শাবিপ্রবিতে কাফনের কাপড় পরে 'লাশ' নিয়ে মিছিল
সামনে সাদা কাফনে মোড়ানো একটি লাশ, এর পেছনে গায়ে-মাথায় সাদা কাপড় পরে দাঁড়িয়ে আছেন কয়েকশ শিক্ষার্থী। সকলে যেন এক-একটি জীবন্ত লাশ! এ যেন প্রখ্যাত নাট্যকার মুনীর চৌধুরী 'কবর' নাটকের দৃশ্য।
শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে অনশন কর্মসূচির চতুর্থ দিন শনিবার (২২ জানুয়ারি) বিকাল ৩টায় শিক্ষার্থীদের প্রতিবাদী রূপ এমনটি ছিল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বরে প্রথমে প্রায় ১০ মিনিট নীরব দাঁড়িয়ে থেকে শিক্ষার্থীরা জানান মৌন প্রতিবাদ। এর পর কারও সঙ্গে কোনো কথা কিংবা শ্লোগান ছাড়াই 'মৌনমিছিলটি' কাফনে মোড়ানো একটি লাশ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের চেতনা-৭১ পর্যন্ত প্রদক্ষিণ করে। সেখানে কয়েক মিনিট অবস্থানের পর আবার লাশ বহন করে নিয়ে আসা হয় গুল চত্বরে। সেখানে অন্তত ১০ মিনিট লাশ সামনে রেখে গোল হয়ে বসেন শিক্ষার্থীরা। এরপর শেষ হয় মিছিলটি।
তবে 'মৌনমিছিল' চলমান সময়ে কোনো শ্লোগান না হলেও শেষে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয়, 'চার দিন থেকে ২৪টি মানুষ অনশন করছে। তাদের জীবন হুমকির মুখে রেখে উপাচার্য এখনও দায়িত্ব আঁকড়ে বসে আছেন। সুতরাং আমরা তার নতুন নাম দিচ্ছি ‘বিশ্ব বেহায়া দ্য সেকেন্ড’। এমনকি প্রথম বেহায়াদের মতো তাকেও সরিয়ে দেওয়া হবে। সকল শিক্ষার্থী মারা গেলেও এই নির্লজ্জ উপাচার্যের পদত্যাগ দাবির আন্দোলন থামবে না।'
এদিকে দীর্ঘ সময়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছেন অনশনে থাকা ২৪ শিক্ষার্থী। এর মধ্যে এ প্রতিবেদন লেখা পর্যন্ত বেলা আড়াইটায় ১৬ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা গুরুতর।
অনশনরতদের চিকিৎসা সহায়তার কাজে নিয়জিত চিকিৎসক দলের প্রধান নাজমুল হাসান বলেন, ‘যারা হাসপাতালে ভর্তি তাদের মধ্যে দুজনের শ্বাসকষ্ট থাকায় নেবুলাইজেশন দিতে হচ্ছে। একজনের অবস্থা খুব খারাপ। সে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি। ওখানকার বিভাগীয় প্রধান জানিয়েছেন মুখে খাবার দিতে না পারলে বড় ধরনের সমস্যা হতে পারে। অপর একজনের অবস্থা খারাপের দিকে। এছাড়া অনশনস্থলে যারা আছেন তারাও অসুস্থ। এ অবস্থায় থাকলে তাদের শরীর আরও খারাপের দিকে যাবে।’
এদিকে গতকাল শুক্রবার বিকালে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বলেন। এ সময় শিক্ষামন্ত্রী ঢাকায় গিয়ে আলোচনা করতে শিক্ষার্থীদের অনুরোধ করলে শিক্ষার্থীরাও সম্মত হন। তার কিছু সময় পর পরিবর্তন হয় সিদ্ধান্ত। শিক্ষার্থীরা ঢাকায় গিয়ে কথা বলতে অসম্মতি জানান এবং অনলাইন মাধ্যমে আলোচনার প্রস্থাব দেন।
তবে শিক্ষার্থীরা ঢাকায় না গেলেও সৃষ্ট সমস্যার ব্যাপারে আলোচনা করতে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল এখন ঢাকায় অবস্থান করছেন। তারা শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) রাতে ঢাকায় পৌঁছান।
এর আগে গত বুধবার বিকাল ৩ টায় উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আমরণ অনশন শুরু করেন ২৪ শিক্ষার্থী। এর পর থেকে বিভিন্ন পক্ষ থেকে সমঝোতার চেষ্টা চালানো হলেও শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ে অনড়।
এসইউ/এএন