সাবেক স্বামী-সংসার নিয়ে অনেক কিছু বললেন শবনম ফারিয়া!
এ সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শবনম ফারিয়া। সংসার ও ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে ক’দিন ধরেই আলোচনা-সমালোচনায় তিনি। বিচ্ছেদের বছর খানেক পর শবনম ফারিয়ার সাবেক স্বামীকে ইঙ্গিত করে অভিযোগ করেন, তার সাবেক স্বামী হারুন অর রশিদ অপুর দ্বারা নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন তিনি। সংসার টেকানোর জন্য সব সহ্য করেছিলেন বলেই চুপ থেকেছেন!
সাবেক স্বামীকে নিয়ে ফারিয়ার কথার পর মুখ খোলেন হারুন অর রশিদও। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আবারও পাল্টা স্ট্যাটাস দেন ফারিয়া। স্ট্যাটাসে বিস্তারিত তুলে ধরে ফারিয়া বলেন, ‘যেহেতু শুরুটা আমাকে দিয়ে শেষটাও আমি টানতে চাই’।
রবিবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে দেওয়া শবনম ফারিয়ার পুরো স্ট্যাটাসটি হুবুহু তুলে ধার হলো। শবনম ফারিয়া লিখেছেন “এতদিন পর এ বিষয়টা নিয়ে কথা বলা আমার জন্য বিব্রতকর, কিন্তু এত সংবাদকর্মী ভাইদের কল, কদিন ফোন বন্ধ করে রাখব? তাই অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছু কথা বলতে চাচ্ছি।
প্রথমত, আমি একটা পোস্ট শেয়ার করেছিলাম, যেখানে কিছুটা আবেগের বসে ব্যক্তিগত একটা অভিজ্ঞতা শেয়ার করেছিলাম। শেয়ার করাটা সমস্যা নয়, সমস্যা হলো আমার পর্দার বাইরের জীবন এত সাধারণ কিংবা আমার পরিবার এবং চারপাশের মানুষ আমাকে এতই সাধারণভাবে ট্রিট করে আমি হয়তো বুঝি না যে আমিও সম্ভবত তারকা তালিকায় পড়ি এবং আমার একটা কথা নিয়ে আলোচনা হয়! সম্ভবত সেজন্য প্রায়ই কিছুটা ব্যক্তিগত কথা লিখে ফেলি।
মূল কথায় আসি, আমি আমার সেই পোস্টে কোনোভাবেই কোনো ব্যক্তিকে নিয়ে অভিযোগ করিনি। সম্পূর্ণ অভিযোগ ছিল আমাদের সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির দিকে! ডিভোর্স জিনিসটা এত নোংরাভাবে না দেখলে হয়তো অনেকগুলো মেয়ের এভাবে জীবন দিতে হতো না!
আমার পয়েন্ট ছিল, যেদিন হাতের আঙুল ভাঙে সেদিনই আমি বুঝতে পেরেছিলাম এ বিয়ে অলরেডি টক্সিক হয়ে গেছে! কিন্তু আমরা জীবনের প্রায় আড়াই বছর একটা মরা গাছে পানি দিয়ে গেছি শুধু ‘মানুষ কী বলবে’ এটা ভেবে!
দ্বিতীয়ত, আমি বিবাহবিচ্ছেদের পর সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি আমার জীবনে যিনি ছিলেন তাকে সম্মান দেখাতে। যদিও উনার প্রতি আমার অভিযোগ রাগ-ক্ষোভ কোনোটারই অভাব নেই। আমি শিওর উনারও একই অনুভূতি! আমার বিশ্বাস উনিও সর্বোচ্চ সম্মান দেখাতেই চেষ্টা করেছেন!
এখন আঙুল ভাঙার বিষয়টা অবশ্যই সত্যি, কিন্তু এমন না যে বিষয়টা ও ইচ্ছে করেই করেছেন! রাগারাগির একপর্যায় হাতাহাতি হয়, তারপর আমার আঙুল ভেঙে যায়। তাহলে এখন উনি অস্বীকার কেন করছেন? হঠাৎ এমন পাবলিক প্রতিক্রিয়া হলে আপনি কি করবেন? আপনিও ডিনাই করবেন!
তৃতীয়ত, নিউজে আমার নামের সঙ্গে যার নাম বারবার আসছে তিনি বিষয়টা অস্বীকার করছেন; আর এত বছর পর যেহেতু কথা উঠছে, তখন প্রমাণ করা যথেষ্ট কষ্টসাধ্য। কিন্তু হাসপাতালের সিসি ক্যামেরা ফুটেজ কিংবা বিল কার কার্ড থেকে পরিশোধ হয়েছে সেগুলো বের করার সুযোগ এখনও আছে। কিন্তু এখনও যেহেতু সেই ব্যক্তির মা কল করলে আমি তাকে এখনও ‘মা’ ছাড়া অন্য কিছু ডাকতে পারি না, তাই মা এবং আমার নিজের সম্মান রক্ষার্থে বিষয়টা এখানেই শেষ করতে চাই!
পুরোনো বিষয় ঘেঁটে কিচ্ছু পাব না আমরা দুজন। এই বিষয় নিয়ে আলোচনা করার ইচ্ছা থাকলে বিচ্ছেদের সময়ই আমি এত প্রেম না দেখিয়ে এসবই বলতাম। হয়তো তখন আমি যেসব সমালোচনা হজম করেছি তা করতে হতো না। লাভটা আমারই হতো।
চতুর্থত, কোথায় যেন সংবাদ দেখলাম এতদিন পর জানা গেলো কী কারণে বিচ্ছেদ হয়েছে আমাদের, এই ঘটনাই নাকি কারণ। বুঝলাম এখনও সবার খুব জানার আগ্রহ আমাদের বিচ্ছেদের কারণ কী! আমাদের আসলে সে অর্থে কখনও সংসারই করা হয়নি। কারণ আমাদের নিজেদের কখনও কোনো বাসা ছিল না!
ওদের তিন বেডের বাসায় ওর মা ওরা চার ভাই, ভাবি, ভাতিজি এবং দুইজন বুয়া থাকতেন! সেখানে আমার থাকার জন্য যে ঘর বরাদ্দ ছিল সেটার সঙ্গে অ্যাটাচড কোনো ওয়াশরুম ছিল না। ওর মার বেডরুমে ৭ জনের সঙ্গে ওয়াশরুম শেয়ার করতে হতো। তাই আমি খুব বেশিদিন সেই বাসায় থাকিনি। আমরা তিন বোনের এত ছেলেদের ঘরে অ্যাডজাস্ট করতে সমস্যা হতো। তাছাড়া আমার শুটিংয়ের জন্য অনেক কস্টিউম/প্রপস অনেক কিছু থাকে। আলাদা একটা কস্টিউম রুমই লাগে!
আর আমার মায়ের বাসা আর তাদের বাসা কাছাকাছি হওয়ায় এবং দুজনেরই বাবা না থাকায় আমরা দুজন দুজনের মার সঙ্গে থাকতেই স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতাম! ফলে স্বাভাবিক নিউ ম্যারিড কাপলের মধ্যে যেসব ইন্টিমেসি থাকে তা আমাদের মধ্যে ছিল না! মূলত এই কারণেই আমরা আলাদা হওয়ার সিদ্ধান্তে আসি।
পঞ্চমত, এতদিন পরে এ কথা উঠল কেন? উত্তর ‘আমার দোষ’! আমি অতি আবেগী হয়ে ঘরের কথা পরকে জানিয়েছি। এভাবে একটা পাবলিক প্ল্যাটফর্মে লেখার আগে এটার ফলাফলগুলো আমার ভাবার দরকার ছিল! কিন্তু একটা বিষয় না বললেই নয়, অনেকের মন্তব্য আমার সেই বিচারপতির মতো লাগছে যিনি বলেছিলেন রেপ হওয়ার তিনদিন পর কেন কেইস করেছে? আরও আগে করা উচিত ছিল।
তবে এ বিষয়টা নিয়ে তখনও আমি আমার ব্যক্তিগত ফেসবুকে লিখেছিলাম যেখানে আমাদের দুই পরিবারের সদস্যরাই ছিল। কিন্তু পাবলিক প্রোফাইলে এসব লিখলে কী হয় তা তো এবার দেখলামই! জোর করে একজনকে ভিলেন বানাতে হবেই! অথচ এখান থেকে শিক্ষণীয় কিছু হতে পারতো, আমাদের মতো যেন কেউ জীবনের মূল্যবান সময় এভাবে নষ্ট না করে।
এবার আশা করি সবাই সবার সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। যেহেতু শুরুটা আমাকে দিয়ে শেষটাও আমি টানতে চাই। সবার দোয়া চাই। আমাদের প্রতি একটু সহনশীল হোন। আমরা দুজনই আমাদের জীবনে অনেকখানি এগিয়ে নিয়েছি। দুজনই নতুন করে জীবন শুরু করার মানসিকতার মধ্যে যাচ্ছি! আমার কোনো বিষয়ে দয়া করে ওই ভদ্রলোককে টানবেন না! শুনেছি উনি এখন ভালো আছেন। শান্তি মতো ঘুমাচ্ছেন। উনাকে শান্তি মতো ঘুমাতে দেন।”