‘আমাদের হাজারো আবুবকর হানিপ দরকার’-বিকর্ণ কুমার ঘোষ
বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেছেন এখন‘আমাদের হাজারো আবুবকর হানিপ দরকার’-বিকর্ণ কুমার ঘোষ
বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষের ব্যবস্থাপনা পরিচালক, বিকর্ণ কুমার ঘোষ বলেছেন বাংলাদেশের অনেক শিক্ষার্থীরা এখন ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে পড়াশোনা করছে, যে ইউনিভার্সিটির মালিকানা একজন বাংলাদেশির, যার নাম ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ।
‘সম্প্রতি আমি তার ইউনিভার্সিটিতে ভিজিট করেছি। মি. হানিপ এবং ফারহানা হানিপ তারা সেখানে অসাধারণ কাজ করছে। আমরা তাদের জন্য গর্ববোধ করি। যুক্তরাষ্ট্রের মাটিতে মি. হানিপ বাংলাদেশের পতাকা গৌরবের সাথে উড়াচ্ছেন। এই দেশকে এগিয়ে নিতে আমাদের হাজারো হানিপ দরকার,’ বলেন বিকর্ণ কুমার ঘোষ।
রাজধানীর কৃষিবিদ ইন্সটিটিউশনে গত বৃহস্পতিবার (২৮ জুলাই) বাংলাদেশের অধ্যায়নরত বিদেশী শিক্ষার্থীদের ক্যারিয়ার ডেভলপমেন্টের জন্য আয়োজিত এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
মি. বিকর্ণ কুমার ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির সাথে কাজ করারও অঙ্গিকার ব্যক্ত করেন যাতে করে কম খরচে এদেশের শিক্ষার্থীরা উচ্চ শিক্ষার জন্য যুক্তরাষ্ট্রে যেতে পারে।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ খুব দ্রুত গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে- অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে, তথ্যপ্রযুক্তি ক্ষেত্রে এমনকি শিক্ষা ক্ষেত্রেও। আমাদের প্রধানমন্ত্রী এই দেশকে নিম্ন আয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করেছে মাত্র দশ থেকে বারো বছরে। তাকে ছাড়া আমাদের এই উন্নয়ন সম্ভব হতো না, এই দেশ ডিজিটাল বাংলাদেশ হতো না।
‘আমরা এখন এগিয়ে যাচ্ছি আমাদের পরবর্তী গন্তব্যে- এবারের গন্তব্য স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ার। বাংলাদেশ স্মার্ট হলে আমাদের নাগরিক স্মার্ট হবে, সরকার স্মার্ট হবে, আমাদের অর্থনীতি স্মার্ট হবে। এজন্য আমাদের তরুণ প্রজন্মকে তথ্যপ্রযুক্তি শিক্ষার মাধ্যমে দক্ষ করে গড়ে তুলতে হবে, তাহলেই একটি স্মার্ট বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে,’ তিনি যোগ করেন।
তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন, তথ্যপ্রযুক্তি খাত আগামি ২০৩০ সালের মধ্যে তৈরি পোষাক খাতের চেয়ে বেশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করবে এবং ২০৪১ সালে তথ্যপ্রযুক্তি খাত হবে দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি।
এসময় তিনি উপস্থিত বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জন ও দক্ষ হওয়ার মাধ্যমে বর্তমান সরকারকে সহযোগিতা করার আহবান জানান। বিদেশি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য করে তিনি বলেন, তারা যদি যুক্তরাষ্ট্রে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিতে উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে চান তাহলে পিপলএনটেক তাদের সবধরনের সাহায্য-সহযোগিতা করবে।
উক্ত সেমিনারে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অফ সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির চ্যান্সেলর ইঞ্জিনিয়ার আবুবকর হানিপ তাঁর ইউনিভার্সিটি ও অন্যান্য ইউনিভার্সিটির মধ্যে পার্থক্য তুলে ধরে বলেন যখন একজন শিক্ষার্থী কোন ইউনিভার্সিটি থেকে মাস্টার্স করেন সে শুধু একাডেমিক জ্ঞান অর্জন করেন কিন্তু ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ও ইন্ডাস্ট্রি উভয় জ্ঞানই অর্জন করতে পারে, এরফলে তারা দক্ষ হয়ে চাকরি জীবনে প্রবেশ করে এবং প্রথম দিন থেকেই তারা অবদান রাখতে পারে।
সুতরাং আমাদের অভিজ্ঞতা আছে, এই অভিজ্ঞতার উপর ভিত্তি করে আমরা শিক্ষা প্রদান করছি। আমাদের ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটিতে ৪ থেকে ৩০ বছরের অভিজ্ঞ স্কলার রয়েছে। এই অভিজ্ঞ স্কলারদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা একাডেমিক ও ইন্ডাস্ট্রি উভয় জ্ঞানই অর্জন করতে পারছেন এবং দক্ষ হয়ে বের হচ্ছেন।
যুক্তরাষ্ট্র সরকার প্রতি বছর ৮৫ হাজার দক্ষ জনশক্তি এইচওয়ানবি (H1B) ভিসার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে নিয়ে আসে, এখানেও আমাদের কাজ করার সুযোগ রয়েছে। বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা যারা অনেক দক্ষ তারা এই সুযোগ টা নিতে পারে।
‘আমাদের লক্ষ্য হলো আমাদের শিক্ষার্থীরা আমেরিকার প্রথম সাড়ির কোম্পানি গুলো তে জব করবে। সেভাবে আমরা তাদের দক্ষভাবে গড়ে তুলি’। তিনি বলেন গত ১৫ বছরে পিপলএনটেক থেকে ট্রেনিং নিয়ে প্রায় ৭ হাজার বাংলাদেশি যুক্তরাষ্ট্রের মেইন স্টিমে কাজ করছেন।
সভাপতির বক্তব্যে পিপলনটেকের প্রেসিডেন্ট ফারহানা হানিপ উপস্থিত বিদেশি শিক্ষার্থীদের উচ্চ শিক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় সকল প্রকার সাহায্য-সহযোগিতা প্রদানের অঙ্গীকার করেন। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের একাডেমিক জ্ঞান অর্জনের পাশাপাশি বিভিন্ন প্রশিক্ষণ গ্রহণের মাধ্যমে নিজেকে দক্ষভাবে গড়ে তোলার আহবান জানান।
শিক্ষার্থীদের পিপলনটেক সম্পর্কে অবহিত করতে গিয়ে তিনি বলেন, পিপলনটেক বাংলাদেশের একটি বহুজাতিক পেশাগত দক্ষতা উন্নয়ন কেন্দ্র, চাকরির স্থান নির্ধারণ, পরামর্শ এবং আউটসোর্সিং কোম্পানি। এটি "ডিজিটাল বাংলাদেশ" স্লোগান নিয়ে কাজ করার মিশন এবং ভিশন নিয়ে ২০০৪ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ও ২০১৪ সালে বাংলাদেশে যাত্রা শুরু করে। প্রতিষ্ঠার পর থেকে পিপলনটেক আমেরিকায় ৮০০০ জনের বেশি অভিবাসীকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে এবং তাদের সবাই প্রতি বছর এক লক্ষ থেকে দুই লক্ষ টাকা বেতন মূলধারার চাকরি পেয়েছে।
এসময় বক্তব্য রাখেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জরি কমিশনের সদস্য প্রফেসর ড. সাজ্জাদ হোসাইন, ইস্টার্ন ইউনিভার্সিটির ডিন ও ফ্যাকল্টি অফ ইঞ্জিনিয়ার এন্ড টেকনোলজির প্রফেসর ড. মো মাহফুজুর রহমান, ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রধান প্রফেসর ড. তৌহিদ ভূঁইয়া, এশিয়া প্যাসিফিক ইউনিভার্সিটি কম্পিউটার সায়েন্স এন্ড ইঞ্জিনিয়ারিং প্রধান ড. শাহ মুর্তজা রশিদ আল মাসুদ, ইউনিভার্সিটি অব লিবারেল আর্টস বাংলাদেশ এর অ্যাক্টিং হেড আবুল কালাম আজাদ,ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ইনস্টিটিউট অব ইনফরমেশন টেকনোলজির সহকারী অধ্যাপক ড. আহমেদুল কবির।