স্টার ট্র্যাককে নবরূপ দেওয়া নিশেল নিকোলস আর নেই
তিনি মারা গিয়েছেন ৮৯ বছরে। ৩০ জুলাই, ২০২২ সালে। ‘নিশেল নিকোলস’ সবচেয়ে বেশি পরিচিত ছিলেন তার আমূল বদলে দেওয়া ‘লেফটেন্যান্ট নিউটোরা হোরা’ নামের চরিত্রটিতে অভিনয়ের জন্য। চরিত্রটি মার্কিন সেনা বাহিনীর একজন যোগাযোগ বিভাগের অফিসারের। সিরিজটি প্রচারিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের টিভিতে।
মায়ের মৃত্যুর খবর জানিয়েছেন তার একমাত্র সন্তান ছেলে কাইল জনসন। তিনি বলেছেন একটি বিবৃতিতে-‘স্বাভাবিক কারণে আমার মা চলে গিয়েছেন। আদিম আকাশগঙ্গার মতো তার আলো প্রথমবারের মতোই দেখা গিয়েছে। এই আলো আমাদের মধ্যে থাকবে, আগামী প্রজন্মগুলো আনন্দ লাভ, পাঠ নেওয়া ও উৎসাহিত হতে গ্রহণ করবে। এমন একটি জীবন আমাদের ভেতরে বেঁচে থাকবে ও সবার জন্য আদর্শ হবে।’
১৯৬০’র দশকের শুরুর দিকে লস অ্যাঞ্জেলসে চলে এলেন নিকোলস। বিশ্বখ্যাত মার্কিন টিভি সিরিজ স্ট্রার ট্র্যাকের নির্মাতা, চিত্রনাট্যকার ও প্রযোজক জিন রডেনব্যারি’র সঙ্গে ঘনিষ্টতা হলো। এরপর এই কিংবদন্তীদের দলে তার অভিনয়ের শুরু হলো। তবে সেখানেও গল্প আছে। স্ট্রার ট্যাক শুরু করতে নিকোলসকে ফোন করলেন রডেনব্যারি, কেননা তিনি তখন ইউরোপে। ‘আমার এজেন্ট বললো, তারা স্ট্রার ট্র্যাক করছে। তবে আমি জানতাম না এটি কী?’ বলেছেন টেলিভিশন অ্যাকাডেমিকে। আসল চিত্রনাট্যে তার আহোরা নামের চরিত্রটি ছিল না। তখন তিনি একটি বই পড়ছিলেন উহুরু নামে। এর মানে হলো ‘স্বাধীনতা’। তিনিই রডেনব্যারিকে নামটি নিতে বললেন তার চরিত্রের জন্য। তবে নির্মাতার মনে হলো, খুব রূঢ়। এরপর তারা অক্ষর বদলে নামটি নিলেন।
১৯৬৬ সালে স্টার ট্র্যাক যখন শুরু হলো, তখন এই নিশেল একটি টিভি রিয়েলিটি শোতে অভিনয় করছিলেন। নাম ‘অ্যা ব্ল্যাক ওম্যান’। টিভির একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে ভালো চরিত্র করছিলেন। তার আগেও আফ্রিকান আমেরিকান নারীরা টিভিতে কাজ করেছেন। তবে তারা কাজের বুয়ার চরিত্রই করতেন। আর ছিল ছোট চরিত্রগুলো। তিনিই প্রথম তাদের বড় চরিত্র করলেন। নিশেল নিকোলস চরিত্রটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ স্ট্রার ট্র্যাকের। নানা বর্ণের মানুষকে নিয়ে বানানো এই সিরিজের অন্যতম সেরাও।
তার দাদা ছিলেন একজন সাদা মানুষ। তিনি একজন কালো নারীকে বিয়ে করেছেন। এভাবেই তারা কালো হলেন। তিনি জন্মেছেন ১৯৩২ সালের ২৮ ডিসেম্বর। তার আসল নাম গ্রেইস ডেল নিকোলস। বাবা-মায়ের ছয় ছেলেমেয়ের তৃতীয়। ইলিনয়ের শিকাগোর রবিন্স শহরে। তার বাবা ছিলেন একজন কারখানা শ্রমিক। তবে মেয়ের জন্মের আগেই, ১৯২৯ সালে তিনি রবিন্সের মেয়র ও প্রধান বিচারক নির্বাচিত হয়েছেন।
নিকোলস পড়ালেখা করেছেন অ্যাঙ্গেলউড হাই স্কুলে। এখান থেকে ১৯৫১ সালে গ্রাজুয়েশন করেন। গ্রেইস নামটি ভালো লাগতো না বলে নিশ্যাল প্রথম অংশ হিসেবে বেছে নেন। তিনি নিউ ইয়র্ক শহর ও লস অ্যাঞ্জেলসে পড়ালেখা করেছেন।
নিকোলস একাধারে একজন আমেরিকান অভিনেত্রী, গায়িকা ও নৃত্যশিল্পী ছিলেন। তিনি টিভিই নয়, স্ট্রার ট্র্যাকের সিনেমাগুলোতেও অভিনয় করেছেন সমান তালে।
তার বিষয়ে যাজক মার্টিন লুথার কিং জুনিয়র বলেছেন, ‘বাধাধরা চরিত্রের বাইরে কালো নারীদের প্রথম পূর্ণ চরিত্রে নিয়ে এসেছেন তিনি টিভির ইতিহাসে।’
মোটে ১৪ বছরে কাজে নেমেছেন এই মেয়েটি। স্থানীয় ক্লাবগুলোতে গান গাইতেন। গাইতে, গাইতেই তার সঙ্গে পরিচয় হলো বিখ্যাত কৃষ্ণাঙ্গ কম্পোজার, পিয়ানোবাদক ও জ্যাজ অর্কেস্টার প্রধান ডুক অ্যালিংটনের সঙ্গে। তিনি তার দলে নিয়ে নিলেন ও কনসার্টগুলোতে গাইতে সারা দেশের নানা জায়গাতে যেতে, যেতে জীবনের গতি বদলে গেল মেয়েটির। শিকাগোর ক্লাবগুলোতেও অনেক গেয়েছেন তিনি। অভিনয় করেছেন মঞ্চে।
১৯৭৭ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত আমেরিকান টিভিগুলোতে ইতিহাসের সেরা আফ্রিকান-আমেরিকান অভিনেত্রী হিসেবে আমূল বদলে দেওয়া কাজ করে তিনি অক্ষয় হয়ে থাকবেন। এছাড়াও নাসার অনুষ্ঠান ও কাজগুলোতে তাদের উন্নয়নের জন্য স্বেচ্ছাসেবা দিয়ে গিয়েছেন তিনি। ভূমিকা রেখেছেন সেখানে নানা বর্ণের মহাকাশচারীদের নিয়োগের ক্ষেত্রে। নারী ও আদিবাসী মানুষদের নাসাতে কাজের সুযোগ করে দিয়ে প্রসিদ্ধ হয়েছেন। নাসায় তিনি স্যালি রাইড, জুডিথ রেজনেক ও গায়ান ব্লুফেডসহ আরো অনেক নভোচারীকে নিয়োগ লাভে সাহায্য করেছেন। তিনি টানা তিনটি সেশনে স্ট্রার ট্র্যাকে অভিনয় করেছেন। বহু বছরের এই নাটকের শেষে তিনি চলে গেলেন নিজেই মহাকাশ অনুষ্ঠান পরিচালনায়। এভাবেই তার মহাকাশের কাজ শুরু।
নিকোলস এছাড়াও মার্কিন টিভিতে প্রথম চুম্বন চরিত্রে অভিনয় করে দারুণ আলোচনা এবং কৌতুহলের জন্ম দিয়েছেন। তিনিই সাদা কানাডিয়ান অভিনেতা উইলিয়াম শাটনারকে চুমু দিয়েছেন। ২০১৪ সালে সিএনএনকে একটি সাক্ষাৎকারে কালো হিসেবে সাদা পুরুষকে, ইতিহাসের প্রথম চুম্বন দৃশ্য প্রথম করার বিষয়ে বলেছেন, ‘আমার এই চুম্বন দৃশ্য টিভিকেই চিরকালের জন্য বদলে দিলো ও একজন নারী ও পুরুষ একে অন্যকে যেভাবে টিভি পর্দায় দেখে সেটিকেও বদলে দিয়েছে।’
ওএফএস।