জুলাইয়ের গণহত্যার মাঝেও আওয়ামী সরকারকে মদদ দিচ্ছিলো কিছু তারকা
ছবি: ঢাকাপ্রকাশ গ্রাফিক্স
ছাত্র-জনতার দেশকাঁপানো অভ্যুত্থানের মুখে গত ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন শেখ হাসিনা। আর তারপরই স্বৈরাচার মুক্ত নতুন এক নতুন বাংলাদেশের সূচনা হয়। কিন্তু আগস্টের এই সাফল্য এমনেই অর্জিত হয়নি, জুলাই জুড়ে ছাত্রজনতার বুকের রক্তের মাধ্যমে তা সফলতা পেয়েছে। স্বৈরাচার সরকারকে রুখে দিতে শেষমেষ শিক্ষার্থীদের সাথে আন্দোলনে যোগ দেয় সকল শ্রেনী পেশার মানুষরাও।
জুলাই জুড়ে চলা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনকে রুখে দিতে যখন নির্বিচারে গণহত্যা চালানো হয়, তখনও গোপনে সরকারকে এই নৃশংস হত্যাকান্ডে মদদ দিয়েছিলো বিনোদন জগতের কিছু তারকা। গোপনে চলা তাদের কিছু কথপোকথোনের স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হওয়ার পর ব্যপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে।
আলো আসবে নামে সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে কি কথপোকথোন হয়েছিলো প্রতিবেদনে তা তুলে ধরা হলো:
‘প্রিয় বন্ধুগণ, সালাম ও কৃতজ্ঞতা। আপনাদের আজকের পারফরম্যান্স ও গ্রুপের কথা পড়ে শোকের মাসে জানাই অভিনন্দন। সেইসঙ্গে কিছু কথা- ১. আমি বিশ্বাস করি বঙ্গবন্ধু কন্যার হাত ধরে আলো আসবেই। ২. সময়টা আমাদের প্রতিকূলে। ৩. আমাদের যুদ্ধটা দীর্ঘ হবে এবার, তাই শক্তি ও মনোবল ধরে রাখতে হবে। ৪. এই সময়ে কাউকে আঘাত করে কিছু বলা যাবে না। ৫. যে কোনো মূল্যে এ আন্দোলন দ্রুত থামাতে হবে। ৬. সোশ্যাল মিডিয়ায় একে অন্যকে সাপোর্ট দিতে হবে। ৭. একজনের যেকোনো বিপদে সবাইকে একসঙ্গে ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে। ৮. সবাই মিলে এক আত্মা এক প্রাণ হতে হবে। তাহলেই আমরা এই তুফান পাড়ি দিতে পারব। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন, জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।’
গত ২ আগস্ট রাত ১ টা ৩০ মিনিটে ‘আলো আসবেই’ নামক শোবিজ অঙ্গনের আওয়ামীপন্থি শিল্পী ও সাংবাদিকদের নিয়ে তৈরি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে এভাবেই একটি মেসেজ লেখেন ঢাকাই সিনেমার চিত্রনায়ক রিয়াজ।
ঠিক তার একদিন পরই ওই গ্রুপে আরও একটি বার্তা নিয়ে হাজির হন এই নায়ক। এবার ৩ আগস্ট সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় রিয়াজ লেখেন, বিএনপি-জামাত আর রাজাকার পুত্ররা আহ্বান জানাচ্ছে, দেশ বাঁচাতে এগিয়ে আসতে। কোন দেশ সেটা আর বুঝতে বাকি নেই। তাদের বাবারাও ৭১ সালে দেশ বাঁচানোর ডাক দিয়েছিল। তবে সেটা বাংলাদেশ না, পাকিস্তান। আজ ৭১ মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে ২৪ দিয়ে। আগস্ট মুছে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে জুলাই দিয়ে, গুজব ছড়িয়ে রায়েরবাজার বধ্যভূমিকে ৭১-এর বদলে ২৪ এর বধ্যভূমি বানানোর চেষ্টা চলছে।
এরপর রিয়াজ আরও লেখেন, সরকার বিরোধী সব অপশক্তি যেখানে নানাভাবে সক্রিয় তখনও অনেকেই এটাকে শুধুমাত্র নিরপেক্ষ ছাত্র আন্দোলন ভাবতেই পারে, সেটা তাদের স্বাধীনতা। কিন্তু আন্দোলন প্যাটার্ন এবং ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড প্রমাণ করে ছাত্রদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে জাতির পতাকা আজ খামচে ধরেছে সেই পুরাতন শকুনেরা।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে আওয়ামী লীগ সমর্থক হিসেবে পরিচিত শিল্পী ও সাংবাদিকদের নিয়ে তৈরি গঠিত সেই গ্রুপে জুলাই থেকে আগস্ট পর্যন্ত এমন বেশ কিছু মেসেজ দিতে দেখা গেছে রিয়াজকে।
অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস যেন রিয়াজকে আরও একধাপ ছাড়িয়ে গেছেন। কখনো শিক্ষার্থীদের গায়ে গরম জল ঢেলে দিতে বলেছেন। আবার কখনো আন্দোলনের পক্ষে যারা প্রোফাইল লাল করেছিলেন তাদের চিনে রাখা এবং পরবর্তী সময়ে ‘সাইজ করার’ হুমকিও দিয়েছেন।
এখানেই থামেননি তিনি। নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে ‘হারামজাদা’, বিভিন্ন ব্যক্তিকে ‘রাজাকার’ তকমা দেওয়া, আবার শিল্পীদের স্ট্যাটাস-কর্মকাণ্ডে তুলে ধরে তাদেরকে চিহ্নিত করে রাখতে বলেছেন এই অভিনেত্রী।
এর মধ্যে ছাত্রদের পক্ষ নেওয়ায় একজন সংগীতশিল্পীকে উদ্দেশ্য করে অরুণা বিশ্বাসের একটি মেসেজ ছিল,‘বয়স যদি কম থাকত পিটাইতে পিটাইতে বাবা ডাক শিখাইতাম।’
আওয়ামীপন্থি তারকা হিসেবে পরিচিত অভিনেত্রী জোতিকা জ্যোতি। ‘আলো আসবেই’ নামক সেই গ্রুপে তার উপস্থিতিও ছিল চোখে পড়ার মতো। শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে যেসব তারকা রাজপথে ছিলেন তাদেরকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য করতে দেখা যায় এই অভিনেত্রীকে।
যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকে নিয়ে তার একটি বিতর্কিত মন্তব্য। যেখানে এই নির্মাতাকে সরাসরি গালি দিতে দেখা যায় এই শিল্পীকে।
আন্দোলনের পক্ষ নিয়ে ফারুকীর একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস তুলে ধরে সেই গ্রুপে জ্যোতি লেখেন, ‘কোন লেভেলের দেশদ্রোহী হলে এমন উসকানিমূলক কথা লেখা যায়। ওকে বা**র্ড ছাড়া আর কিছু বলা যায় না। পুরো জঙ্গি স্টাইলে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছে। মিডিয়ার লাল গ্রুপের পুরো নেতৃত্ব দিচ্ছে সে। যেমন মিডিয়াটা নোংরা করছে, এখন দেশের দিকে ওর নজর পড়ছে।’
এছাড়াও জুলাই থেকে আগস্ট মাসে ওই গ্রুপের বিভিন্ন মেসেজে শিক্ষার্থীদের পক্ষ নেওয়া তারকাদের চিহ্নিত করে তাদেরকে ‘সাইজ’ করার আহ্বান জানান এই অভিনেত্রী।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সরব ছিলেন ঊর্মিলা-রোকেয়া প্রাচী-সোহানা সাবা
ছাত্র আন্দোলনের শুরু থেকেই সামাজিক মাধ্যমে সরব ছিলেন অভিনেত্রী ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর ও রোকেয়া প্রাচী। সরকারের পক্ষ নিয়ে শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বিভিন্ন বার্তা প্রচারের চেষ্টা করেছেন তারা দু’জন। ‘আলো আসবেই’ গ্রুপেও দেখা মিলেছে তাদের সেই কর্মকাণ্ডের চিত্র।
এর মধ্যে ঊর্মিলা প্রতিদিনই কোথায় কোন তারকা শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছেন, সেসব চিত্র ওই গ্রুপে তুলে ধরতেন। রোকেয়া প্রাচী কখনো ভিডিওবার্তা নিয়ে হাজির হতেন, আবার কখনো রাজপথে সরকারের হয় আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে নেমে আসার আহ্বান জানাতেন।
সোহানা সাবাকেও একের পর এক স্ক্রিনশট শেয়ার করতে দেখা গেছে সেই গ্রুপে। এর মধ্যে ছাত্রদের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সহশিল্পীদের নিয়েও বিভিন্ন মন্তব্য করেছেন এই অভিনেত্রী।
শিল্পীদের মাঠে নামানোর কার্যক্রমে সরব ছিলেন সাজু খাদেম-ফেরদৌস-তানভীন সুইটি ও শামিমা তুষ্টি
জুলাইয়ের শেষদিকে রাজপথে শিক্ষার্থীদের পক্ষে যখন একদল শিল্পীরা মাঠে নেমে আসে, তখন আওয়ামীপন্থি ওই গ্রুপের তারকারাও সরব হয়ে ওঠেন। নিজেদের মধ্যে বিভিন্ন মানববন্ধন ও সমাবেশের ডাক দেন তারা।
অভিনেতা সাজু খাদেমের সমন্বয়ে বিভিন্ন পরিকল্পনা তৈরি করা হয়। কবে, কখন তারকারা কোথায় হাজির হবেন সেসব আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করে নেওয়া হতো ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে।
ঢাকা-১০ আসনের এমপি ও চিত্রনায়ক ফেরদৌসের নেতৃত্বে আগস্টের শুরুতেই রাজপথে নেমে আসেন আওয়ামীপন্থি ওই শিল্পীরা। গ্রুপেই তাদেরকে আন্দোলনে যোগ দিতে বিভিন্ন নির্দেশনা ও চাপ প্রয়োগ করতে দেখা যায় এই নায়ককে।
এছাড়া আন্দোলনে কারা অংশ নিচ্ছেন, এসব তথ্য নিয়মিত সেই গ্রুপে শেয়ার করতেন অভিনেত্রী তানভীন সুইটি ও শামিমা তুষ্টি। এছাড়াও যারা শিক্ষার্থীদের পক্ষ নিয়ে কথা বলছিলেন, তাদেরও কড়া সমালোচনায় মেতে উঠতে দেখা গেছে এই দুই শিল্পীকে।
দেশের নন্দিত অভিনেত্রী সুবর্ণা মোস্তফা ও বদরুল আলম সৌদকেও সক্রিয়া দেখা গেছে ‘আলো আসবেই’ সেই গ্রুপে। এর মধ্যে গত ১ আগস্ট একটি মেসেজে সুবর্ণা মোস্তফাকে লিখতে দেখা যায়, ‘আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ফেসবুক ব্যবহার করব না। যতদিন না এটা গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে।’
শিক্ষার্থীদের ওপর নির্যাতন ও সহিংসতার ভিডিও নিয়ে যখন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম উত্তাল তখনই ফেসবুককে ব্যঙ্গ করে এমন মন্তব্য করতে দেখা যায় এই তারকাকে।
একইদিনে সুবর্ণা মোস্তফার স্বামী নির্মাতা বদরুল আলম সৌদকে একটি মেসেজে লিখতে দেখা যায়, আজ ছাত্রদের স্লোগানে ইনকিলাব জিন্দাবাদ শুনতে হলো। এটা পাইক্কাদের স্লোগান। এখানে আসলো কি করে?
আন্দোলনের পক্ষে ‘এক দফা’ শীর্ষক ছবি কাভারে পোস্ট করেছিলেন তরুণ অভিনেত্রী নাজিফা তুষি। সেই পোস্টের স্ক্রিনশট ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে দিয়ে তাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
জুলাইয়ে দেশে যখন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন শুরু হয়, তখন ‘আলো আসবেই’ গ্রুপের এই শিল্পীরা শিক্ষার্থীদের পক্ষে কথা না বলে উল্টো বিটিভি প্রাঙ্গণে গিয়ে টেলিভিশনটির ক্ষয়ক্ষতি নিয়ে ভেঙে পড়তে দেখা যায়। এসময় তারা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে কথা বলেন একইসঙ্গে শাস্তিও দাবি করেন।
বিটিভি প্রাঙ্গণে গিয়ে সেসময় কান্না-আহাজারিতে ভেঙে পড়া সেই শিল্পীদের ধিক্কার জানান ছোট পর্দার বর্তমান সময়ের অভিনেত্রী সাদিয়া আয়মান। যে কারণে ‘আলো আসবেই’ গ্রুপে তাকে নিয়েও আলোচনা হয়।
সাদিয়া আয়মানকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্য, মাথা ঠিক ছিল না মিলনের!
যেখানে সাদিয়ার পরিচয় জানতে চান অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস। জবাবে অভিনেত্রী মিলন ভট্টাচার্য বলেন, ‘এই সময়ের তথাকথিত জনপ্রিয় অভিনেত্রী।’
প্রায় মাসখানেক বাদে সম্প্রতি অভিনয়শিল্পীদের সেই আলাপচারিতার স্ক্রিনশট ফাঁস হলে মিলন ভট্টাচার্যের উদ্দেশে সাদিয়া আয়মান বলেছেন, আপনাকে ধন্যবাদ মিলন দাদা, মানুষের মতো দেখতে, শিল্পী নামে শয়তান বেশধারীদের কাছে আমার মতো ‘এই সময়ের তথাকথিত জনপ্রিয় অভিনেত্রী’কে চিনিয়েছেন। যে ভুলকে ভুল বলতে জানে, সত্যকে সত্য বলতে জানে। গ্রুপের নাম দিয়েছেন ‘আলো আসবেই’ তা বেশ ভালো। তবে আপনারা জানেন, আপনাদের নিজেদের জীবনে, মস্তিষ্কে সত্যিকারের আলোর যে ভীষণ প্রয়োজন?
অনেকেই গ্রুপে থেকেছেন তবে রাজপথে নামেননি
চিত্রনায়ক সায়মান সাদিক, অভিনেত্রী শাহনুর, আশনা হাবিব ভাবনাসহ আরও বেশ কিছু তারকা সেই গ্রুপে যুক্ত ছিলেন। যারা ফেরদৌস-রিয়াজদের নির্দেশনা মোতাবেক রাজপথে নামতে পারেননি, তবে আন্দোলনের পক্ষ আছেন বলে জানিয়েছেন।
এর মধ্যে ১ আগস্ট যখন ফেরদৌস শিল্পীদের রাজপথে নেমে আসার আহ্বান জানান, তখন চিত্রনায়িকা শাহনুরকে বলতে দেখা যায়- ‘আমরা যশোর আছি। তাই ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও যেতে পারছি না। কষ্ট লাগছে। আমি আপনাদের সাথে আছি সবসময়।’
একইসময়ে চিত্রনায়ক সায়মন সাদিক ও অভিনেত্রী ভাবনাকেও একই রিপ্লাই দিতে দেখা যায়। এর মধ্যে ভাবনা জানান, আমরা একসঙ্গে কিশোরগঞ্জে থাকায় আসতে পারছি না। তবে মনটা পড়ে আছে। জয় বাংলা’
কারা ছিলেন সেই গ্রুপে
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে লড়াই চালানোর লক্ষ্যে তৎকালীন তথ্য প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এ আরাফাত এবং সংসদ সদস্য ফেরদৌসের নেতৃত্বে ‘আলো আসবেই’ নামের ওই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপ খোলা হয়, যেখানে আওয়ামীপন্থি শিল্পী ও সাংবাদিকেরা যুক্ত ছিলেন।
এই গ্রুপে ছিলেন- সোহানা সাবা, জ্যোতিকা জ্যোতি, অরুণা বিশ্বাস, ফেরদৌস ছাড়াও ছিলেন রিয়াজ আহমেদ, সুবর্ণা মুস্তাফা, আজিজুল হাকিম, স্বাগতা, বদরুল আনাম সৌদ, শমী কায়সার, তানভীন সুইটি, আশনা হাবীব ভাবনা, শামীমা তুষ্টি, জামশেদ শামীম, ঊর্মিলা শ্রাবন্তী কর, সাজু খাদেম, হৃদি হক, ফজলুর রহমান বাবু, দীপান্বিতা মার্টিন, সাইমন সাদিক, জায়েদ খান, লিয়াকত আলী লাকী, নূনা আফরোজ, রোকেয়া প্রাচী, রওনক হাসান, আহসানুল হক মিনু, গুলজার, এস এ হক অলীকসহ অনেকে।
‘আলো আসবেই’ নামের সেই গ্রুপের স্ক্রিনশটগুলো ফাঁস হতেই অনেক তারকাই গা ঢাকা দিয়েছেন। কেউ বা এরই মধ্যে দেশ ছেড়ে চলে গেছেন। তাদের মধ্যে অভিনেত্রী অরুণা বিশ্বাস অন্যতম। আগস্টের শেষের দিকেই এই অভিনেত্রী কানাডা চলে গেছেন।
সরকার পতনের পর একপ্রকার ‘নিখোঁজ’ চিত্রনায়ক ফেরদৌস ও রিয়াজ। তাদের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা যাচ্ছে না। নিজেদের মুঠোফোনও বন্ধ করে রেখেছেন।
ওই গ্রুপ প্রসঙ্গে অভিনেত্রী জ্যোতিকা জ্যোতি বলেছেন, আমাদের এমন একটি গ্রুপ ছিল, এটা সত্য। সেখানে আমি একটি পোস্ট দিয়েছিলাম। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মেডিকেল কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে আগুন দেওয়ার বিষয় নিয়ে লিখেছিলাম। সেখানে আগুন নিয়ন্ত্রণে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদেরও যেতে দেওয়া হচ্ছিল না। আমার কাছে বিষয়টি খারাপ লেগেছে, হাসপাতালে কীভাবে মানুষ আগুন দেয়? সেখানে তো আমার-আপনার পরিবারের সদস্যরাই জীবন বাঁচাতে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য আসে।
অভিনেত্রী আরও বলেন, আমি কিন্তু কোনো ছাত্রদের দায়ী করিনি হাসপাতালে আগুন দেওয়ার ঘটনায়। আর এ-ও বলতে চাই, হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপটিতে হয়তো আমরা অনেকে ছিলাম। কিন্তু সবার মনমানসিকতা এক না। শিক্ষার্থীদের ওপর গরম পানি ঢেলে দেওয়ার যে বিষয়টি উঠে এসেছে, তা কারও প্রত্যাশার নয়।
আলোচিত সেই হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত থাকতে দেখা গেছে অভিনেতা ফজলুর রহমান বাবুকে। স্ক্রিনশটগুলো প্রকাশ্যে আসার পর এই অভিনেতা দাবি করেছেন, ‘একটা গ্রুপের অ্যাডমিনের কাছে ফোন নম্বর থাকলেই তিনি সেই গ্রুপে যাকে খুশি যতজন খুশি অ্যাড করতে পারেন। অনেক গ্রুপ আছে সেখান থেকে চাইলেও কেউ বের হতে পারে না। যদি এডমিন তাকে ডিলিট না করে। আলো আসবেই গ্রুপে আমি কখনো প্রবেশ করিনি বা কে কি লিখছে আমি যদি ওখানে না দেখি আমি কি করে জানবো ওখানে কি লিখছে। ঢালাওভাবে কাউকে দোষারোপ করা বা সমালোচনা করা ঠিক না।’
এছাড়া অভিনেতা মিলন ভট্টাচার্য দাবি করেছেন, দেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির প্রভাবের কারণে ওই গ্রুপে কি বলেছেন নিজেও বুঝতে পারছেন না। সেই গ্রুপে নিজের মন্তব্যের জন্য ক্ষমা চেয়ে এই অভিনেতা বলেন, দুঃখিত, সে সময়ে দেশের অস্থির পরিস্থিতির জন্য। কি যে কথা বলেছি, সত্যিই বলছি- ‘মাথা ঠিক ছিল না’।