ওবায়দুল কাদেরকে ঘুম পাড়ানো প্রসঙ্গে যা বললেন জাহারা মিতু
ছবি: সংগৃহীত
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের শাসনামলে একাধিক অনুষ্ঠানে সাবেক সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের সঙ্গে চিত্রনায়িকা জাহারা মিতুদেখা গেছে। মিতুর সিনেমার মহরত থেকে বই প্রকাশনা—সবখানেই উপস্থিত থাকতেন তিনি। এমনকি ওবায়দুল কাদেরের ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে গণমাধ্যমের সম্পাদকদের ফোন করানোর অভিযোগও রয়েছে। এবার বেশ কিছু গণমাধ্যমে তাদের সম্পর্কের রসায়ন নিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এরপর থেকেই নেটিজেনদের আলোচনায় উঠে এসেছেন তারা।
একটি গণমাধ্যম লিখেছে, ‘নায়িকা জাহারা মিতুর স্পর্শ ছাড়া ঘুমাতেন না ওবায়দুল কাদের।’ অন্য একটি গণমাধ্যম তাদের খবরের শিরোনাম রেখেছে, ‘ওবায়দুল কাদেরকে ঘুম পাড়িয়ে ফিরতেন নায়িকা জাহারা মিতু!’
তবে এসব সংবাদকে ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন জাহারা মিতু। তিনি বললেন, ‘গতকাল থেকেই ফেসবুকে অনেকে মেসেজ দিয়ে এ বিষয়ে জানতে চাইছেন, কী বলব আমি? এসব সংবাদের ব্যাপারে কেউ আমার মন্তব্য জানতে চাননি। আমার সঙ্গে যোগাযোগও করেননি। এটা কি সাংবাদিকতা? শিরোনাম দেখার পর নিউজে কী বলা হয়েছে, তাও দেখার রুচি হয়নি।’
যোগ করে আরও বলেন, ‘আমার সঙ্গে কি ওবায়দুল কাদের ভাইয়ের কোনো সিঙ্গেল ছবি আছে? সবই গ্রুপ ছবি। যে ছবিগুলো প্রকাশ পেয়েছে সেগুলো সিনেমার মহরত বা বইয়ের মোড়ক উন্মোচনের সময়ে তোলা। তখনকার সময়ে রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি ছিলেন। থাকতেন মন্ত্রীপাড়ায়। সেখানে কি রাত-দিন আসা-যাওয়া করা সম্ভব? যদি এমনই হতো তবে কি কারও চোখে পড়তাম না? সেসময়ে শুধু ওবায়দুল কাদের নন, গুরুত্বপূর্ণ এমন আরও অনেকের সঙ্গেই আমার ছবি রয়েছে। তাদের মতো মানুষের সঙ্গে দেখা হলে ছবি তুলব, এই তো স্বাভাবিক।’
২০১৯ সালে রাজধানীর সোনারগাঁ হোটেলে মহরত হয়েছিল বদিউল আলম খোকন পরিচালিত ‘আগুন’ ছবির। সেখানেই প্রথম দৃশ্যপটে আসেন ওবায়দুল কাদের-জাহারা মিতু।
আওয়ামী লীগের এই সেতুমন্ত্রীর সঙ্গে পরিচয় কীভাবে—জানতে চাইলে মিতু বলেন, ‘আগুন সিনেমার মহরতেই প্রথমবার উনাকে (ওবায়দুল কাদের) দেখি। এর আগে কখনও তার সঙ্গে দেখা হয়নি। তখন নতুন একজন নায়িকা হিসেবে আমার প্রতি তাঁর সফট কর্নার তৈরি হতে পারে। সে হিসেবেই বিভিন্ন সময়ে তাঁকে আমন্ত্রণ জানালে পাশে পেয়েছি। এর বেশি কিছু না।’
এ ছাড়া সেই ‘আগুন’ ছবির মহরতে ক্ষমতাচ্যুত সরকারের মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসান। তার ব্যাপারে জানতে চাইলে মিতু বলেন, ‘মহরতের সময় শুধু আমি ওবায়দুল কাদেরকেই চিনতাম, সেখানে যে আরও একজন মন্ত্রী আছেন—সেটা জানতাম না। পরে মাহি আপুর (মাহিয়া মাহি) ওই কল রেকর্ডের বিষয়টি যখন আলোচনায় আসে, তখন জানতে পারি যে তিনি মুরাদ হাসান। এর আগে তার সম্পর্কে জানতাম না।’
মিতু জানালেন, গণমাধ্যমে ওবায়দুল কাদেরকে জড়িয়ে এভাবে সংবাদ প্রকাশে তাঁর পরিবারের লোকজন বিব্রত। তিনি মানহানির মুখে পড়েছেন।
পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও মঙ্গলবার (৩ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এ ব্যাপারে একটি দীর্ঘ পোস্ট দিয়েছেন চিত্রনায়িকা। তিনি লিখেছেন, ‘‘সালটা ২০১৭, মিস বাংলাদেশ হিসেবে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশের পতাকা তুলে ধরলাম, মিডিয়ায় কাজ করিনি তখনও। কোনো সিঙ্গেল কাজই না। একটি গ্রুপের ডিপার্টমেন্ট হেড হিসেবে কাজ করছি তখন। একদিন ঘুম থেকে উঠলাম আমার বেস্টফ্রেন্ড কারিমুর রহমানের কলে, ‘এই মিতু তুমি আমি নাকি রিলেশনশিপে আছি, আমার আম্মা নিউজ দেখে আমাকে কল দিয়ে বললো।’ চোখ ডলতে ডলতে বললাম, ‘এ আবার নতুন কী? দুই ফ্রেন্ড মানেইতো মানুষ এটা ভাবে, কিন্তু আন্টিকে এই প্যাঁচ কে লাগাইলো? বলে, ‘লিঙ্ক দিচ্ছি, একটা নিউজ দেখ। তুমি আমি নাকি বয়ফ্রেন্ড-গার্লফ্রেন্ড। আমরা নাকি লুকায় লুকায় রেস্টুরেন্টে দেখা করি।’ এখন যাও দু-চারজন চেনে, তখন কাক-পক্ষীও চিনত না। তবে ওই থেকে শুরু। হলুদ সাংবাদিকতা তখন থেকেই আমার সঙ্গী!’’
ওই পোস্টে এই নায়িকা আরও লেখেন, ‘দেশের সর্বোচ্চ একজন মন্ত্রীকে, মন্ত্রীপাড়ায় প্রতিদিন ঘুম পাড়ানোর নিউজ কোনো মেয়াদোত্তীর্ণ সবজি সেবনের ফলেই লেখা যায়। এর থেকে হাস্যকর নিউজ আমি আমার বাপের জন্মে দেখিনি। সত্যিই দেখিনি। এতো হেসেছি আমি নিজে, মানুষ আর কতটুকু হাসবে! কোনো সোর্স নেই, আমার বক্তব্য নেই, কোনো প্রমাণ নেই আর আমার নাম ডিরেক্ট (সরাসরি) লিখে দিলেন?’