'ভুয়া, ভুয়া' শ্লোগানে শাবিপ্রবি শিক্ষকদের প্রত্যাখ্যান
'ভুয়া, ভুয়া' শ্লোগানের মুখে পিছু হটলেন শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (শাবিপ্রবির) শিক্ষকরা। শ্লোগানে শ্লোগানে তাদের প্রত্যাখ্যান করেন শিক্ষার্থীরা।
মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) বেলা সোয়া ৫টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক তুলসি কুমার দাস ও সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মুহিবুল আলমের নেতৃত্বে শিক্ষক সমিতির একটি প্রতিনিধি দল শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলতে গেলে তোপের মুখে পড়েন তারা।
এ সময় শিক্ষার্থীরা 'ভুয়া, ভুয়া' শ্লোগান দিতে থাকেন। এমনকি শিক্ষার্থীরা জানান, 'যারা শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করবেন কেবল তাদের কথাই শুনবেন। অন্য কারো কথা শুনবেন না।'
প্রায় ২০ মিনিট শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধি দল উপাচার্যের বাসভবনের সামনে দাঁড়িয়ে থাকার পর বাধ্য হয়ে কোনো কথা না বলেই ফিরে যায়।
এর আগে সকাল ১০টার দিকে শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের গোল চত্বর থেকে মিছিল শুরু করেন।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের পোস্টবক্সে রাষ্ট্রপতি বরাবর চিঠি প্রেরণ করবেন। এ চিঠিতে উপাচার্যের পদত্যাগের জন্য নির্ধারিত সময় বেঁধে দেওয়া হবে। এ সময়ে উপাচার্য পদত্যাগ না করলে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।
এদিকে, শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করে গণস্বাক্ষর দিয়েছেন সিলেট আওয়ামী লীগের নেতারা। পঞ্চমদিনের আন্দোলন চলাকালে দুপুর ১টার দিকে ক্যাম্পাসে যান তারা।
আওয়ামী লীগ নেতাদের মধ্যে ছিলেন- কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, সিলেট জেলা আওয়ী লীগের সহসভাপতি ও সিলেট সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আশফাক আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক মো. জাকির হোসেন, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বিধান কুমার সাহা প্রমুখ।
এ সময় তারা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক উল্লেখ করে একাত্মতা প্রকাশ করে গণস্বাক্ষরও দেন। সেই সঙ্গে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার আহ্বান জানান।
- শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে এবার পুলিশের মামলা
- অনির্দিষ্টকালের জন্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে বিধিনিষেধ
জানতে চাইলে সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক জাকির হোসেন বলেন, 'আমরা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাদের যৌক্তিক আন্দোলনে একাত্মতা প্রকাশ করেছি। এ সময় তারা গণস্বাক্ষর চাইলে আমরা দিই। আমরা উভয় পক্ষের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে এটি সমাধানে আনতে চাই।'
এদিকে গতকাল সোমবার ছিল শিক্ষার্থীদের এ আন্দোলনের চতুর্থ দিন। এদিন শিক্ষার্থী-পুলিশ অনেকটা মুখোমুখি অবস্থানে থাকলেও রাত ১১টার দিকে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে অতিরিক্ত পুলিশ সরিয়ে নেওয়া হয়। সেই সঙ্গে মূল ফটক থেকে পুলিশের সাজোয়া যান ও জল কামান সরানো হয়।
এর আগে গত বৃহস্পতিবার (১৩ জানুয়ারি) রাত থেকে সিরাজুন্নেছা ছাত্রী হলের প্রভোস্টের পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে ছাত্রীরা আন্দোলন শুরু করেন। এর এক পর্যায় রোববার (১৬ জানুয়ারি) দাবি আদায়ে ছাত্রীরা উপাচার্যকে অবরুদ্ধ করে রাখলে পুলিশ উপাচার্যকে উদ্ধার করতে গিয়ে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর লাঠিচার্জ করে, রাবার ব্যুলেট, টিয়ার গ্যাস নিক্ষেপ করে। শিক্ষার্থীরাও ইটপাটকেল নিক্ষেপ করলে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রকল্যাণ উপদেষ্টা ও কয়েকজন পুলিশ সদস্য আহত হন।
ওইদিন রাতেই পদত্যাগ করেন হল প্রভোস্ট। উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতিতে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয় বিশ্ববিদ্যালয়। দেওয়া হয় হল ছাড়ার নির্দেশ। কিন্তু শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশের হামলার প্রতিবাদে উপাচার্যের পদত্যাগ দাবিতে আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।
এসইউ/এমএসপি