কৌতুকাভিনেতা রাজু শ্রীবাস্তবের হার্ট অ্যাটাক হয়েছে
মোটে ৫৮ বছরের ভারতীয় জনপ্রিয় কৌতুকাভিনেতা, রাজনীতিবিদ ও রিয়ালিটি শোর অভিনেতা, বিচারক; হিন্দি ছবিতে কাজ করা রাজু শ্রীবাস্তব এখন জীবন এবং মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
হাসপাতালের চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ‘তিনি এখন সংকটপূর্ণ অবস্থায় রয়েছেন ও তার কৃত্রিমভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে।’
দেশের রাজধানী নয়াদিল্লীর অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্স (এআইআইএমএস)’র নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ)তে ভর্তি রয়েছেন শ্রীবাস্তব।
আজ বৃহস্পতিবার রাজুকে এই হাসপাতালের আইসিইউতে নিয়ে আসা হয়েছে।
গতকাল বুধবার ১০ আগস্ট একটি হার্ট অ্যাটাক বা একবার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে গিয়েছিল তার।
এরপর এই স্টান্ড-আপ কমেডিয়ানকে হাসপাতালটিতে অ্যানজিওপ্লাস্টি করতে হয়েছে। হৃদযন্ত্রের ক্ষতিগ্রন্থ রক্তনালীগুলো চিকিৎসকরা অপারেশন করেছেন। তবে এখনো তিনি সংকট কাটিয়ে উঠতে পারেননি।
তার চাচাতো বা খালাতো ভাই অশোক শ্রীবাস্তব হাসপাতাল থেকে গতকাল বিকেলে জানিয়েছেন, ব্যায়াম করার সময় এই কৌতুকাভিনেতার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া হঠাৎ বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।
অশোক আরো জানিয়েছেন, ‘তিনি তার নৈমিত্তিক ব্যায়াম করছিলেন তখন। যখন তিনি ট্রেড মলে (পায়ে চালিত স্বয়ংক্রিয় কল) ছিলেন, হঠাৎ পড়ে গেলেন। অচেতন মানুষটি হার্ট অ্যাটাকে আক্রান্ত হয়েছেন, ধারণা করে আমরা কাছের এআইআইএমএসে ভর্তি করেছি।’
অশোক শ্রীবাস্তব জানিয়েছেন, তার স্ত্রী শিখা শ্রীবাস্তব দিল্লীতে ও হাসপাতালে এসে পৌঁছেছেন।
১৯৮০’র দশকের শেষের দিক থেকে রাজু শ্রীবাস্তব বা শ্রীবাস্তব অথবা রাজু হিসেবে পরিচিত এই কৌতুকাভিনেতার বিনোদনের ভুবনে যাত্রা।
তিনি প্রতিযোগিতাতে স্বীকৃতি লাভ করেছেন, সেকেন্ড রানার-আপ হয়ে, প্রথম সেশনের স্টান্ড-আপ কমেডি শো ‘দি গ্রেট লাফার চ্যালেঞ্জ’-এ, ২০০৫ সালে। এর পরের সেরাদের অংশে তিনি ‘কিং অব কমেডি’ উপাধি জয় করেছেন।
রিমেক হিন্দি ‘বিগ বস সেশন থ্রি’তে অন্যতম প্রতিযোগী হয়ে লড়েছেন।
ভারতের হিন্দি ছবিতে নিয়মিত অভিনয় করেন এই কৌতুক শিল্পী। তার নামকরা ছবিগুলো হলো ‘ম্যানে পেয়ার কিয়া (ট্রাক পরিচ্ছন্নতাকর্মী)’, ‘বাজিগর (কলেজ ছাত্র)’, ‘বম্বে টু গোয়া (রিমেক-এই ছবিতে তিনি ভারতের বিশ্বখ্যাত সঙ্গীত পরিচালক, গানের আসরের ব্যবস্থাকারী ও গানের শিক্ষক অ্যান্টনি গনজালভসের চরিত্রটি করেছেন)’ ও ‘আমদানি আতানি খরচা রুপিয়া (বাবা চিন চিন চো)’। তার চরিত্রগুলো বড় না হলেও ভালো।
রাজু শ্রীবাস্তব এখন উত্তর প্রদেশের ‘দি ফিল্ম ডেভেলপমেন্ট করপোরেশন’র চেয়ারম্যান। এখানে বিরাট ফিল্ম সিটি হচ্ছে।
এই মানুষটির জন্ম রাজ্যের কানপুরে, ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৬৩ সালে।
একটি সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলে রাজু, বাবা ‘বলাই কাকা’ নামের কবি। ভালো নাম যার রমেশ চন্দ্র শ্রীবাস্তব।
ছোট থেকে তার ছেলে নকলাভিনয়ে পারদর্শী ও আগ্রহী, ফলে তখন থেকে সে কমেডিয়ানই হতে চেয়েছে।
রাজু শ্রীবাস্তবকে শুরুতে অনেকে অমিতাভ বচ্চনের মতো মনে করতেন।
তিনি অনেকগুলো ক্যাসেট ও ভিডিও সিডি করেছেন।
ভারত ও বিদেশে অনেক শো করে চলেছেন।
‘দি ইন্ডিয়ান মজাক লিগ’র ‘মজাক মজাক ম্যানে’ স্টান্ড-আপ কমেডি শোতে তিনি ‘লাইফ ওকে’ টিভিতে কাজ করেছেন। সেখানে বিচারক ছিলেন হরভজন সিং ও শোয়েব আখতার।
নিজের কানপুর থেকে তাকে সমাজবাদী দল ২০১৪ সালে লোকসভা নির্বাচনের টিকেট দেয়। পর, পর তিনবার উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মুলায়ম সিং যাদবের দল। তবে তিনি সরে যান, যথেষ্ট সমর্থন স্থানীয় শাখাগুলো থেকে পাচ্ছেন না বলে। এরপর বছরের ১৯ মার্চ বিজেপিতে যোগ দেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী তাকে নিয়ে সে বছর যত্র, তত্র ভারতবাসীর বর্জ্য নিষ্কাষণ ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কার্যক্রম বদলানোর আন্দোলন ‘সোয়াচ ভারত মিশন’ শুরু করেন। সেই থেকে নানা শহরে এই কাজে রাজনৈতিকভাবে লিপ্ত রাজু শ্রীবাস্তব। অনেকগুলো সরকারী মিউজিক ভিডিও করেছেন। টিভি বিজ্ঞাপন এবং সামাজিক সেবা কার্যক্রমও করেছেন।
ওএফএস।