বলিউডের সোনালী যুগের নায়ক সঞ্জীভের ওপর বই
বলিউডের খ্যাতিমান অভিনেতা সঞ্জীভ কুমারের জীবন নিয়ে বই হয়েছে ‘সঞ্জীভ কুমার : দি অ্যাক্টর উই অল লাভড’।
তাতে শুরুর দিনগুলোর কষ্টের কথা বলেছেন বলিউডের এই তারকা অভিনেতা।
তিনি ১১৯৬০ সালে একটি ছোট্ট চরিত্রে ‘হাম হিন্দুস্তানী’ ছবিতে অভিনয়ের মাধ্যমে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন। পাঁচ বছর পর সুপারহিট ‘নিশান’ ছবিতে নায়ক হিসেবে নতুন জীবনের শুরু। প্রায় ২৫ বছরের চলচ্চিত্র জীবনের বিখ্যাত ছবিগুলোর মধ্যে আছে ‘ইয়ে হায় জিন্দেগী’, ‘রাম তেরে কিতনে নাম’, ‘কতল’, ‘শিকার’ প্রভৃতি।
সেরা অভিনেতা হিসেবে তিনি দুবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জয় করেছেন। প্রথমবার ১৯৭০ সালে ‘দাস্তক’ ছবির জন্য, দুই বছর পর ‘কোশিশ’র সুবাদে।
১৯৮৫ সালে দ্বিতীয়বার হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মারা গিয়েছেন এই বরেণ্য অভিনেতা।
তার জীবন নিয়ে বইটি লিখেছেন রিতা রামামূর্তি গুপ্তা ও উদয় জারিওয়ালা। ভারতীয় সিনেমার জন্য জীবন উৎসর্গ করা অভিনেতাটির বাস্তবের ঘটনাগুলোতে সাজানো।
জীবনের শুরুর দিকে দারুণ কষ্টে চলা সঞ্জীভ একজন নামকরা পরিচালকের সঙ্গে দেখা করার সৌভাগ্য অর্জন করেছিলেন। পাঁচ বছরের কষ্টের ফল দিলেন তিনি ও তাকে নিয়ে ছবি বানাতে আগ্রহ বোধ করলেন। সেটি হলো ‘নিশান’।
তার সবচেয়ে ঘনিষ্ট বন্ধু ছিলেন সুবাস ইন্দোরি। ১৯৮০ সালের জুলাই মাসের সিনেব্লিটজ নামের ম্যাগাজিনে সাংবাদিক অনিল চিত্রেকে দেওয়া সঞ্জীভের একটি সক্ষাৎকার সংগ্রহ করে দিয়েছেন। এ বইটির একটি দারুণ প্রাপ্তি।
সঞ্জীভ কুমারের বিচিত্র জীবনও আছে বইতে। সাধারণত বাসে চলাফেরা করতেন। এমনকি জীবনের প্রথম সুপারহিট নিশান বেরুনোর পরেও। এই বাসকাহিনীতে আছে-একজন প্রযোজক তাকে নিশানের নায়ক হিসেবে চিনে ফেললেন। এরপর জানালেন, একটি ছবিতে লগ্নি করতে চলেছেন ও সেটি নিয়ে তার সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহী। বাড়ির ঠিকানা নিলেন ও আগামীকাল আসবেন বলে জানালেন।
পরের দিন পৌঁছালেন ভারতের হিন্দি ছবির এই নায়কের একটি মোটে ঘরে। সেটি হলো ‘চল’। বাড়িগুলো আসলে বস্তি, তবে ভবন। মুম্বাইয়ের কাছের বুলেশ্বরে তখন নায়ক থাকেন। তাকে রান্না ঘরে ঘুমিয়ে আছেন, দেখলেন প্রযোজক। ডেকে জাগালেন। তার জন্য দ্রুত এক কাপ চা বানিয়ে নিয়ে এলেন ও নিজে নিয়ে বসলেন। আলোচনা হলো ও সঞ্জীভ তাকে জানালেন নিশানের জন্য তিনি ২৫ হাজার রূপী পেয়েছেন। তবে প্রযোজক আশ্চর্য হয়ে গেলেন ও বললেন, আামি তোমাকে কেবল ১০ হাজার দিতে পারব। উত্তরটি এভাবেই দিয়েছেন তিনি, ‘আমি জানি, আপনি আমাকে বাসে দেখে ৫ হাজার ও নিজের হাতে এখন চা নিয়ে আসতে দেখে ৫ হাজার দেবেন বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তবে আমার মূল্য এখনো ২৫ হাজার রূপী।’
তার অনড় অবস্থানের পর এই টাকাতেই ছবিটির জন্য নায়ক হয়েছেন। উল্লেখ্য, তার নিশান সবচেয়ে ভালোভাবে চালানো দেওয়া হয়নি। তবে পরের ছবিগুলো এনে দিয়েছে।
মোটে ৪৭ বছরে ১৯৮৫ সালের ৬ নভেম্বর মারা গিয়েছেন। খুব ভালো অভিনেতা ছিলেন। বয়সের চেয়ে বড় চরিত্রগুলোতে অনেক অভিনয় করেছেন।
বিয়ে করেননি। ১৯৭৩ সালে হেমা মালিনীকে প্রস্তাব দিয়েছিলেন। তারা ঘনিষ্ট ছিলেন। এমনকি ১৯৭৬ সালে সঞ্জীভের প্রথম হার্ট অ্যাটাকের পরও। তবে পরে হেমা মালিনী সরে গিয়েছেন।
অভিনেত্রী ও প্লেব্যাক গায়িকা শোলাকৃষ্ণা পন্ডিত তাকে পছন্দের কথা জানিয়েছেন ও বিয়ের কথা বলেছেন। তাকে বিয়ে করবেন না জানানোর পর কোনোদিন তিনিও বিয়ে বসেননি।
সঞ্জীভ কুমারের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধুরা ছিলেন-সুনীল দত্ত, শাম্মী কাপুর, রাজেশ খান্না, হেমা মালিনী, শশী কাপুর, অমিতাভ বচ্চন প্রমুখ।
তার ছোট ভাই আগে মারা গিয়েছেন, আরেক ভাই সঞ্জীভ চলে যাওয়ার ছয় মাসের মধ্যে দুনিয়া থেকে বিদায় নিতে বাধ্য হয়েছেন।
ওএস।