‘ই.টি’র ৪০, আল্টা এইচডি ভার্সনে, স্পিলবার্গের ৪৫ মিনিট ফ্রি
সায়েন্স ফিকশন চমৎকারিত্বের মাধ্যমে বিশ্ব সিনেমার ইতিহাসটিই বদলে দেওয়া ছবিটির নাম হলো ‘ই.টি.’। যারা তেমন কোনো ছবিই দেখেননি, থাকেন দুনিয়ার বিভিন্ন দেশে, তারাও জানেন ই.টি.র নাম। তাদের জানা নেই, ছবিটির পুরো মানে হলো ‘দি এক্সট্রা টেরেস্ট্রিয়াল’। মানে হলো ‘অতি মানবটি’। বিশ্ব ইতিহাসের সর্বকালের সবচেয়ে সফল বাণিজ্যিক সিনেমা পরিচালক, হলিউডের জীবন্ত কিংবন্তী স্টিফেন স্পিলবার্গ তার পড়ন্ত বেলায় এসে এই বছর ছবিটির ৪০ বছর উদযাপন করছেন। তিনি এই দুনিয়াকে চমকে দেওয়া সিনেমাটির প্রযোজক ও পরিচালক। লিখেছেন মেলিসা ম্যাথিসন।
স্পিলবার্গকে তো সবাই চেনেন, এবার বরং চিত্রনাট্যকার মেলিসার গল্প। পুরো নাম মেলিসা মেরি ম্যাথিসন। এখন আর নেই তিনি। জন্মেছেন ১৯৫০ সালের ৩ জুন মারা গিয়েছেন ২০১৫ সালের নভেম্বরের ৪। মোটে ৬৫ বছর বয়সে মারা যাওয়া এই বিখ্যাত চিত্রনাট্যকার বিশ্বখ্যাত তারকা নায়ক হ্যারিসন ফোর্ডের স্ত্রী। তিনি চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনে চিত্রনাট্য লিখতেন। একজন সক্রিয় কর্মী ছিলেন তিব্বতের মানুষদের স্বাধীনতা আন্দোলনের।
মেলিসা ম্যাথিসনের সবচেয়ে নামকরা এই ছবির বাইরে কাহিনী আছে, তিন বছর আগের কাহিনী ‘দি ব্ল্যাক স্টালিয়ন’।
মেলিসা মেরি ম্যাথিসন লাভ করেছেন ‘দি স্যাটার্ন অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট রাইটিং’।
ই.টি. হলো একটি শিশুর গল্প যে শিশুটি স্টিফেন স্পিলবার্গ নিজেই। তিনি তার বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ হয়ে যাওয়ার পর এই বন্ধুকে কল্পনা করে নিজের জীবনে ঠাঁই দিয়েছিলেন। তিনি তার ভুবনটি তৈরি করতে পেরেছেন।
মেলিসা ও স্পিলবার্গের দেখা হলো ১৯৮০ সালে। এরপর তাকে গল্পটি বললেন। মেলিসা মাস দুয়েকের মধ্যে লিখলেন ‘ই.টি. অ্যান্ড মি’। প্রথম খসড়া চিত্রনাট্য। এরপর আরো দুবার বানাতে হলো। কলম্বিয়া পিকচার্স বাতিল করে দিলো প্রকল্পটি। তারা বাণিজ্যিক সাফল্য নিয়ে আশাবাদী হতে পারলেন না। ১ মিলিয়ন ডলার খরচ করতে রাজি হলো ‘ইউনির্ভাসাল পিকচার্স’ কেবল চিত্রনাট্যের জন্য। ১০.৫ মিলিয়ন মাকিন ডলারে তারা এই ছবিটির চিত্রনাট্যের স্বত্ন কিনে নিলেন। ই.টি. বানানো হলো স্পিলবার্গের টাকায় ১৯৮১’র সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বরে শুটিং করে। হাতের কাছে তাকে সব দিলেন আগেই অস্কারজয়ী অ্যানিমেটর কার্লো রামবালদি। ই.টি.র সৌজন্যে সারা দুনিয়াতে আরো অনেক নাম করা কার্লো একজন ইতালিয়ান স্পেশাল ইফেক্ট চিত্রকর, ডিজাইনার ও বাস্তবায়নকারী। তিন-তিনটি অস্কার জয় করেছেন। ফলে তাকে পেয়ে সোনায় সোহাগা হলো স্পিলবার্গের। কেননা তার কাজ বিশ্বসেরা। তিনটি বছর আগে-১৯৭৭ সালেই কার্লো জয় করেছেন ‘দি স্পেশাল অ্যাচিভমেন্ট অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ড ফর বেস্ট ভিজ্যুয়াল ইফেক্টস'। ছবিটি হলো তার ‘কিং কং। আগের বছর বেরিয়েছে। বিশ্বখ্যাত, বিশ্বজয়ী। ১৯৮০ সালে আবার পেলেন কার্লো রামবালদি। শেষ অস্কারটি তিনি জয় করলেন ১৯৮৩ সালে। ও, প্রথমটি তার ‘এলিয়েন’ আর পরেরটি ‘ই.টি.’। তিনিই তো ই.টি.র ডিজাইনার। কান চলচ্চিত্র উৎসবে শুভ মুুক্তি দিয়ে ১৯৮২ সালের ২৬ মার্চ যাত্রা করলো তাদের ই.টি.। ১১ জুন সিনেমা হলে তাকে প্রথম মুক্তি দেওয়া হলো সে বছর মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের মাধ্যমে। টানা ১১টি বছর বিশ্বের সবচেয়ে আয় করা ছবিটির নামই হলো ই.টি.। এরপর রেকর্ডটি নিজেই ভাঙলেন স্পিলবার্গ ১৯৯৩ সালে ‘জুরাসিক পার্ক’ বানিয়ে। ই.টি.কে দুনিয়াতে মানুষ চেনে সর্বকালের সেরা ছবিগুলোর একটি। ৫৫তম অস্কারে ‘বেস্ট অরিজিনাল স্কোর’, ‘সেরা স্পেশাল ইফেক্টস’, ‘সেরা সাউন্ড’ ও ‘সেরা সাউন্ড এডিটিং’-অস্কারগুলো জয় করলো ই.টি.। পাঁচটি ‘স্যাটার্ন অ্যাওয়ার্ড’ জয় করলো, দুটি ‘গোল্ডেন গ্লোব’।
আবারও ই.টি.কে মুক্তি দেওয়া হলো ১৯৮৫ ও ২০০২ সালে স্পিলবার্গের তুখোড় বুদ্ধিতে। শেষবার দুই দশক পালন করলেন তিনি। তিনি এবার আবার শুট করলেন কিছু, ভিজ্যুয়াল ইফেক্ট পরিবর্তন করলেন এবং অতিরিক্ত দৃশ্যাবলী যোগ করলেন। ৪০ বছর এবার বলে তিনি আইএমএক্সে আবার মুক্তি দিলেন তার প্রিয় ই.টি.কে।
এর মধ্যে ১৯৯৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের ‘দি ন্যাশনাল ফিল্ম রেজিস্ট্রি’তে নাম দিল ই.টি.র। স্পিলবার্গের এই সিনেমাটি ‘দি লাইব্রেরি অব কংগ্রেস’র এই শাখায় যুক্ত হলো। তারা বললেন, সাংস্কৃতিক মেলবন্ধন, ইতিহাস ও নন্দনতত্বের বিচারে ই.টি.র উল্লেখযোগ্য অবদান আছে।
আর স্টিফেন স্পিলবার্গ তার ই.টি.র ৪০ বছর উপলক্ষ্যে এই সপ্তাহে একটি ‘আপডেট আল্টা এইচডি ভার্সন’ করেছেন। আরো আছে ‘৪৫ মিনিটের একটি বোনাস ফুটেজ’। যেখানে তার ক্লাসিকটি বানাচ্ছেন ‘স্পিলবার্গ’।
ও বলাই হলো না, ইটি কত আয় করেছে আজ পর্যন্ত জানেন? মোটে ৭৯৪.৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তারা ঘুরে বেড়িয়েছে বিশ্বের সব সিনেমা হল, বাড়ির কম্পিউটারেই। আরো ঘুরবে নিশ্চিত।
ছবি : আজকের নতুন ই.টি.।
ওএফএস।