলে পরীমণি। সেবার এই অভিনেত্রী ফেসবুকে এক শিক্ষার্থীর ওপর হামলার ছবি প্রকাশ করে লিখেছিলেন, নারীর প্রতি সহিংসতায় আপনার জবান বন্ধ থাকলে আপনি মুনাফিক।
আরেকটি ঘটনায়, সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি মার্চ ফর জাস্টিস পালনকালে পুলিশের হাতে আটক হওয়া শিক্ষার্থীকে ছাড়াতে গিয়ে আহত হয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিন মোনামী। এ সময় তার সঙ্গে থাকা অপর শিক্ষক নুসরাত জাহান চৌধুরীও হেনস্তার শিকার হন। এর প্রতিবাদে তীব্র নিন্দা জানিয়েছে বিভাগের শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (৩১ জুলাই) দুপুরে কার্জন হল এলাকায় দোয়েল চত্বর ও হাইকোর্টের মাঝামাঝি জায়গায় পুলিশ এক ছাত্রকে ধরে নিয়ে যাওয়ার সময় এক পুলিশ সদস্য শারীরিক শক্তি প্রয়োগ করেন এবং ওই নারী শিক্ষককে ধাক্কা দিয়ে সড়কে ফেলে দেন।
এতে ওই শিক্ষক হাতে, হাঁটুতে এবং পায়ে আঘাত পান। ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে পুলিশ ওই শিক্ষার্থীকে আটক করে নিয়ে যান। পরে বিকেল সাড়ে ৩টায় এক বিবৃতিতে শিক্ষার্থীরা এই ঘটনায় নিন্দা জানিয়েছেন। এ সময় হামলায় জড়িত প্রত্যেক পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্তের পর দণ্ডবিধি অনুযায়ী সর্বোচ্চ শাস্তি এবং বাংলাদেশ পুলিশকে এই আক্রমণের জন্য দাপ্তরিকভাবে ক্ষমা চাওয়ার দাবি জানান।
বিবৃতিতে বলা হয়, আমরা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সব শিক্ষার্থী আমাদের বিভাগের শিক্ষক শেহরীন আমিন মোনামী ও নুসরাত জাহান চৌধুরীর ওপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশি হামলার ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ প্রশাসনের প্রতি তীব্র ঘৃণা জানাচ্ছি।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বিবৃতিতে বলা হয়, আজ (৩১ জুলাই), বেলা সাড়ে ১১টা নাগাদ বিনা কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে পুলিশ এক ছাত্রকে হেনস্তা করতে থাকে এবং তাতে আমাদের শিক্ষকরা বাধা প্রদান করলে পুলিশ আমাদের দুই শিক্ষকের ওপর চড়াও হয়। তাদের অকথ্য গালিগালাজ ও শারীরিকভাবে আঘাত করা হয়। এতে আমাদের শিক্ষক শেহরীন আমিন মোনামী আহত হন। আমরা মনে করি এই ঘটনা স্বাধীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমূলে আঘাত করেছে। আমরা আরও মনে করি, বিভাগীয় প্রশাসন, সিন্ডিকেট কমিটি এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এই ঘটনায় দায় এড়াতে পারে না।