আজ থেকে সবচেয়ে বড় শিল্পোৎসব ‘এডিনবার্গ ফেস্টিভ্যাল’
হাজার, হাজার শিল্পী বিশ্বের নানা প্রান্ত পেরিয়ে ইংল্যান্ডের স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গে সবচেয়ে বড় উৎসবের শুরু করতে এসেছেন।
‘দি এডিনবার্গ ফেষ্টিভ্যাল ফিঞ্জ’ এবার দেখাবে ২ হাজারের বেশি শো। করবেন ৫৮টি দেশের শিল্পীরা। সুবর্ণজয়ন্তী বা ৭৫তম আসরটিতে পৌঁছালো বলে তাদের খুশির কোনো সীমা নেই কারো।
এবারের উৎসবের শিল্পীদের সারিবদ্ধ তালিকাতে আছেন ফাঙ্কি বয়ল, স্টুয়ার্ট লি ও আল মুরাইয়ের মতো কৌতুকাভিনেতা। সামান্য পরিচিতি-ফান্সিস মার্টিন প্যাট্রিক বয়ল এখন ৪৯ বছরের একজন মানুষ। অত্যন্ত জনপ্রিয় স্কটিশ কমেডিয়ান ও লেখক। নিজের বিদ্রুপাত্নক, পরবাস্তব, চিত্রলেখা সংক্রান্ত ও প্রায়ই বিতর্কিত হাস্য-রসাত্নক কাজের জন্য পরিচিত। ১৯৯৫ সাল থেকে ফাঙ্কি একজন স্টান্ড-আপ কমেডিয়ান। বিবিসিসহ নামকরা টিভিগুলোর শোর কৌতুকাভিনেতা হিসেবে খ্যাতিমান। ইংরেজ কমেডিয়ান স্টুয়ার্ট গ্রাহাম লি তার চেয়ে পাঁচ বছরের বড়। একজন চিত্রনাট্য লেখক, টিভি পরিচালকও। তার স্টান্ড-আপ শোগুলোকে কোনো কিছুর নিজের মতো করে পুণরাবৃত্তি, ফিরে তাকানো, ভাবলেশহীন ডেলিভারি, বিনির্মাণ ও নিয়মিতভাবে দর্শকদের সঙ্গে মেলবন্ধনের মিশ্রণ বলা হয়। ১৯৮৯ সালে তার কমেডি জীবনের শুরু। লি ও হেরিং (রিচাড হেরিং) জুটির জন্ম। তিনি দি সানডে টাইমসের জন্য সঙ্গীত সমালোচনা লেখেন। ২০১১ সালে জিতেছেন ‘দি ব্রিটিশ কমেডি অ্যাওয়ার্ড’। ২০০৯ সালে তাকে টাইম ম্যাগাজিন ‘কমেডিয়ানদের কমেডিয়ান’ উপাধি দিয়েছে। তিনি ভালোর জন্য কৌতুকাভিনেতা। ২০১২ সালে লিখেছেন তারা তাকে ‘দর্শকের মুখ’। ২০১৮ সালে তিনি টাইমের ‘ইংরেজি ভাষীদের সেরা কৌতুকাভিনেতা’ হয়েছেন সারা বিশ্বে। আল মুরাই বা অ্যাল মারি দি ভ্যানেটি ফেয়ারের লেখক উইলিয়াম মেকপিস থ্যাকারির বংশধর। সাবেক ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত স্যার রালফ মারির নাতি ও দি রয়াল ইঞ্জিনিয়ার্সের ১৩১ (প্যারাসুট) রেজিমেন্টের একজন লেফটেনেন্ট কর্ণেলের ছেলে। তারা মায়ের বংশের দিক থেকেও অত্যন্ত অভিজাত। তারা কুয়েনবার্গ পরিবার। গণ্য করা হয় রাজকীয় ও পবিত্র রোমান রাজবংশের মানুষ হিসেবে। এই উৎসব তার খুব প্রিয়। নিয়মিত অংশ নেন। অক্সফোর্ডে পড়ালেখা করা, এখন ৫৪।
ফের উৎসবের গল্প। দি এডিনবার্গ মিলিটারি ট্যাটুগুলো ফিরে এসেছে।
মহামারি রোগের পর এই প্রথম তাদের এই আন্তর্জাতিক উৎসবে দর্শকদের সামনে শিল্পীরা লাইভ বা সরাসরি অনুষ্ঠানগুলো করতে পারছেন।
নিয়মিত আয়োজন করে ‘দি এডিনবার্গ ফেস্টিভ্যাল ফিঞ্জ সোসাইটি’। ফিঞ্জ মানে হলো বিশেষভাবে উৎসাহী।
তাদের সভাপতি ফিবি ওয়ালার-ব্রিজ। মোটে ৩৭ বছরের এই নারী বিবিসির ফ্লিবার্গ শোর পরিকল্পনাকারী, লেখিকা ও একমাত্র অভিনেত্রী। পরিচালনা করেছেন, প্রধান লেখক হিসেবে কাজ করেছেন ও নির্বাহী প্রযোজক ছিলেন ‘কিলিং ইভ’-এর ২০১৮ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত। টিভির জন্য রূপান্তর করেছেন শোটি। তার এই দুটি শোই অত্যন্ত খ্যাতি লাভ করেছে ও গার্ডিয়ান ২১ শতকের সেরা ১শ সিরিজের মধ্যে রেখেছে। প্রথমে ৮ ও এখন ৩০ নম্বরে। ২০২০ সালে তাকে টাইম বিশ্বের ‘সবচেয়ে প্রভাবশালী ১শ’ জনের অন্যতম হিসেবে ফিচার করেছে। ফ্লিবার্গের জন্য তিনি ‘ব্রিটিশ অ্যাকাডেমি টেলিভিশন অ্যাওয়ার্ড’ লাভ করেছেন সেরা নারী কমেডি পারফরমেন্স বিভাগে। তিনটি ‘অ্যামি’ আছে তার। দুটি ‘গোল্ডেন গ্লোব’। ২০১১ সালের ছবি ‘অ্যালবার্ট নবস’, ‘দি আয়রন লেডি’, ‘গুডবাই ক্রিস্টোফার রবিন্স’, স্টার ওয়ারস সিরিজের ছবি ‘সলো : অ্যা স্টার ওয়ারস স্টোরি (২০১৮)’-এ অভিনয় করেছেন। জেমস বন্ড সিরিজের ‘নো টাইম টু ডাই’-২০২১ সালে বেরুনো ছবিতে চিত্রনাট্যে কাজ করেছেন।
‘দি এডিনবার্গ ফেস্টিভ্যাল ফিঞ্জ সোসাইটি’র সভাপতি এই ফিবি ওয়ালার-ব্রিজ বলেছেন, ‘নতুনভাবে উৎসবকে সাজানোর ফলে দর্শকরা সবগুলো আয়োজনেই আরো অনেক কিছু লাভ করবেন ও আরো ভালোভাবে বুঝতে এবং উপভোগ করতে পারবেন।’
একটি সবার জন্য উন্মুক্ত গালা ইভেন্টের মাধ্যমে আজ থেকে বিনোদন যাত্রা শুরু হচ্ছে।
২৮ আগষ্ট ২০২২ মোট ২৩ দিনের হবে।
এই বিপুল আয়োজনের উৎসবে প্রথম দিনে অংশগ্রহণ করছে অ্যাক্রোবেটদের ফার্ম দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা ‘গ্রাভিটি অ্যান্ড আদার মিথস’। তারা এডিনবার্গের রাগবি স্টেডিয়াম মারিফিল্ড স্টেডিয়ামে একটি নতুন করা শারীরিক নাটক প্রদর্শন করবেন। নাম ‘ম্যাক্রো’। তাদের সঙ্গে থাকবেন ‘দি ন্যাশনাল ইয়ুথ কয়ার অব স্কটল্যান্ড’। ম্যাক্রোতে গ্রাভিটির ৩০ জন শক্তিশালী ক্রীড়াবিদ অংশগ্রহণ করছেন। আর নাইকস নামের স্কটল্যান্ডের জাতীয় সংস্থাটিতে উচ্চমানের গায়ক তৈরি করা হয় সরকারীভাবে ০ থেকে ২৫ বয়সীদের। তাদের শিক্ষা প্রকল্প আছে। বই, গানের বইসহ আরো অনেক কিছু শিক্ষামূলকভাবে প্রকাশও করেন। এই দুটি দলের পারফরমেন্সের সঙ্গে গান, শারিরীক করসত, নাটক, প্রজেকশনস (তারাবাতি, আলোর ঝলকানি ইত্যাদি), সুরের জাদু, বিপুল লাইট ডিসপ্লে থাকবে। নাচও।
থাকবে ‘ডিমেশিন, পার্ট অব আনবক্সড : ক্রিয়েটিভিটি ইন দি ইউকে’। আরেকটি বিনামূল্যের, নিমগ্নতার কাহিনী। মানুষের মনের কার্যক্ষমতার প্রকাশ ঘটবে আলো ও শব্দের ব্যবহারে। উপস্থাপন করবে এডিনবার্গ সায়েন্স। তারা বিনামূল্যে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করেন। সব বয়সী মানুষদের মধ্যে, সারা দুনিয়াতে। ১৯৮৯ সালে প্রতিষ্ঠিত। ‘এডিনবার্গ বার্ষিক বিজ্ঞান উৎসব’ আয়োজনের জন্য সবচেয়ে বিখ্যাত।
ইউরোপের সবচেয়ে বড় এই উৎসব বিশ্বের প্রথম জনমানুষের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উৎসব। ‘ডিমেশিন, পার্ট অব আনবক্সড : ক্রিয়েটিভিটি ইন দি ইউকে’ তৈরি করেছে ‘ক্রিয়েটিভ অ্যাক্ট’ নামের একটি সংগঠন। টার্নার পুরস্কার জয়ী শিল্পীদের পরিবেশনাটি গ্রামি ও মারকুরি পুরস্কারে মনোনীত গায়ক ও কম্পোজার জন হপকিন্স পরিচালনা করবেন। থাকবেন প্রধান প্রযুক্তিবিদ, বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা।
তাদের সর্বশেষ আয়োজন হবে টানা উত্তেজনা, ভালোবাসা, প্রদশর্ন, শিল্প নৈপুণ্যগুলোর বিপুল আয়োজনে ‘দি ফিলাডেলফিয়া অকেস্টা’র। মার্কিন সিম্ফনি অকেস্টা দল। আমেরিকার প্রধান পাঁচটি অকেস্টা দলের অন্যতম। শেষ ছুটির দিনে ‘দি এডিনবার্গ প্লে হাউজ’ বা ‘এডিনবার্গ থিয়েটার’-এ মূল আসরটি বসবে। দি অ্যাম্বাসেডর থিয়েটার গ্রুপের মালিকানাধীন এই থিয়েটার দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম। সিট আছে ৩ হাজার ৫৯টি। বাইরে লাইভ করা হবে প্রিন্স স্টিট গার্ডেনসে। এটি স্কটল্যান্ডের রাজধানী এডিনবার্গের প্রধান রাস্তা ও কেনাকাটার কেন্দ্র। দেখানো হবে দি রস ব্যান্ড স্টান্ডে। সেটি আউট ডোর স্টেজ হিসেবে ব্যবহার করে এডিনবার্গ কতৃপক্ষ শহর সঙ্গীত, খাবারদাবার সুবিধাদিসহ।
বরাবরের মতো বিখ্যাত শিল্পীদের পাশে নিয়ে এবার উৎসব সেন্ট অ্যান্ড্রু স্কয়ার ও সেন্ট জেমস কোয়াটার নামের দুটি বিশেষ স্থানে তাদের প্রদর্শনী বাড়াবে।
শরনার্থী, বাজি, নারীর নিরাপত্তা, প্রতিবন্ধীতা, মানসিক স্বাস্থ্য সেবার ওপর সব প্রদর্শনী হবে।
স্কটিশদের প্রিয়সব তারকাদের মধ্যে আরো থাকবেন ৪০ বছরে ব্রিটিশ বিখ্যাত নারী কমেডিয়ান জোসি ইসাবেল লং। তিনি ১৪ বছরে স্টান্ড-আপ কমেডি শুরু করেন ও ১৭ বছরে ‘ব্রিটিশ নিউ কমেডি অ্যাওয়ার্ড’ জয় করেন। ‘সেরা নতুন অ্যাওয়ার্ড’ এই উৎসবের জয় করেছেন তিনি ২০০৬ সালে।
থাকবেন বিখ্যাত ফিল ওয়াং, রিচার্ড ডি হান্টার ও নিশ কুমার। আছেন স্যার ইয়ান ম্যাকেলেন। তিনি হ্যামলেটের নতুন প্রযোজনা নিয়ে আসবেন।
শোনা ম্যাককার্টি এবারের উৎসবের নির্বাহী প্রযোজক। বিখ্যাত ইংরেজ অভিনেত্রী ও গায়িকা। জানিয়েছেন, ‘নাটক, নাচ, শারিরীক নাটক, কৌতুক, গান, অপেরা, অতিথিদের সামনে আয়োজিত বিনোদন অনুষ্ঠান, বিচিত্রানুষ্ঠান, শিশুদের শো, শব্দ উচ্চারণ, চিত্র প্রদর্শনীসহ আরো অনেক আয়োজন হবে। লক্ষ্য বিশ্বকে এক করা। হাসি, কান্না, উদযাপন ও সবাই মিলে বিনোদিত হওয়ার একটি বিরাট সুযোগ।’
এডিনবার্গ সিটি কাউন্সিলের প্রধান ক্যামি ডে খুব খুশি, ‘দি ফিঞ্জের জন্য বছরটিই অত্যন্ত গুরুত্ববহ। শিল্পীদের বিশ্বসেরা ঠাস-বুনটের অনুষ্ঠানগুলোর আয়োজনই নয়, তাদের সবখানের মিলিত আয়োজনও। এই অবিশ্বরণীয় ৭৫ বছরে পা ফেলেছে কোনোদিনও ভুলে না যাওয়া উৎসবটি।’
ছবি : ১. গালা ইভেন্ট, ২. ম্যাক্রো পারফরমেন্স ৩. এডিনবার্গ হাই স্ট্রিটে দর্শকদের প্রজেক্টরে উপভোগ, ৪. আয়োজক সমিতির সভাপতি ফিবি ওয়ালার-ব্রিজ ৫. শোনা ম্যাককার্টি উৎসবের নির্বাহী প্রযোজক।
ওএফএস।