প্রথম সিনেমাতেই প্রথম পুরস্কার পেলেন সারা
ছবি: সংগ্রহ
দেশীয় চলচ্চিত্রের উন্নয়ন এবং মানসম্পন্ন চলচ্চিত্র নির্মাণ ও প্রদর্শনীর গুরুত্ব অনুধাবন করে শিল্পকলা একাডেমি তৃতীয়বারের মতো আয়োজন করেছিল বাংলাদেশ স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসব ২০২১। তাতে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হয়েছে সারা বিনতে আফজল নির্মিত ‘আশ্রয়’। এটি সারার প্রথম চলচ্চিত্র। আর প্রথম চলচ্চিত্রেই প্রথম পুরস্কার পেয়েছেন তরুণ নির্মাতা সারা।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টেলিভিশন, ফিল্ম এন্ড ফটোগ্রাফি বিভাগ থেকে স্নাতক ডিগ্রী সমাপ্তির জন্য ‘আশ্রয়’ নির্মাণ করেছিলেন সারা। বিভাগের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকে শিক্ষাসমাপনী হিসেবে নির্মাণ করতে হয় কাহিনিচিত্র বা প্রামাণ্যচিত্র। সে জায়গা থেকেই সারা নির্মাণ করেছিলেন ‘আশ্রয়’। আর সেই সিনেমাই পেয়েছে বিচারকদের সেরার পুরস্কার। পুরস্কার হিসেবে তিনি পেয়েছেন ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ক্রেস্ট ও সনদপত্র।
সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহর ছোটগল্প ‘খুনী’ অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ‘আশ্রয়’। এ গল্পের কেন্দ্রে আছে একটি মৃত্যু, তারপর জীবনের জন্য এক নির্মম আর্তি। ২০ মিনিটের চলচ্চিত্রে সেই আর্তিকে নান্দনিকভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন সারা বিনতে আফজল। এ ছবির চিত্রনাট্য লিখেছেন নাজমুন নাফিস খান। চিত্রগ্রাহক ছিলেন এস কে শুভ। প্রযোজক এম এ আফজল ও সারা বিনতে আফজল।
ঢাকাপ্রকাশকে সারা বলেন, শুরু থেকেই আমার ইচ্ছা ছিল যতটা সম্ভব নিজের সর্বোচ্চটা এই কাজে দেয়ার। প্রায় ছয় মাসের মতো সময় আমি এবং আমার টিম দিয়েছিলাম এই কাজে। টিমমেটরা ছিল আমার বিভাগেরই অনুজ এবং অগ্রজ। সবার সম্মিলিত শ্রমেই নির্মিত হয়েছিল ‘আশ্রয়’।
আলাপচারিতায় সারা জানান, ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে সিনেমাটি ভাইভা বোর্ডে দেখানো হয়। তখন শিক্ষকেরা বেশ প্রশংসা করেছিলেন। পাশাপাশি উৎসাহ দিয়ে বলেছিলেন, যেন বিভিন্ন চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি জমা দেই। অনেকটা কৌতুহলের বশেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে সিনেমাটি সাবমিট করার পর সিলেক্টেড হয় প্রদর্শনীর জন্য। তারপর এই বছরে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত তৃতীয় বাংলাদেশ স্বল্পদৈর্ঘ্য ও প্রামাণ্য চলচ্চিত্র উৎসবে ‘আশ্রয়’ নির্বাচিত হয় উৎসবের শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনী চলচ্চিত্র।
অনুভূতি প্রকাশ করে সারা বলেন, পুরস্কার পাব এই ইচ্ছা নিয়ে কখনোই কোথাও সিনেমা সাবমিট করতাম না। বরং দশটা মানুষ আমার সিনেমা দেখুক এই ইচ্ছা থেকেই দেয়া। তবুও বলব যেকোন প্রাপ্তিই অনেক উৎসাহ জোগায়, অনুপ্রেরণা জোগায়। এই পুরস্কার আমার সামনের দিনগুলোতে বেশি বেশি কাজ করে যাওয়ার তাগিদ দেবে, অনুপ্রেরণা দেবে।
সম্প্রতি শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা মিলনায়তনে উৎসবের পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর, চলচ্চিত্রকার সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, নির্মাতা সাজ্জাদ জহির, জাহিদুর রহিম অঞ্জন প্রমুখ। সভাপতিত্ব করেছেন বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী, স্বাগত বক্তব্য দেন একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক আফসানা করিম।
সারা দেশের চলচ্চিত্র নির্মাতাদের কাছ থেকে প্রায় ৪০০টি চলচ্চিত্র থেকে উৎসব উপলক্ষে গঠিত পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট বাছাই কমিটি ১১৯টি চলচ্চিত্র (৮১টি কাহিনি চলচ্চিত্র ও ৩৮টি প্রামাণ্য চলচ্চিত্র) উৎসবে প্রদর্শনীর জন্য বাছাই করেন। উৎসবের চলচ্চিত্র সিলেকশন কমিটিতে ছিলেন চলচ্চিত্র গবেষক অনুপম হায়াৎ, নির্মাতা সাজ্জাদ জহির, চিত্রগ্রাহক রাকিবুল হাসান, চলচ্চিত্র সমালোচক ও চিত্রনাট্যকার সাদিয়া খালিদ এবং শিল্পকলা একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের সহকারী পরিচালক চাকলাদার মোস্তাফা আল মাস্উদ।
নির্মাতা সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকীকে চেয়ারম্যান করে পাঁচ সদস্যবিশিষ্ট একটি জুরি কমিটি চলচ্চিত্রগুলোর ভেতর থেকে পুরস্কারের জন্য চূড়ান্ত করেছেন। কমিটির অন্যান্য সদস্য হলেন চলচ্চিত্র নির্মাতা ও গবেষক ফরিদুর রহমান, জাহিদুর রহমান অঞ্জন, অমিভাত রেজা চৌধুরী এবং কমিটির সদস্যসচিব একাডেমির নাট্যকলা ও চলচ্চিত্র বিভাগের পরিচালক আফসানা করিম।