মনিকার অনুরোধ রাখলেন বিয়ন্সে
যখন বিয়ন্সে গানের লাইনগুলো ঠিকঠাক করছেন, একটি অনুরোধ এলো মনিকার কাছ থেকে।
পুরো পৃথিবীকে কাঁপিয়ে দেওয়া মেয়েটির পুরো নাম মনিকা সামিয়েল লুইনস্কি। জন্ম ১৯৭৩ সালের ২৩ জুলাই।
হোয়াইট হাউজে যখন ইন্টার্ন, তখন তার বয়স মোটে ২২। আরো একটি বছর ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত মাকিন যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতিদের কর্ম অফিস ‘ওভাল’-এ তিনি চাকরি করেছেন। এটি হোয়াইট হাউজের অর্ন্তভুক্ত।
মনিকা লুইনস্কি প্রকাশ করেছেন, তখনকার রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববরেণ্য নেতা বিল ক্লিনটনের সঙ্গে তার অন্যায় সম্পর্ক ছিল।
আদালতে উপস্থাপিত ও প্রমাণিত এই প্রণয়ঘটিত দুকর্মের ফলে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরুণ এবং আগামীদের উজ্জ্বলতম প্রতিভাগুলোর একটি বিল ক্লিনটনের রাজনৈতিক এবং সামাজিক ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যায়। প্রতিক্রিয়া হয়েছে তার জীবনে ভয়াবহ। অপবাদ ও অবিশ্বাসকে ঘাড়ে নিয়ে অভিসংশনের শিকার হন ক্লিনটন। তাকে হোয়াইট হাউজের প্রতিনিধিরা প্রথমে সরিয়ে দেন। এরপর কংগ্রেসে ভোটেও হেরে যান তিনি। চলে গেলেন ইতিহাসের দ্বিতীয় ইমপিচমেন্টের শিকার মার্কিন প্রেসিডেন্ট হয়ে ২০০১ সালের ২০ জানুয়ারি।
অথচ উইলিয়াম জেফারসন ক্লিনটনকে কে না চেনেন দুনিয়াতে। ইতিহাসের তৃতীয় কমবয়সী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ৪২তম প্রেসিডেন্ট।
মোটে ২৭ বছর বয়সে, পড়ালেখা শেষ করেই এই তুমুল প্রতিভাবান যুবক পুরো আমেরিকাকে চমকে দেন আরাকানসাসের গভর্নর হয়ে। টানা ১৯৯২ সাল পর্যন্ত অঙ্গরাজ্যের প্রধান ছিলেন।
তারও দুই বছর আগে মানে পড়ালেখা শেষ করেই তিনি হলেন রাজ্যটির অ্যাটর্নি জেনারেল।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্রকামীদের দল ডেমোক্রেটিক পার্টিই তাদের সোনার ছেলেটিকে বলতো ‘নিউ ডেমোক্র্যাট’।
তিনি তৃতীয় ধারার রাজনীতিতে বিশ্বাসী ও প্রবক্তা।
জীবনের অন্যতম অর্জন ইসরায়েল ফিলিস্তিনিদের ক্যাম্প ডেভিড চুক্তি, ইয়াসির আরাফাতকে নিয়ে। উত্তর আমেরিকায় বিনা শুল্কে মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাণিজ্য শুরুর আইন পাশ করেছেন।
তার প্রেমিকা ও ছাত্র জীবনের বান্ধবী হিলারি ক্লিনটন। বিশ্বখ্যাত নারী।
হিলারি নিউ ইয়র্কের সিনেটর ছিলেন ২০০১ থেকে ২০০৯ সালে। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও নারী হিসেবে রাষ্ট্রপতি নিবাচনের প্রতিদ্বদ্বী।
তার স্বামী ক্লিনটন রুজভেল্ট ও রিগ্যানের সঙ্গে তৃতীয় সবচেয়ে সেরা প্রেসিডেন্ট থেকে চলে যান।
এরপর থেকে আর নিয়মানুসারে রাজনীতিতে নেই ক্লিনটন।
বক্তৃতা ও মানবতার কাজে নিজেকে নিয়োগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের এই ঐতিহাসিক প্রধান।
তার ক্লিনটন ফাউন্ডেশন আছে।
এইচআইভি, এইডস নিয়ে তিনি কাজ করেন হিলারিকে নিয়ে।
হাইতিতে তিনি জাতিসংঘের বিশেষ দূত ছিলেন।
‘ক্লিনটন-বুশ হাইতি ফান্ড’ করেছেন তারা।
বিল ক্লিনটন তার দলের রাজনীতিতেও আছেন। ২০০৮ এবং ’১৬ সালে হিলারির রাস্ট্রপতির জন্য প্রচারে তিনি সক্রিয় অংশগ্রহণ করেছেন।
এবার মনিকা। এখন এই নারী মোটে ৪৯ বছরের। হঠাৎ করেই খারাপ কাজে আলো ও অন্ধকারের নীচে চলে এলেন।
একজন মাকিন অধিকারকমী তিনি। টিভি ব্যক্তিত্ব, ফ্যাশন ডিজাইনার।
ক্লিনটনের অসৎকর্ম তাকে আন্তর্জাতিক তারকার খ্যাতি দিয়েছে।
নিজের নামে একটি হাতব্যাগ, নারীদের; তিনি বিক্রি করেন ভালোভাবে। একটি শরীরচর্চা কম্পানির পরিকল্পনা উপস্থাপনের তিনি বক্তা।
সাইবার বুলিংয়ের বিরুদ্ধে তিনি একজন সক্রিয় কমী, লন্ডন থেকে মনোবিজ্ঞানে মাস্টার্স।
হিলারির জীবনে না গিয়ে আমরা বরং মনিকা লুইনস্কির সাম্প্রতিক খবরে থাকি। তিনি, গতকাল খবরে প্রকাশ, বিয়ন্সে তার নতুন অ্যালবাম রিনেইনন্স (রেঁনেসা)’তে ‘অদক্ষ লোকের প্রতি বৈষম্য আরোপের নিন্দা জ্ঞাপন’ সরিয়ে দিচ্ছেন এই খবরগুলো তার টুইটারে শেয়ার দিয়েছেন।
তিনি লিখেছেন, ‘উম, আমরা অল্প সময়ের জন্য এতে।’
‘পাটিশন (বিভক্তি বা ভাগ)’ নামের এই সাউন্ড ট্র্যাকটি নেওয়া হয়েছে গায়িকার ২০১৩ সালের তার নামেই প্রকাশিত স্টুডিও অ্যালবাম থেকে।
গানে মনিকাও আছেন তার কন্ঠে-“মনিকা লুইনস্কি’ড অল অন মাই গাউন।”
আছেন তিনি বিয়ন্সের ‘হিটেড’ নামের গানে। হিটেড মানে হলো উত্তপ্ত বা উত্তেজিত।
এই সপ্তাহে বিয়ন্সে রাজি হয়েছেন, তার গানটি থেকে সেই অংশটিও সরিয়ে ফেলতে, এটি আলোচনায় নিয়ে আসবে ও হীন আচরণ করতে নিয়ে যেতে পারে দর্শক, শ্রোতাদের সেই জীবনগুলোতে।
তবে মনিকা লুইনস্কির অনুরোধ বিষয়ে গায়িকাকে মন্তব্যের জন্য পেতে পারেনি সিএনএন।
এবার বিয়ন্সে। পুরো নামটি কবেই হারিয়ে গেছে তার, বিয়ন্সে জ্যাজেল নোওজ কার্টার।
৪০ বছরের এই নারী কালো, আফ্রিকান-আমেরিকান মা।
বাবা সেলুন মালিক ও নরসুন্দর।
এখন তিনি একজন বিশ্ব কাঁপানো গায়িকা, অভিনেত্রী, প্রযোজক ও গীতিকার।
শিশু বয়স থেকে তার গাওয়া ও নাচার শুরু। ৯০ দশকের শেষ থেকে এই কিশোরী-তরুণীর মার্কিন বিখ্যাত মেয়েদের গানের দল “ডেসটেনিস’স চাইল্ড”র প্রধান গায়িকা হিসেবে বিশ্ব কাঁপানোর শুরু করেন। সর্বকালের সবচেয়ে বেশি বিক্রি হওয়া মেয়েদের গানের দলের অন্যতম তারা।
বিয়ন্সে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি প্রদর্শনযোগ্য রেকর্ড আর্টিস্টদের একজন। ২শটি গানের তালিকাতে বিশ্বজুড়ে প্রথম শিল্পী হিসেবে তার পর, পর ছয়টি গান প্রথম হয়েছে।
২৮টি ‘গ্রামি’ জিতেছেন শিল্পী হিসেবে, ২৬টি ‘এমটিভি মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’ও আছে তার। ১৩টি বিইটি, ১৭টি একক শিল্পীর ‘ট্রেইন মিউজিক অ্যাওয়ার্ড’ রয়েছে। আর কারো নেই দুনিয়াতে এমন সব অর্জন।
ওএফএস।