অ্যাঞ্জেলিনা জোলির মেয়ে জাহারা কলেজে যাচ্ছে
রোববার ছুটির দিনে হলিউড তারকা অভিনেত্রী-মার্কিনী অ্যাঞ্জেলিনা জোলি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে শেয়ার করেছেন, তার মেয়ে ‘জাহারা জোলি-পিট’ যুক্তরাষ্ট্রের জর্জিয়া অঙ্গরাজ্যের রাজধানী আটলান্টা শহরের ‘স্পেলম্যান’ কলেজে ভর্তি হবে।
কলেজটি ঐতিহাসিকভাবে কালোদের একটি বেসরকারী উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। ধরণে মনের উদারতা বাড়ায়, যেমন সাহিত্য, দর্শন, শিল্পকলা ইত্যাদি পাঠ ও চর্চা করে। ‘আটলান্টা ইউনিভার্সিটি সেন্টার’ নামের সহযোগিতাপরায়ন প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি অঙ্গ প্রতিষ্ঠান। ১৮৮১ সালের ‘আটলান্টা ব্যাপটিস্ট নারী বিন্দামন্দির’ নামে প্রতিষ্ঠানটি তার সরকারী সনদ লাভ করেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সবচেয়ে পুরোনো ঐতিহাসিক কালো নারীদের কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয় সংঘ’র প্রথমটি হলো এই কলেজ।
নিজের ভেরিফাইড বা যাছাইয়ের মাধ্যমে স্বীকৃত ইসস্ট্রাগ্রাম অ্যাকাউন্টে হলিউডে বহু বছর ধরে সবচেয়ে বেশি পারিশ্রমিক পাওয়া অস্কারজয়ী নায়িকা জোলি লিখেছেন, ‘জাহারা তার কলেজের বোনদের সঙ্গে। এই বছর নতুন ছাত্রীরা যারা শুরু করছে, তাদের সবাইকে অভিনন্দন।’ মেয়ের সঙ্গে পালক মা ছবি দিয়েছেন। আরো বলেছেন, ‘একটি বিশেষ স্থানে সম্মানিতভাবে আমার মেয়ে একজন স্পেলম্যান বালিকা হিসেবে তাদের পরিবারে জীবন শুরু করছে।’
জাহারার কলেজে পড়ালেখা করেছেন প্রথম কালো আফ্রিকান-আমেরিকান হিসেবে ‘পুলিৎজার সাহিত্য পুরস্কার’ লাভ করা সাহিত্যিক, ছোট গল্পকার, কবি ও সমাজকর্মী অ্যালিস ওয়াকার। তিনি ১৯৮২ সালের পুরস্কারজয়ী। বাস্তব ভিত্তিক সাহিত্য কর্মের জন্য ‘দি কালার পার্পল’ বইটি তাকে এই বিরাট সম্মানের অংশীদার করেছে। ৭৮ বছরের এই লেখিকার আজতক মোট ১৭ উপন্যাস ও ছোট গল্পের বই আছে। ১২টি কাল্পনিক উপন্যাস। এই কলেজের ছাত্রী ছিলেন ৪৩ বছরের কিশা নাইট পোলিয়াম। তিনি মার্কিন কালো অভিনেত্রী। ‘দি কসবি শো’ নামের ‘বিল কসবি’র ১৯৮৪ থেকে ৯২, টানা ৮ বছরের কৌতুকাভিনয়ের সিরিজের অন্যতম অভিনেত্রী।
কালো ছেলেদের জন্য কলেজ এখানে ‘দি মোর হাউজ কলেজ’, কাছেই ওদেরটি। তারা ডাকেন ‘স্পেল হাউজ’। অন্যতম বৈশিষ্ট্য আছে-তাদের মিলগুলো খুঁজে বের করে দেওয়া ও মিলগুলো নিয়ে নানা ধরণের আয়োজনে অংশগ্রহণ করানো।
মোর হাউজের ভেরিফাইড ইনস্ট্রাগ্রামে জোলিকে শিক্ষক ও সহযোগীরা কিভাবে তারা একটি নাচ শেখান, দেখিয়েছেন। এরপর তিনি তার মেয়েকে নিয়ে হেসেছেন ও চুমো দিয়েছেন।
অ্যাঞ্জেলিনা জোলির জাহারা, ভিভিয়েন ও নক্স নামের ১৪ বছরের দুই যমজ, ১৬ বছরের শাইলো, ১৮ বছরের প্যাক্স, ২০ বছরের ম্যাডক্স নামের পালিত ছেলে আছে সাবেক স্বামী ব্র্যাড পিটের সঙ্গে। তারা বিশ্বের নানা দেশে মানব সেবার অলাভজনক কার্যক্রমে এই ছেলেমেয়েদের নিজেদের জীবনে ঠাঁই দিয়েছেন।
২০০৫ সালের ৮ জানুয়ারি জাহারা দুর্ভিক্ষপীড়িত ইথিওপিয়াতে জন্মগ্রহণ করেছে। সে তাদের বড় মেয়ে। এখন তার ১৭। মোটে ছয় মাসের এই মেয়েটিকে নিতে ব্র্যাড ও জোলি-‘ব্রাঞ্জেলিনা’ বিশ্বকে সাড়া জাগিয়ে ইথিওপিয়াতে গিয়েছিলেন। তার মাও তাকে ফেলে চলে গিয়েছেন তখন। অপুষ্ট ছোট্ট শিশুটি পানিশূণ্যতায়ও আক্রান্ত, খেলে বমি হয়ে যাচ্ছে। তারা না নিলে সে মারাই যেত। তখন তার নাম ছিল সাহারা। পরের বছর ১৯ জানুয়ারি জাহারার নামের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে এই দম্পতি নিজেদের নামটিও যুক্ত করে দিলেন। বিশ্বখ্যাত ‘কুংফু পান্ডা ৩’ ছবিতে কন্ঠ দিয়ে তার সিনেমার ভুবনে শুরু, বেরিয়েছে ২০১৬ সালে। তবে তাদের মেয়ে হিসেবেই সে এখনো পরিচিত। তারা ছয় ভাইবোন। ২০১৬ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর তাদের মা বাবার কাছ থেকে বিবাহ বিচ্ছেদ নিয়ে নিলেন। তখন অ্যাঞ্জেলিনা জোলি তার সব সন্তানকেই দেখভালের অধিকারের জন্য আদালতে আবেদন করেছেন। অনেক দিনের আইনী লড়াইয়ের পর একটি স্বল্পকালীন চুক্তিতে এসেছেন তারা ২০১৮ সালের নভেম্বরে। সেখানে ৫০ ভাগের কম ছেলেমেয়েদের অধিকার দেওয়া হয়েছে আইনগতভাবে হলিউডের সেরা নায়ক অস্কারজয়ী ব্র্যাড পিটকে।
তবে জাহারা ও তার ভাইদের জীবন পুরোপুরি বদলে গিয়েছে। তার কলেজটিও একটি উচ্চতর সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে। এই প্রতিষ্ঠানগুলো কেবল আফ্রিকান-আমেরিকানদের জন্য। এখন তাদের মধ্যবিত্তরাও পড়ালেখা করান ছেলেমেয়েদের। মোট ১শ ২টি প্রতিষ্ঠান আছে তাদের। এর মধ্যে ১২টি ইনস্টিটিউশন ১৯৩০ দশকের। দেশের ৩ শতাংশ কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার চাহিদা পূরণ করেন তারা। মার্কিন সমাজকর্মী ও অধিকার আদায়ের নেতা মাটিন লুথার কিং জুনিয়র, সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি থারগুড মার্শাল, ভার্জিনিয়া অঙ্গরাজ্যের গভর্নর ডগলাস ওয়াইলডার ও আজকের উপ-রাষ্ট্রপতি কমলা হ্যারিস এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর বিখ্যাত ছাত্র, ছাত্রী।
ওএফএস।