জাবি ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ পেতে বহিষ্কৃত-অছাত্রদের দৌড়ঝাঁপ
দুই সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণার ১০ মাস পার হলেও পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়নি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগের। অবশ্য শিগগিরই কমিটি দেওয়া হতে পারে বলে জানিয়েছে ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সূত্র। ইতিমধ্যে পদপ্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। তবে কমিটিতে পদ পাওয়ার জন্য জীবন বৃত্তান্ত জমা দিয়ে দৌড়ঝাঁপের মধ্যে আছেন বেশ কয়েকজন বহিষ্কৃত ও অছাত্র।
জানা গেছে, চলতি বছরের ৩ জানুয়ারি পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের ৪২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আকতারুজ্জামান সোহেলকে সভাপতি এবং দর্শন বিভাগের ৪৩তম ব্যাচের শিক্ষার্থী হাবিবুর রহমান লিটনকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রলীগের আংশিক কমিটি ঘোষণা করা হয়। এরপর থেকেই মূলত পদপ্রত্যাশী নেতা-কর্মীদের দৌঁড়ঝাপ শুরু হয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদ পেতে অছাত্র, অনিয়ম এবং উশৃংখলতার কারণে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন থেকে নানা মেয়াদে বহিষ্কৃতরা মরিয়া হয়ে আছেন। তা ছাড়াও দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের দায়ে অব্যাহতিপ্রাপ্তরাও নিজেদের ছাত্রলীগের কর্মী বলে দাবি করছেন।
সূত্র আরও জানায়, গত ২০১৯ সালের ৩০ মার্চ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক কর্মচারীর জামাতাকে ছিনতাই, মারধর ও তুলে নিয়ে মুক্তিপণ দাবির অভিযোগে শাখা ছাত্রলীগের পাঁচ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই পাঁচজনের মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সরকার ও রাজনীতি বিভাগের মোহাম্মদ আল-রাজি ও কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের শাহ মোস্তাক আহমেদ সৈকত পদপ্রত্যাশী।
২০১৮ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর ছিনতাইয়ে বাধা দেওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীকে লাঞ্ছনা ও কর্তব্যরত এক সংবাদকর্মীকে মারধরের ঘটনায় জড়িত দুই ছাত্রলীগ কর্মীকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। বহিষ্কৃত বাংলা বিভাগের ৪৫তম ব্যাচের শুভাশীষ ঘোষ ও লোক প্রশাসন বিভাগের ৪৭তম ব্যাচের ইয়া রাফিউ শিকদার এখন ছাত্রলীগের পদপ্রত্যাশী।
এ ছাড়াও চলতি বছরের ৬ আগস্ট মওলানা ভাসানী হল ছাত্রলীগের এক কর্মীকে মারধরের ঘটনায় মীর মশাররফ হোসেন হল ছাত্রলীগের সাত কর্মীকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার করে প্রশাসন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শৃঙ্খলা কমিটির জরুরি সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ কর্মীরা হলেন- উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সাব্বির হোসেন ও তোফায়েল আহমেদ, আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের কামরুল হোসেন চৌধুরী, রসায়ন বিভাগের মো. সৌরভ ও খালিদ হাসান, মার্কেটিং বিভাগের খালিদ সাইফুল্লাহ এবং ইংরেজি বিভাগের শাহরিয়ার হিমেল। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের শিক্ষার্থী ও মীর মশাররফ হোসেন হলের আবাসিক ছাত্র এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেলের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।
তা ছাড়াও একই বছরের ২ আগস্ট বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর হলের গেস্ট রুমে এক সাংবাদিককে নির্যাতনের দায়ে ওই হলের ছাত্রলীগের আট কর্মীকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করে সংগঠনটি। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ওই হলের ছাত্রলীগের ১১ কর্মীকে সাজা দেয়। সাজাপ্রাপ্তরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের ৪৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থী মো. আসাদুল হক, আরিফুজ্জামান সেজান ও ৪৭তম ব্যাচের একই বিভাগের রায়হান হাবীব, আইন ও বিচার বিভাগের মোহাম্মদ মাসুম বিল্লাহ, অর্থনীতি বিভাগের মির্জা শাহনূর উল হক জিয়ান, দর্শন বিভাগের মীর হাসিবুল হাসান রিশাদ, প্রাণীবিদ্যা বিভাগের আহম্মেদ তাহরীম, ৪৮তম ব্যাচের রসায়ন বিভাগে মো. জাহিদ নজরুল, বাংলা বিভাগের ইমরান বশর, প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের জায়েদ-বিন-মেহেদী, প্রাণরসায়ন ও অণুপ্রাণ বিজ্ঞান বিভাগের এ এস নাফিস হোসেন। এরা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রহমান লিটনের অনুসারী হিসেবে ক্যাম্পাসে পরিচিত। ছাত্রলীগের বিভিন্ন কর্মসূচিতেও সক্রিয় তারা।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ে ৫১তম ব্যাচের ভর্তি প্রক্রিয়া চলছে। এই হিসেবে ৪৫তম ব্যাচের কোনও কোনও বিভাগের শিক্ষার্থীদের ছাত্রত্ব আছে। তবে বেশিরভাগ বিভাগেরই ৪৫তম ব্যাচের স্নাতকোত্তর পরীক্ষার ফল ঘোষণা করা হয়েছে। সেই হিসেবে কমিটিতে সর্বোচ্চ ৪৫তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের স্থান পাওয়ার কথা। তবে কমিটিতে পদ পেতে ৪২তম ব্যাচ থেকে শুরু করে ৪৪তম ব্যাচ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা দৌঁড়ঝাঁপ করছেন। ছাত্রলীগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, ইতিমধ্যে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পূর্ণাঙ্গ কমিটির খসড়া কেন্দ্র বরাবর জমা দিয়েছেন। খসড়া কমিটির শীর্ষ পদগুলোতে এসব ব্যাচের সাবেক শিক্ষার্থীদের সংখ্যাই বেশি।
বহিষ্কৃত ও অছাত্ররা ছাত্রলীগের কমিটিতে স্থান পাওয়ার যোগ্য নয় বলে জানিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সংসদের দপ্তর সম্পাদক ইন্দ্রনীল দেব শর্মা রনি। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, ‘যাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই এবং যারা বিভিন্ন সময়ে সংগঠনের জন্য ত্যাগ স্বীকার করেছেন তাদেরই বাছাই করা হবে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ও রানিং ছাত্রদেরকেই প্রাধান্য দেওয়া হবে।’
তবে ‘ভুল শুধরে’ কমিটিতে নেওয়ার বিষয়ে বিবেচনা করার কথা জানান বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি আকতারুজ্জামান সোহেল। তিনি ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, 'করোনা মহামারী পরিস্থিতি বিবেচনা করে আমরা তাদেরকে কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করব, যারা ছাত্রলীগের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিল। ৪২, ৪৩, এবং ৪৪ ব্যাচের অনেককেই। আর বহিষ্কৃতদের ব্যাপারটা হচ্ছে যদি আমরা দেখি তারা তাদের ভুল শুধরে সুস্থ রাজনীতি করছে তাহলে তাদেরকেও আমরা বিবেচনা করব।’
এসআইএইচ