ইবিতে নতুন কমিটির পর ছাত্রলীগ
লেখা ও ছবি : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি।
দীর্ঘদিন পর কুষ্টিয়ার একমাত্র সরকারী উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়’-এ শাখা ছাত্রলীগের নতুন কমিটি দেওয়া হয়েছে।
কমিটিটি পেয়ে বেশ উচ্ছ্বসিত নেতা, কর্মীরা।
মিছিল-মিটিংসহ সাংগঠনিক কার্যক্রমগুলোতে তাদের সক্রিয় তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে।
কমিটি আসায় স্বস্তির নি:শ্বাস ফেলেছেন অন্যরা।
এর পেছনে পাঁচ বছরের করুণ ইতিহাস আছে।
২০১৭ সালে শাহিনুর রহমান শাহীনকে সভাপতি ও জুয়েল রানা হালিমকে সাধারণ সম্পাদক করে বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই সদস্য বিশিষ্ট ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় কমিটি ঘোষণা করা হয়েছিল।
দুই বছরেরও বেশি পেরিয়ে গেলেও তারা পূর্ণাঙ্গ কমিটি গঠন করেননি।
২০১৯ সালে আবারও সম্মেলন ছাড়া রবিউল ইসলাম পলাশ ও রাকিবুল ইসলাম রাকিব নেতৃত্বে দুই সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করেছে ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
এ কমিটির মেয়াদও প্রায় দুটি বছর হয়ে গিয়েছে।
তবে এর মধ্যে তারা অর্থ লেনদেনসহ বেশকটি অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন। তাতে ক্যাম্পাসে নিজেদের অবস্থানই ধরে রাখতে পারেননি। আগের চেয়ে খারাপ হিসেবে প্রমাণিত করেছেন নিজেদের। পূর্ণাঙ্গ কমিটি দেওয়া তো দূরের কথা।
অনেকদিন দেখার পর আবার দুই বছর, অবশেষে ২০২১ সালের ৮ ডিসেম্বর পলাশ-রাকিব কমিটি বিলুপ্ত করেছে কেন্দ্র।
এরপর ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগ শাখার দায়িত্বে থাকা কেন্দ্রীয় নেতারা সে বছরের ১৩ ডিসেম্বর ক্যাম্পাসে এসেছেন।
পদ প্রত্যাশীদের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করেছেন তারা। খোঁজখবর নিয়েছেন। সংগঠনের হালচাল জেনেছেন। সুবিধা, অসুবিধা নোট করেছেন। করণীয় ঠিক করে গিয়েছেন।
তবে পাঁচ বছরেও দুটি করে মোট চারটি পদের বেশি না পেয়ে দীর্ঘদিন পদশূণ্য মনোক্ষুন্ন ছাত্রলীগের প্রায় সব ত্যাগী নেতা, কর্মী পড়ালেখা শেষ করে ক্যাম্পাস ছেড়েছেন। তারা চাকরি ও সংসার নিয়ে ব্যস্ত।
কিন্তু তারা বলেছেন, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন জড়িত ছিলাম আমরা। পূর্ণাঙ্গ কমিটি না করা ও নতুন কমিটি না দেওয়ায় হতাশ হয়েছি। চলে গিয়েছি পড়ালেখা শেষে।
এবার কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে পা দেওয়ায় আবার পালে হাওয়া লেগেছে।
নানা জল্পনা ও কল্পনা তাদের আসার আগে থেকে ডাল, পালা গজাতে থাকে। অনেক কল্পনা বিপুলভাবে বেড়ে উঠেছে।
দীঘদিনের এই জল্পনা ও অপেক্ষা এবং ক্ষোভের অবসান ঘটেছে ঠিক ৭ মাস ২৩ দিন পর।
এই রবিবার, ৩১ জুলাই, রাতে, ১১ টায় আইন বিভাগের ২০১৩-’১৪ শিক্ষাবর্ষের ফয়সাল সিদ্দিকী আরাফাত সভাপতি ও আরেকটি খুব ভালো বিভাগ অর্থনীতির মেধাবী ছাত্র ২০১৪-’১৫ শিক্ষাবর্ষের নাসিম আহমেদ জয়কে সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে।
পাঁচ বছরের শেষে ২৪ সদস্য বিশিষ্ট আংশিক কমিটি দিয়েছেন ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতারা।
এরপর আবার তারা মাঠে নেমেছেন ছাত্রলীগের হয়ে।
গতকাল বুধবার এই ২৪ নেতা তাদের কর্মীদের নিয়ে ‘মৃত্যুঞ্জয়ী মুজিব’ ম্যুরালে শ্রদ্ধাঞ্জলী নিবেদন করেছেন।
এরপর উপাচার্য অধ্যাপক অধ্যাপক ড. শেখ আবদুস সালামের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ।
১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুসহ সব আন্দোলনে শহীদদের স্মরণে দোয়া এবং মাহফিলও করেছে তাদের নতুন কমিটি।
প্রতিটি আয়োজনে ছাত্র, ছাত্রীদের কর্মীদের সরব উপস্থিতির পাশে থাকতে গিয়েছে।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতির সঙ্গে মত-বিনিময়ও করেছেন তারা।
সভাপতি ফয়সাল সিদ্দীকি আরাফাত বলেছেন, ‘পবিত্র আমানত হিসেবে কেন্দ্র থেকে আমরা দায়িত্ব গ্রহণ করেছি। আমরা আমানতগুলোর যথাযথ ব্যবহার করতে চাই। এ লক্ষ্যে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, অধ্যাপকরা, সাংবাদিক, সকলের সহযোগিতা কামনা করছি।’
সাধারণ সম্পাদক নাসিম আহমেদ জয় বলেছেন ‘স্বাধীনতাবিরোধী শক্তিগুলোকে আমাদের ক্যাম্পাসে নৈরাজ্য তৈরি করার সুযোগ দেওয়া হবে না। সকলের সহযোগিতা নিয়ে শিক্ষার্থীবান্ধব ছাত্রলীগের অন্যতম শাখাটি উপহার দিতে আমরা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’
কমিটি ও নেতাদের নিয়ে ছাত্রলীগ কর্মী ইশতিয়াক রিয়াদ বলেন, ‘দীর্ঘদিন পর কমিটি হওয়ায় আমরা খুব খুশি। তাদের কাছে চাওয়া, ত্যাগী ও যোগ্যদের মূল্যায়ন, সকলকে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া এবং কোনো গ্রুপিংয়ে না যাওয়া, কোনো গ্রুপিংই যেন না হয়।’
ছাত্রলীগ কর্মী শাহিন পাশা বলেছেন, ‘এই নতুন কমিটির কাছে আমাদের চাওয়া, এই ক্যাম্পাসে যেন প্রগতিশীল রাজনীতির চর্চা হয় ও পূর্ণাঙ্গ কমিটিতে পদবঞ্চিতদের আনা হয়। প্রতিটি হলে কমিটির মাধ্যমে যেন সব নেতা-কর্মীর মূল্যায়ন করা হয়।’
ওএস।