‘পরাজয় মেনে নিয়েছি, বিচার পাইনি’, সুশান্তের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে বোন শ্বেতা
বড় বোন শ্বেতার সঙ্গে সুশান্ত সিং রাজপুত। ছবি: সংগৃহীত
চার বছর আগে আজকের দিনে না ফেরার দেশে পাড়ি জমিয়েছিলেন বলিউড অভিনেতা সুশান্ত সিং রাজপুত। ২০২০ সালের ১৪ জুন বান্দ্রার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে উদ্ধার হয়েছিল তাঁর মরদেহ। আজও তাঁর অনেক অনুরাগী বিশ্বাস করতে পারেন না সুশান্ত আর নেই।
ঠিক কী কারণে আত্মঘাতী হলেন তিনি? আদৌ সুশান্ত আত্মহত্যা করেছিলেন তো? এজাতীয় প্রশ্ন আজও ঘুরপাক খায় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আজও তাঁর ভক্তরা সুশান্তের মৃত্যুর প্রকৃত কারণ জানতে চান। সুবিচারের অপেক্ষায় রয়েছেন তাঁর পরিবার।
ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছেন সুশান্তের বড় বোন শ্বেতা সিং। প্রয়াত অভিনেতার মৃত্যুবার্ষিকীতে ইনস্টাগ্রামে সুশান্তের অপ্রকাশিত একটি ভিডিও পোস্ট করেছেন তিনি। যেখানে অভিনেতাকে বোনেদের সঙ্গে সময় কাটাতেও দেখা যাচ্ছে। আবেগপূর্ণ ক্যাপশনের সঙ্গে ভাইয়ের জন্য আবারও বিচার চেয়েছেন শ্বেতা।
শ্বেতা লিখেছেন, ‘ভাই, তুমি চলে যাওয়ার চার বছর হয়ে গেছে। আমরা এখনও জানি না ২০২০ সালের ১৪ জুন ঠিক কী ঘটেছিল। তোমার মৃত্যু রহস্যই রয়ে গেছে।’
সেদিন কী ঘটেছিল তা তদন্তের জন্য বিভিন্ন মহলের কাছে অনুরোধ করেছিলেন শ্বেতা। তবে তিনি মনে করেন কোন এক অদৃশ্য শক্তির কারণে কিছুই এগোয়নি। তবে তিনি যে হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন, সে কথাও জানান।
শ্বেতা লিখেছেন, ‘ভাই আমি বেশ অসহায় বোধ করছি। সত্যের জন্য বহুবার কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। আমি ধৈর্য হারিয়ে ফেলছি, হাল ছেড়ে দেওয়ার অবস্থা। কিন্তু আজ, শেষবারের মতো, আমাকে এ বিষয়ে সাহায্য করতে পারেন এমন মানুষদের বলতে চাই, নিজেদের বুকে হাত রেখে প্রশ্ন করুন, আমার ভাই সুশান্তের কী হয়েছিল তা এখনও কেন আমরা জানতে পারিনি? কেন এটি একটি রাজনৈতিক অ্যাজেন্ডা হয়ে উঠেছে? সেই দিন যা ঘটেছিল তা বলার মতো সাহস কি কারও নেই? আপনাদের কাছে অনুরোধ, আমাদের পরিবারকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করুন।’
অন্য আরেকটি পোস্টে শ্বেতা লিখেছেন, ‘এই নিষ্ঠুর পৃথিবীতে এত বড় মনের হওয়া কি তাঁর ভুল ছিল? সুশান্তের সঙ্গে অবিচারের ৪ বছর অতিবাহিত হয়েছে। সত্যিই কি তাঁর কপালে এটা ছিল?’
২০২০ সালের ১৪ জুন, সুশান্ত সিং রাজপুতকে তাঁর মুম্বাই অ্যাপার্টমেন্টে মৃত অবস্থায় পাওয়া যায়। কেউ কেউ এই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে দাবি করলেও, প্রশ্ন থেকে গেছে। এরপর থেকে তাঁর বোন ন্যায়বিচারের জন্য লড়াই করছেন।
প্রথমে মুম্বাই পুলিশ ঘটনার তদন্ত শুরু করে। সে সময় ময়নাতদন্তের রিপোর্টে আত্মহত্যার তত্ত্বের ওপরই জোর দেওয়া হয়। এরপরই সুশান্তের পরিবারের পক্ষ থেকে রিয়া চক্রবর্তী-সহ পাঁচজনের বিরুদ্ধে পাটনা পুলিশের কাছে অভিযোগ দায়ের করা হয়। ২০২০ সালের ১৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট সিবিআইকে সুশান্ত মৃত্যুর মামলার দায়িত্ব নেওয়ার অনুমোদন দেয়।
সিবিআই মামলার তদন্ত শুরু করার পর সুশান্তের ময়নাতদন্ত ও ভিসেরা রিপোর্ট নতুন করে খতিয়ে দেখেন এইমসের বিশেষজ্ঞরা। জানানো হয়, অভিনেতার শরীরে অস্বাভাবিক কোনও লক্ষ্মণ দেখা যায়নি। সংস্থাটির ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সুধীর গুপ্ত জানিয়ে দেন, আত্মহত্যাই করেছেন বলিউড অভিনেতা। কিন্তু তারপরও সিবিআই আরও কয়েকটি বিষয় খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়। কিন্তু সেই তদন্তের চার্জশিট এখনো জমা পড়েনি।
আত্মহত্যা কিংবা হত্যা তা নিশ্চিত না হলেও এটা নিশ্চিত, শেষ সময়টায় বেশ হতাশায় কেটেছে সুশান্তর। একেকটা সিনেমা হাত থেকে ছুটে যাওয়া, ফিল্ম পলিটিকস সবকিছু মিলিয়ে বলিউডে কোণঠাসা করে রাখা হয়েছিল সুশান্তকে।
কোনো গডফাদার ছাড়াই শুধু নিজের অভিনয় প্রতিভা দিয়ে সুশান্ত পেয়েছিলেন দর্শকপ্রিয়তা। অ্যাওয়ার্ড অনুষ্ঠান থেকে বলিউড পার্টি-সবকিছু থেকে দূরে রাখা হতো তাঁকে। এর পরেও টিভি থেকে বড় পর্দা কাঁপিয়েছিলেন বিহারের ছেলে সুশান্ত।
একতা কাপুরের হিট মেগা ‘পবিত্র রিস্তা’য় অভিনয় করে দর্শকপ্রিয়তা পেয়েছিলেন সুশান্ত। এরপর সিনেমায় পা রাখেন ‘কাই পো চে’ দিয়ে। ‘এমএস ধোনি’, ‘ব্যোমকেশ বক্সী’, ‘কেদারনাথ’, ‘ছিছোড়ে’র মতো সিনেমা দিয়ে তিনি আজও রয়ে গেছেন দর্শক মনে।