কত্থক নাচের কিংবদন্তী পণ্ডিত বিরজু মহারাজ আর নেই
হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ৮৩ বছর বয়সে না ফেরার দেশে চলে গেলেন কত্থক নাচের সাধক পণ্ডিত বিরজু মহারাজ। পরিবারের পক্ষ থেকে সংবাদ সংস্থা এএনআইকে তার মৃত্যুর সংবাদ নিশ্চিত করা হয়েছে।
পরিবারের তরফে জানানো হয়েছে, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যু হয়েছে বিরজু মহারাজের। গতকাল রোববার (১৬ জানুয়ারি) রাতে দিল্লির বাড়িতে নাতির সঙ্গে খেলছিলেন তিনি। হঠাৎ করেই হৃদরোগে আক্রান্ত হন। দ্রুত দিল্লির সাকেত হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাকে মৃত ঘোষণা করেন ডাক্তাররা। বেশ কিছুদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন পণ্ডিত বিরজু মহারাজ। ডায়ালিসিস চলছিল।
একাধারে নাচ, তবলা এবং কণ্ঠসঙ্গীতে সমান পারদর্শী ছিলেন বিরজু। ছবিও আঁকতেন কত্থকের সেই ‘মহারাজা’। তার চলে যাওয়ার মধ্য দিয়ে পতন হলো এক নক্ষত্রের, এক ঐতিহাসিক অভিযাত্রার। রবিশঙ্কর তার নাচ দেখে বলেছিলেন, ‘তুমি তো লয়ের পুতুল!’
শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের একাধিক ধারার সঙ্গে যেমন যুক্ত ছিলেন, তেমনই বহু ছবিতে কোরিওগ্রাফারের কাজও করেছেন। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সত্তর দশকের মাঝামাঝি সত্যজিৎ রায়ের ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’র কোরিওগ্রাফি। ছবিতে দুটো গানের কোরিওগ্রাফি করেছেন।
কালকা-বিনন্দাদিন ঘরাণার শিল্পী ছিলেন বিরজু মহারাজ। তাঁর জন্ম ১৯৩৭ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারি লখনউয়ের এক নামী কত্থক নৃত্যশিল্পীদের পরিবারে। জন্মসূত্রে তাঁর নাম ছিল ব্রিজমোহন নাথ মিশ্র, ছোট থেকেই নাচ-গানের পরিবেশে বেড়ে ওঠা তাঁর। বিরজু মহারাজের গুরু ছিলেন তাঁর পিতা অচ্ছন মহারাজ। খুব ছোট বয়সেই বাবার কাছে কত্থক নাচের তালিম শুরু তাঁর। এর পাশাপাশি কাকা শম্ভু মহারাজ এবং লাচ্চু মহারাজ বরাবর অনুপ্রাণিত করেছিলেন বিরজু মহারাজকে।
শিশুশিল্পী হিসাবেই বাবার সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করে নিতেন তিনি। কৈশোরে পা দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ‘গুরু’ তকমা জুড়ে গিয়েছিল তাঁর নামের আগে। রামপুরের নবাবের দরবারে নৃত্য পরিবেশন করতে বিরজু মহারাজ। মাত্র ২৮ বছর বয়সে সংগীত নাটক অ্যাকাডেমি পুরস্কার জেতেন বিরজু মহারাজ। নাচই ছিল তাঁর প্রথম ভালোবাসা তবে শাস্ত্রীয় সংগীতের উপরও চমত্কার দখল ছিল পণ্ডিতজির।
১৯৮৩ সালে ভারত সরকারে পক্ষ থেকে পদ্মবিভূষণ পান বিরজু মহারাজ। পেয়েছেন কালীদাস সম্মানও। এই কত্থক গুরু বেশ কিছু ছবিতে কোরিওগ্রাফির দায়িত্বভার সামলেছেন। কাজ করেছেন সত্যজিৎ রায়ে ‘শতরঞ্জ কি খিলাড়ি’ ছবিতে। নতুন শতাব্দীতে ‘দেবদাস’, ‘বাজিরাও মস্তানি’-র মতো ছবিতে বিরজু মহারাজের কোরিওগ্রাফি মুগ্ধ করেছে অপামর ভারতীয়কে। ‘বিশ্বরূপম’ ছবিতে কোরিওগ্রাফির জন্য চলচ্চিত্রে জাতীয় পুরস্কার পেয়েছিলেন বিরজু মহারাজ।
পণ্ডিত বিরজু মহারাজ একজন দক্ষ গল্পকার। তাঁর অভিব্যক্তি থেকে চোখ ফেরানো ছিল দায়। জীবনের ঘটনার সঙ্গে তিনি মিশিয়ে দিতেন নাচ। এইভাবেই কত্থক নৃত্যে এক অন্য মাত্রা যোগ করেছিলেন তিনি, সেখানেই অনন্য বিরজু মহারাজ।
এসএ/