‘সংঘাতমুক্ত পরিবেশে উন্নত শিক্ষা জীবনের জন্য মেয়েদের নিয়ে কাজ করতে হবে’
“ওয়ার্ল্ড ইকনোমিক ফোরামের অনুমিত অগ্রগতির হারে প্রথম থেকে দ্বাদশ শ্রেণীর ছেলে ও মেয়েদের গুণগত শিক্ষা প্রদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো পিছিয়ে আছে। এসডিজিগুলো অর্জনে বিশ্বকে সঠিক পথে আরো ভালোভাবে এগিয়ে নিতে সাহায্য করতে জাতিসংঘের ইউনেসকো ও ইউনিসেফ যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্কে আজ থেকে ‘রূপান্তরমূলক শিক্ষা সম্মেলন (ট্রান্সফরমিং এডুকেশন সামিট)’ শুরু করেছে। শিখন-শিক্ষণের মহামারীতে ক্ষতিগুলোকে পূরণের প্রচেষ্টাগুলো অনুভব ও শিক্ষাক্ষেত্রে ভবিষ্যতের প্রতিবন্ধকতাগুলোকে দূর করার কর্মপন্থাগুলোকে চিহ্নিত করতে এই সম্মেলন বিশ্বের সকল রাষ্ট্র, সরকার, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠান এবং এনজিওগুলোকে শিক্ষাকর্মীদের মাধ্যমে একত্রিত করছে। ট্রান্সফরমিং এডুকেশন সামিটের সাফল্য নিশ্চিত করতে নারী শিক্ষার্থীদের মতামতগুলোকে আরো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করতে হবে। তাদের শিক্ষা প্রদানের জন্য আরো ঐকান্তিকভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ হতে হবে এবং তাদের পড়ালেখা নিশ্চিত করতে পূর্ব প্রতিশ্রুতিগুলোকে পূরণ করতে সরকারের জবাবদিহিতা আরো নিশ্চিত করতে হবে”, পাকিস্তানের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী নারী শিক্ষাকর্মী ২৫ বছরের মালালা ইউসুফজাইয়ের বিশ্বব্যাপী সংগ্রহ করা দানের টাকায় পরিচালিত `মালালা ফান্ড’র বাংলাদেশ অফিসের আয়োজিত একটি বিশেষ শিক্ষা সংবাদ সম্মেলনে এই কথাগুলো বলেছেন বক্তারা। তারা হলেন ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এমিরেটাস প্রফেসর ও বরণ্যে শিক্ষাবিদ অধ্যাপক ড. মনজুর আহমেদ, মালালা ফান্ডের দেশীয় প্রতিনিধি ও শিক্ষাকর্মী মোশাররফ তানসেন, গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক কে. এম. এনামুল হক, পিপল’স ওরিয়েনটেড প্রগ্রাম ইমপ্লিমেন্টেশন (পপি)’র নির্বাহী পরিচালক মোরশেদ আলম সরকার ও বাংলাদেশ ওপেন সোর্স নেটওয়ার্কের (বিডিওএসএন) প্রধান নির্বাহী অফিসার কানিজ ফাতেমা।
ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি (ডিআরইউ) তে আজ সকাল ১১টায় তাদের এই সংবাদ সম্মেলন শুরু হয়েছে। সেখানে তারা আরো বলেছেন, শিক্ষাক্ষেত্রে বৈশ্বিক সংকট রয়েছে। মানুষে, মানুষে সংঘাত, জলবায়ুর অভিঘাত, ধনী-গরিবের বৈষম্য, শিক্ষার্থীদের বিশেষত নারী ও শিশুদের পরিস্থিতি খারাপের দিকে নিয়ে যায়। তবে এই ক্ষেত্রে ‘মালালা ফান্ড’ অন্যতম প্রধান ভূমিকা রেখে চলেছে তরুণদের বিচারে।
মালালা ফান্ডের বাংলাদেশ প্রতিনিধি, আইইআর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র ও শিক্ষাকর্মী মোশাররফ তানসেন বলেছেন, ‘মেয়েদের মতামততে সমাজের প্রতিটি স্তরে প্রদান ও মূল্যায়নের এবং পূরণের ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের পড়ালেখার পথ সুগম হতে হবে। সকল পর্যায়ে জবাবদিহিতা ও অর্থপূণ অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়াও ন্যায়ভিত্তিক শিক্ষা প্রদানের বৈশ্বিক কর্মপন্থা প্রণয়ন ও প্রয়োগ করতে হবে। স্বল্প ও উচ্চ আয়ের উন্নত এবং গরীব দেশের অঙ্গীকার পূরণ করতে হবে। এসজিডি পূরণের জন্য অর্থ ও নীতিগত কাঠামো প্রণয়ন এবং পূরণ করতে হবে। এজন্য বিশ্বের সব পর্যায়ের নেতৃবৃন্দকে জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে। তাদের কার্যক্রম বাস্তবায়নের জন্য কর্মসূচিগুলোকে সফল করতে হবে। আফগানিস্তানের জন্য অবস্থান গ্রহণ করতে হবে। ধর্মীয়, সংঘাতমুক্ত পরিবেশে উন্নত শিক্ষা জীবনের জন্য মেয়েদের নিয়ে কাজ করতে হবে। মেয়েদের আফগানিস্তানে মেয়েদের মাধ্যমিক শিক্ষা থেকে উচ্চ পর্যায়ের পড়ালেখার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে হবে ও পড়ালেখার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। মানুষের শিক্ষা মানবাধিকারকে আরো শক্তিশালী করতে হবে। এই বিষয়ে মালালা ফান্ড পদক্ষেপ ও অংশগ্রহণ নিশ্চিতের জন্য শিক্ষাকর্মীদের নিয়ে সারা বিশ্বে দফায়, দফায় কাজ করে চলেছে।’
ব্র্যাকের এমিরেটাস প্রফেসর ড. মনজুর আহমেদ জানিয়েছেন, ‘বাংলাদেশে ২০১৫ সালে যে মাধ্যমিক শিক্ষার অন্যতম লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে সার্বজনীন মাধ্যমিক শিক্ষা প্রদান করা হবে, সেটি পূরণ করতে হবে। আর মেয়েরা বিশ্বব্যাপী পিছিয়ে আছে শিক্ষা লাভের সুযোগের ক্ষেত্রে। আমাদের দেশে ভিন্ন চিত্র ৯৮ শতাংশ ছাত্র, ছাত্রী বিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। সরকারের হিসেবে তাদের ৬০-৭০ শতাংশ মাধ্যমিকে পড়ে। তবে সত্যিকারভাবে ২৫ থেকে ৩০ ভাগ পড়ালেখা সম্পন্ন করে। ২০৩০ সালের মধ্যে সার্বজনীন মাধ্যমিক শিক্ষা নিশ্চিত করতে হলে কী, কী কর্ম, পরিকল্পনা নিতে হবে বাংলাদেশে তা আমি দেখছি না। আর সামগ্রিক শিক্ষাখাতের পরিকল্পনা নতুনভাবে করা প্রয়োজন। মাদ্রাসা, বাংলা ও ইংরেজি শিক্ষাকে একীভূত করতে হবে। আমাদের সরকারীভাবে যে অর্থ বরাদ্দ করা হয় অপ্রতুল। এই ক্ষেত্রগুলোতে সরকার কী করছেন?’
গণসাক্ষরতা অভিযানের উপ-পরিচালক ও নামী শিক্ষাকর্মী কে. এম. এনামুল হক বলেছেন, ‘আমরা শিক্ষাক্ষেত্রে সব কাজই করি জনগণের পক্ষে। দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হন নারী, শিশু ও বৃদ্ধরা। মেয়েদের বিদ্যালয়ে পুরোপুরিভাবে পাওয়া যায় না। হাওড় ও উপকূলীয় এলাকাগুলোতে আমরা স্কুল রুটিন বদলাতে বারবার দাবী করলেও সরকার নির্বিকার। তারা রুটিন পরিচালনা করতে বদ্ধপরিকর।’
পপি’র নির্বাহী পরিচালক মোরশেদ আলম সরকার জানিয়েছেন, ‘মেয়েরা যেন ১ থেকে ক্লাস পর্যন্ত পূরণ করতে পারে সেটিই মালালা ফান্ডের অনুন্নত ও সব দেশে মূল উদ্দেশ্য।’
বিডিওএসএনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা কানিজ ফাতেমা জানিয়েছেন, ‘ইউনেসকো জানিয়েছে, এই করোনা ভাইরাসের আক্রমণে কভিড ১৯ রোগের মহামারি ছিল একটি প্রজন্মের দুর্যোগ। তবে অনলাইনে পড়ালেখার পথ সুগম করতে আমাদের পথ দেখিয়েছে। ইন্টারনেট, ডিভাইস, কম্পিউটার প্রয়োজন এখন ছাত্র, ছাত্রীদের। সরকারের ২০৪১ সালের মধ্যে ডিজিটাল, স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ায় ছাত্র, ছাত্রীদেরও ডিজিটালাইড করতে হবে।’
“এক্ষেত্রেও ‘মালালা ফান্ড’ কাজ করছে”, বলে জানিয়েছেন দেশীয় প্রতিনিধি মোশাররফ তানসেন।
তারা বলেছেন, শেখ রাসেল ডিজিটাল ল্যাবের সুবিধাগুলো এখন বাংলাদেশের বিদ্যালয় পর্যায়েও ছড়িয়ে গিয়েছে বলে সরকারকে কৃতজ্ঞতা। তবে অনলাইনের নিরাপদ ও প্রযুক্তি বান্ধব শিক্ষা প্রদান কার্যক্রমকে আরো শক্তিশালী করতে হবে।
ওএফএস/