দাবি না মানলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি শিক্ষকদের
ঈদের আগেই শতভাগ উৎসব ভাতা ও মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণের লক্ষ্যে ১১ দফা বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি (বিটিএ)।
একইসঙ্গে আগামী বাজেটে সুনির্দিষ্ট বরাদ্দের দাবি জানিয়েছেন তারা। অন্যথায় ঈদের পর ঢাকায় মহাসমাবেশ ডেকে লাগাতার আন্দোলন শুরুসহ দেশব্যাপী আন্দোলন করার হুমকি দিয়েছেন শিক্ষকরা।
শনিবার (৪ জুন) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি তোলা হয়েছে। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যক্ষ মো. বজলুর রহমান মিয়া।
তিনি বলেন, ‘দেশের সিংহভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালিত হচ্ছে এমপিওভুক্ত বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারিদের দ্বারা। আমরা এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীরা ২৫ শতাংশ উৎসব ভাতা, ১ হাজার টাকা বাড়ি ভাড়া এবং ৫০০ টাকা চিকিৎসা ভাতা দেওয়া হয় হলেও একই কাজ করে সরকারি বিদ্যালয় শিক্ষকদের সঙ্গে পাহাড়সম বৈষম্য তৈরি করা হয়েছে।’
বজলুর রহমান বলেন, ‘এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বদলি প্রথা না থাকা এবং প্রধান শিক্ষকদের বেতন সরকারি স্কুলের প্রধান শিক্ষকের একধাপ নিচে প্রদান করায় শিক্ষক-কর্মচারীদের মধ্যে দীর্ঘদিনের অসন্তোষ রয়েছে। বেসরকারি শিক্ষক-কর্মচারীদের অবসরে যাবার পর অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের টাকা পেতে বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে হয়। তা ছাড়া আমাদের বেতন থেকে অমানবিকভাবে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন করা হচ্ছে।’
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বৈষম্য বন্ধে বিভাগীয় শহরে মানববন্ধন, বিক্ষোভ মিছিল, প্রতীক অনশনসহ প্রধানমন্ত্রী, অর্থমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীকে স্মারকলিপি দিয়েছি। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে একাধিকবার মহাসমাবেশ করেছি। কিন্তু আমাদের যৌক্তিক দাবি বাস্তবায়ন করা হয়নি।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক অধ্যক্ষ শেখ কাওছার আহমেদ বলেন, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা (ইউনেস্কো) ও আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা’র (আইএলও) অনুমোদিত ১৪৬টি সুপারিশ সম্বলিত শিক্ষকদের মর্যাদা বিষয়ক সনদে বাংলাদেশও স্বাক্ষর করেছে। সেখানে শিক্ষা খাতে জাতীয় বাজেটের ২০ শতাংশ অথবা জিডিপির ৬ শতাংশ বরাদ্দের কথা উল্লেখ আছে। আগামী বাজেটে সেটি বাস্তবায়ন করতে হবে।
একইসঙ্গে শিক্ষক নেতারা মাধ্যমিক শিক্ষা জাতীয়করণ, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের পূর্ণাঙ্গ উৎসব ভাতা, বাড়ি ভাড়া ও চিকিৎসা ভাতা, পূর্ণাঙ্গ পেনশন প্রথা চালুকরণ এবং পেনশন প্রথা চালু না হওয়া পর্যন্ত অবসর গ্রহণের ৬ মাসের মধ্যে অবসর সুবিধা ও কল্যাণ ট্রাস্টের পাওনা প্রদান ও শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন থেকে অতিরিক্ত ৪ শতাংশ কর্তন বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন।
এ ছাড়াও স্বীকৃতিপ্রাপ্ত সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমপিওভুক্ত, সরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ন্যায় বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও সহকারী প্রধান শিক্ষকদের ৬ষ্ঠ ও ৭ম গ্রেডে প্রদান, এমপিওভুক্ত শিক্ষক-কর্মচারীদের বদলি প্রথা চালু, চাকরির বয়স সীমা ৬৫ বছরে উন্নীতকরণ, পাবলিক সার্ভিস কমিশনের ন্যায় শিক্ষক নিয়োগ কমিশন গঠন এবং শিক্ষাপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে আনুপাতিক হারে এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের পদায়ন, ম্যানেজিং কমিটি/গভর্নিং বডির সদস্যদের ন্যূনতম শিক্ষাগত যোগ্যতা নির্ধারণ করা ও শিক্ষানীতি-২০১০ এর দ্রুত বাস্তবায়নের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এনএইচবি/এমএমএ/