আমি এইসব গ্রুপ-ট্রুপকে পাত্তা দেই না: জাকারিয়া সৌখিন
জাকারিয়া সৌখিন একজন নাট্যকার ও নির্মাতা। দীর্ঘদিন নাটক নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত আছেন। তার নির্মিত নাটকগুলো দর্শকরা গ্রহন করেছে। বিশেষ করে ভিউয়ের বিচারেও তার নাটক আলোচিত। এসব বিষয় ও অন্যান্য প্রসঙ্গে ঢাকাপ্রকাশ-এর সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনার নতুন নাটক ‘আই অ্যাম সিঙ্গেল’ মাত্র ১৫ দিনে কোটি ভিউ অতিক্রম করেছে। কেমন লাগছে?
জাকারিয়া সৌখিন: অবশ্যই ভালো লাগছে। দর্শকের ব্যাপক সাড়া পেয়ে খুশিতে বাকবাকুম অবস্থা আমার। কারণ, আমি বরাবরই দর্শকের জন্য কাজ করি। সুতরাং আমার কাজ যত দ্রুত বেশি সংখ্যক দর্শক গ্রহণ করবে, ভালো লাগা ততই বেড়ে যাবে।
ঢাকাপ্রকাশ: কী কারণে নাটকটি দর্শকরা এত পছন্দ করছেন?
জাকারিয়া সৌখিন: আমার ধারণা ৩টি কারণে। বর্তমান সময়ের গল্প, উপস্থাপন স্টাইল এবং আফরান নিশোর অনবদ্য অভিনয়। সবকিছু মিলিয়ে দর্শকের পালস কানেক্ট করেছে।
ঢাকাপ্রকাশ: নাটকটি নিয়ে কিছু মিশ্র প্রতিক্রিয়াও দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে ফেসবুকে বিভিন্ন গ্রুপগুলোতে-
জাকারিয়া সৌখিন: হ্যাঁ, আমিও শুনেছি। কিন্তু, আমি এইসব গ্রুপ-ট্রুপকে পাত্তা দেই না। আপনি খেয়াল করলে দেখবেন, যেসব নাটক নিয়ে এই গ্রুপগুলোতে তুমুল আলোচনা হয়, প্রশংসা করে ফাটিয়ে ফেলা হয়, সেই নাটকগুলো মূলত ফ্লপ। দর্শক গ্রহণ করে না। এরা যেসব নাটকের সমালোচনা করে সেগুলো সাধারণ দর্শকের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। সুতরাং আমি ১৮ কোটি মানুষের জন্য নাটক নির্মাণ করি, এইসব গ্রুপ-ট্রুপের ২/৩ জনের জন্য না।
ঢাকাপ্রকাশ: ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং মনে হচ্ছে। একটু ব্যাখ্যা করবেন?
জাকারিয়া সৌখিন: আমার কথা বাদ দিন। ব্যাখ্যা করার জন্য আমি অন্য একজন নির্মাতার উদাহরণ দিচ্ছি। তিনি বর্তমানে জনপ্রিয় নির্মাতাদের একজন। তিনি হলেন কাজল আরেফিন অমি। সত্যি বলতে, অমি জনপ্রিয়তায় আমাদের সবার উপরে আছে। খেয়াল করলে দেখবেন, অমি গ্রুপগুলোতে সবচাইতে বেশি সমালোচিত। অথচ সে সবচাইতে জনপ্রিয়। কিন্তু গ্রুপগুলোতে যারা খুব প্রশংসিত তারা মূলত অজনপ্রিয়। দর্শকের কাছাকাছি পৌঁছাতে তারা ব্যর্থ।
ঢাকাপ্রকাশ: এর কারণ কী?
জাকারিয়া সৌখিন: কারণ দুইটা। প্রথম কারণ, যেই নাটক সবাই পছন্দ করে, এনজয় করে, এইসব অহেতুক সমালোচনাকারীরা তাদের বিপক্ষে গিয়ে বোঝানোর চেষ্টা করে আমি ব্যতিক্রম, আমি আলাদা, আমার রুচি সবার মতো না। এটাকে তারা ভাব মনে করে। অথচ সমালোচনা লিখতে গেলে এদের বানান ভুল থাকে, বাক্য গঠন ভুল থাকে, ব্যাকরণ তো জানেই না। তারমানে এদের শিক্ষা-দীক্ষায়ও গলদ আছে।
আর দ্বিতীয় কারণ, অজনপ্রিয় নির্মাতাদের নিয়ে লিখলে তারা লেখায় লাইক দেয়, শেয়ার করে এতে সমালোচনাকারীরা নিজস্ব ফ্রেন্ডসার্কেলে ভাব নিয়ে বলতে পারে, অমুকে আমার লেখা শেয়ার দেয়। তাই নিজের দাম বাড়ানোর জন্য তারা লেখা আরও বাড়িয়ে দেয়। এদিকে অজনপ্রিয় নির্মাতারা নিজেদের কাজ প্রশংসিত হচ্ছে মনে করে লাইক-শেয়ারও বাড়িয়ে দেয়। এভাবেই দু’পক্ষের সুবিধামতো সমোঝোতা বা হিসেব-নিকেষে ব্যাপারটা চক্রাকারে চলতে থাকে।
ঢাকাপ্রকাশ: তাহলে কি সমালোচনা থাকবে না?
জাকারিয়া সৌখিন: অবশ্যই থাকবে। সমালোচনা না থাকলে শুদ্ধতার চর্চা কীভাবে হবে! কিন্তু সমালোচনাকারীদের সমালোচনা করার যোগ্যতা থাকতে হবে। ধরুন সমালোচনা যদি প্রথমসারির গণমাধ্যমে হয় সেটা অবশ্যই গ্রহণ করা যায়। কিন্তু গ্রুপ-ট্রুপ কী! অযথা, ফালতু।
ঢাকাপ্রকাশ: ‘আই অ্যাম সিঙ্গেল’ই তো আপনার দ্রুততম কোটি ভিউয়ের নাটক?
জাকারিয়া সৌখিন: হ্যাঁ। গত ঈদে আমার একটি নাটক ছিল ‘ভুলো না আমায়’ নামে। ওটাও দর্শক তুমুলভাবে গ্রহণ করেছিলেন। ওটার ভিউ ১৬ দিনে কোটি হয়েছিল।
ঢাকাপ্রকাশ: আপনার নির্মিত অনেক নাটকই জনপ্রিয় হয়েছে। তারপরও মিডিয়াতে আপনি সরব নন কেন?
জাকারিয়া সৌখিন: আমি লজ্জাবতী লতা টাইপের চরিত্র। গুটিয়ে থাকি, লুকিয়ে থাকি। পরিচিতরা আমাকে গর্তজীবি বলে ডাকেন। অথচ এখন প্রচারের যুগ। তাই ভাবছি, শামুকের মতো গুটিয়ে থাকব না আর। যেহেতু আমার নির্মাণ সাধারন মানুষ পছন্দ করছে, তাই তাদের সঙ্গে কানেক্টিভিটি তৈরি করব। এখন আমার মূলমন্ত্র একটাই-থাকব নাকো বদ্ধ ঘরে, দেখব এবার জগৎটাকে...।
ঢাকাপ্রকাশ: টেলিভিশন পেরিয়ে ইউটিউবে নাটক দেখার জন্য দর্শকরা ঝুঁকছে বেশি। টেলিভিশনের চেয়ে ইউটিউবে নাটক নির্মাণে কি নির্মাতারা বেশি স্বাধীন?
জাকারিয়া সৌখিন: হ্যাঁ। অবশ্যই। আর এ কারণেই নির্মাতারা এখন অনেক স্বাচ্ছন্দ্যে নাটক নির্মাণ করতে পারছেন। আমার বিশ্বাস এই স্বাধীনতার কারণেই আমাদের নির্মাণে বর্তমান সময় আরও পরিস্কারভাবে ফুটে উঠবে।
ঢাকাপ্রকাশ: নতুন কাজের খবর বলুন।
জাকারিয়া সৌখিন: বেশকিছু কাজের পরিকল্পনা করছি, স্ক্রিপ্ট লিখছি। দ্রুত শুটিংয়ে যাব।
ঢাকাপ্রকাশ: নাটকের সিন্ডিকেটের কথা অনেকদিন থেকেই শোনা যাচ্ছে। আপনার কী মনে হয়?
জাকারিয়া সৌখিন: এগুলো শুধু আওয়াজ। এখানে খাদ্যদ্রব্যের মতো পণ্য আটঁকিয়ে দাম বাড়ানোর কোনো ব্যবস্থা নেই, কালো টাকা সুইস ব্যাংকে পাচারের কোনো আয়োজন নেই আর রাজনৈতিক বিবেচনায় ঠিকাদারি পাওয়ার কোনো সম্ভবনা নেই। তাহলে সিন্ডিকেট কেন থাকবে? এখানে সবাই শিল্পী। এখানে শিল্পচর্চা হচ্ছে। দর্শকদের কাছে যাদের গ্রহণযোগ্যতা বেশি তারা বেশি সুফল পাচ্ছেন, যাদের গ্রহণযোগ্যতা কম তারা সুফল কম পাচ্ছেন। সিন্ডিকেট একটা অহেতুক টার্ম। অনেকেই দর্শকদের কাছাকাছি পৌঁছাতে না পেরে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য সিন্ডিকেট টার্ম ব্যবহার করেন। এটা তাদের আত্মরক্ষার ঢাল।
এএম/এমএমএ/