শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণা
বরিশালে শিক্ষার্থীদের বিরূপ প্রতিক্রিয়া
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ঘোষণায় বিরূপ প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন বরিশালের বিভিন্ন স্তরের শিক্ষার্থীরা। করোনাভাইরাস প্রতিরোধে দেশে নতুন করে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে সরকার। তারই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার (২১ জানুয়ারি) স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক আগামী দুই সপ্তাহ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখার ঘোষণা দেওয়ার পর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন শিক্ষার্থীরা।
বিনোদনব্যবস্থা, পার্ক-উদ্যান, বাজার, কমিউনিটি সেন্টার, শপিংমলে কোনো প্রকার নিষেধাজ্ঞা আরোপ না করে শুধুমাত্র শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করার সিদ্ধান্তে তাদের মধ্যে এই বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়।
এদিকে ঘোষণা অনুযায়ী, স্কুল-কলেজ, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়সহ সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে চলমান ক্লাস এবং পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। শুধুমাত্র জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অনার্স ৪র্থ বর্ষের ফাইনাল পরীক্ষা চলমান থাকবে।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুজয় শুভ বলেন, 'শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করার বাস্তবতা থাকতে পারে কিন্তু এতে লাখো শিক্ষার্থীর শিক্ষা জীবনে যে অনিশ্চয়তা তৈরী হবে সেটাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। অনেক ডিপার্টমেন্টের ফাইনাল চলছে, এই মুহুর্তে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ মানে সত্যিকার অর্থেই একটা শিক্ষাবর্ষ শেষ। আর দুই সপ্তাহের ছুটি শেষ পর্যন্ত কত সপ্তাহে গিয়ে শেষ হবে সেটাও চরম অনিশ্চিত একটা ব্যাপার। আমরা আসলেই ক্লাস-পরীক্ষা কার্যক্রম নিয়ে কি ভাবছি সেটা প্রশাসনের সাথে আলাপ করা দরকার।' বিচ্ছিন্ন-বিক্ষিপ্তভাবে দাবী না করে সকলের মতামতের ভিত্তিতে এই ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশাসনের সাথে কথা বলার জন্য শিক্ষার্থীদের প্রতি আহ্বান জানান ববি-শিক্ষার্থী শুভ।
এদিকে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রী পরীক্ষার্থী স্বর্ণা দাস জানান, চলমান পরীক্ষা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের ঘোষণার কারণে বিপর্যস্ত হয়ে পরেছে পরীক্ষার্থীরা।
ইসলাম ছাত্র আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয় সম্পাদক মাহাবুব হোসেন প্রশ্নসূচক মন্তব্য করে বলেন, 'মার্কেট, বাস, লঞ্চ, ট্রেন সহ সরকারি কার্যক্রম সবই চালু রেখে শুধু ক্যাম্পাস বন্ধ রাখার মানে কি? আমার জানামতে অনেক ক্যাম্পাসের প্রায় বিভাগের সর্বশেষ ফাইনাল পরীক্ষা শেষের পথে। সরকার হঠাৎ করে অযাচিত সিদ্ধান্ত দিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছে? শিক্ষার্থীরা জাগলে জাগবে আমাদের শিক্ষা কার্যক্রম।'
সরকারী মহিলা কলেজের শিক্ষার্থী ঐশ্বর্য বিশ্বাস তুলি জানান, অনলাইনে ক্লাস হবার বিষয়টি কখনোই সশরীরে ক্লাস করার পরিপূরক হতে পারে না। তারপরও শিক্ষাব্যবস্থা চালু রাখতে হলে অনলাইনে ক্লাস চালিয়ে নিতে হবে।
স্কুল-কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান পরীক্ষাগুলো অন্তত স্থগিত না করার অনুরোধ জানিয়ে বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজের শিক্ষার্থী মো: হাসান আলী বলেন, 'অমিক্রনের কারণে ইতিমধ্যে ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা চলমান কিন্তু ২য় ও ৩য় বর্ষের পরীক্ষার রুটিন স্থগিত। এক ইয়ারে ৪ বছর হয়ে গিয়েছে। অনলাইন বা যে কোনো উপায়ে পরীক্ষা নেয়া হোক। প্রয়োজনে পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে আন্দোলন করতে রাস্তায় নামব।'
এদিকে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের ছাত্র কুষ্টিয়া জেলা ছাত্রকল্যাণ সংঘের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক মো: হাসিবুর রহমান হাসিব কোনোভাবেই বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম বন্ধ না করে ভর্তি, হল এবং পরীক্ষা চলমান রাখার দাবি জানান।
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ড. মো: খোরশেদ আলম ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয়ে সশরীরে পাঠদান বন্ধ হলেও আমরা অনলাইনে শিক্ষাকার্যক্রম চালিয়ে নেবার কথা ভাবছি। চলমান পরীক্ষাগুলো স্বাস্থ্যবিধি মেনে নেওয়া হয় কি না সে বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলের সভার পর সিদ্ধান্ত জানানো হবে।'
তিনি আরও জানান, শিক্ষার্থীদের জন্য যেটি ভালো হয় সেই সিদ্ধান্তই নেওয়া হবে এবং সিদ্ধান্ত শিক্ষার্থীদের পক্ষেই থাকবে বলে আশ্বস্ত করেন তিনি।
সরকারি ব্রজমোহন কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, 'কোন পরিস্থিতিতেই ক্লাস এবং পরীক্ষা বন্ধ করা যাবে না। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে চলমান ৪র্থ বর্ষের অনার্স পরীক্ষা স্বাস্থ্যবিধি মেনেই নেয়ার ব্যবস্থা করা হবে। অন্যান্য শ্রেণির পরীক্ষাগুলোর জন্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী অনলাইন বা বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'
বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, প্রফেসর ড.সাদেকুল আরেফীন জানান, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় আগামীকাল একাডেমিক কাউন্সিলের মিটিং এর পর সিদ্ধান্ত জানাবে। তবে এটুকু নিশ্চিত করা যায়, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ হলেও সেশনজট কমাতে অনলাইনে ক্লাস এবং পরীক্ষাগুলো নেয়া হবে।
তিনি আরও জানান, 'শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য দুই-ই অপরিহার্য। যেহেতু করোনা একটি প্রাকৃতিক বিপর্যয়, এর সাথে মোকাবেলা করে যে করেই হোক আমাদের শিক্ষাব্যবস্থা সচল রাখতে হবে।'
কেএফ/