পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী রবিবার
রবিবার (৫ জুন) পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। উত্তরবঙ্গের অবহেলিত পাবনায় ২০০৮ সালে উচ্চ শিক্ষার যে বীজ রোপন করা হয়েছিল আজ তা আলো ছড়াচ্ছে সারােেদশে। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা নয় পুরো পাবনা জেলার শিক্ষা, সামাজিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক তথা সামগ্রিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করছে এই বিশ্ববিদ্যালয়। সারাদেশে ছড়িয়ে পড়েছে এর সুনাম। জ্ঞানার্জনের তীর্থভূমিতে পরিনত হয়েছে এ বিশ্ববিদ্যালয়। বিজ্ঞানমুখী শিক্ষার প্রসার, দেশে উচ্চ শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি, জ্ঞান চর্চা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির ক্ষেত্রে যথাযথ গুরুত্ব প্রদানসহ পঠন-পাঠন ও গবেষণার সুযোগ-সুবিধা সৃষ্টি করেছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
বিজ্ঞান , প্রকৌশল আর প্রযুক্তি শিক্ষার গুরুত্ব সারাবিশ্বে সমাদৃত ও অনস্বীকার্য। একটি দেশকে উন্নত পর্যায়ে পৌছাতে হলে তাকে আধুনিক ও দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে হয়। আর দক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যে কয়টি বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন করেছেন, তার অন্যতম হলো পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। আমরা বলতে পারি প্রধানমন্ত্রীর দূরদর্শী চিন্তা, আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর রাষ্ট্র গড়ার পরিকল্পনা, বিজ্ঞানমুখী শিক্ষা ব্যবস্থা, বিশেষ করে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি নির্ভর উন্নত বিশ্বের পর্যায়ে সমতা অর্জনের যে স্বপ্ন, তা বাস্তবায়নে কার্যকরি পদক্ষেপের ফসল পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।
২০০১ সালের ১৫ জুলাই্ মহান জাতীয় সংসদে ‘পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় স্থ্াপন প্রকল্প’ বিল পাশ হয়। আইন পাশের পর নানা বাধা বিপত্তি পেরিয়ে ২০০৮ সালে পাবনা শহর থেকে তিন কিলোমিটার পূর্বে ৩০ একর জমির উপর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। ২০০৯ সালের ০৫ জুন আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হয়। তারপর হাটি হাটি পা পা করে নবীন এই বিশ্ববিদ্যালয় কৈশোর অতিক্রম করছে। চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য উপযুক্ত কর্মী তৈরী হচ্ছে এখানে। ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়নের দক্ষ কর্মী তৈরী করছে এখানকার শিক্ষকরা। রুপপুর পারমানবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের হাল ধরার জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন এখানকার ভবিষ্যৎ প্রকৌশলীরা।
বর্তমানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ০৫টি অনুষদে ২১টি বিভাগের অধীনে প্রায় পাঁচ হাজার শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। ১৩তম ব্যাচ সম্প্রতি তাদের ক্লাস শুরু করেছেন। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, বিএসসি (অনার্স), বি.অর্ক, বিএসসি(অনার্স), বিফার্ম (অনার্স), বিএসএস (অনার্স), বিবিএ, এমএসসি, এমএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং, এম ইঞ্জিনিয়ারিং,এমফিল ও পিএইচডি ডিগ্রী চালু আছে।
শুরু থেকেই এখানে মানসম্মত শিক্ষার পাশাপাশি আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে চলার জন্য বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। পাঠদান কার্যক্রম সেমিষ্টার পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়। আট সেমিষ্টারের সময়সীমায় প্রতি বছর দুইটি সেমিষ্টার। মাত্র চার বছরেই এখান থেকে শিক্ষার্থীরা শিক্ষাজীবন শেষ করতে পারছে। এখানকার শিক্ষার্থীরা নতুন নতুন জ্ঞান সৃষ্টি করে জ্ঞানের জগতকে এগিয়ে নিচ্ছে।
ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন শিক্ষার্থীদের বিজ্ঞান চর্চা ও তথ্য প্রযুক্তি কেন্দ্রিক গবেষণার উর্বর ক্ষেত্র। রয়েছে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্র হল ও শেখ হাসিনা ছাত্রী হল। লাইব্রেরীতে ই-বুক ও ই- জার্নালের সুবিধা ছাড়াও যুগোপযোগি ৩০ হাজার বই রয়েছে। নিয়মিত প্রকাশিত হয় বিভিন্ন জার্নাল। রয়েছে বিভিন্ন বিভাগের সেমিনার ও লাইব্রেরী কক্ষ। শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের যাতাযাতের জন্য রয়েছে পর্যাপ্ত পরিবহন ব্যবস্থা। ‘স্বাধীনতা চত্বর’ থেকে শিক্ষার্থীরা জানতে পারছে ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস। শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন মুক্ত চিন্তা ও মত প্রকাশের অনন্য দৃষ্ঠান্ত স্থাপন করে চলেছে। রয়েছে মহান ভাষা আন্দোলনের শহিদদের স্মরণে শহিদ মিনার। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জম্মশতবর্ষ উপলক্ষে নির্মাণ করা হয়েছে ‘স্মারক ম্যুরাল জনক জ্যোর্তিময়।’ বিশ্ববিদ্যালয়ের দৃষ্টি নন্দন লেক ক্যাম্পাসের সৌন্দর্য্য বৃদ্ধি করেছে। এদিকে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের আধুনিক সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর জন্য সরকার ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মিলে উন্নয়নের মহাযজ্ঞ চালাচ্ছেন। ১২তলা বিশিষ্ট দুইটি একাডেমিক ভবন নির্মান করা হচ্ছে। ছাত্র ও ছাত্রীদের জন্য ১০তলা বিশিষ্ট দুইটি পৃথক আবাসিক হল নির্মাণ করা হচ্ছে। ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, ১০ তলা বিশিষ্ট প্রশাসন ভবন, শিক্ষক-কর্মকর্তা ক্লাব, ১০তলা বিশিষ্ট অডিটরিয়ামসহ বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণ করা হচ্ছে। ১৪তম বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উপলক্ষে উদ্বোধন করা হবে পাবনার কবি বন্দে আলী মিয়ার নামে ৩০০ আসনের দৃষ্টি নন্দন মুক্তমঞ্চ। এর মাধ্যমে সংস্কৃতি চর্চার নতুন দ্বার উম্মোচিত হবে।
সম্প্রতি নতুন উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য হিসেবে যোগদান করেছেন দেশের বিশিষ্ট পরিবেশ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক মুক্তিযোদ্ধা ড. হাফিজা খাতুন ও নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিশিষ্ট বিজ্ঞানী ড. এস.এম মোস্তফা কামাল খান। দেশের চতুর্থ নারী উপাচার্য এবং একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে ড. হাফিজা খাতুনের যোগদান এই বিশ্ববিদ্যালয়কে তুলে ধরেছে অনন্য উচ্চতায়। তাঁর সুদক্ষ নেতৃত্বে শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মাঝে এনেছে নতুন উৎসাহ- উদ্দীপনা। করোনা মহামারীর কারণে স্থবির হওয়া ক্যাম্পাসে একাডেমিক প্রাণ”াঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। উপাচার্য ও উপ-উপাচার্য মহোদয়ের সার্বিক তত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে ক্লাসসহ প্রশাসনিক ও দাপ্তরিক কাজ। ফলে সর্বত্র এসেছে গতিশীলতা। শিক্ষার আদর্শ পরিবেশ পেয়ে জ্ঞানচর্চার তীর্থভূমি হতে চলেছে পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। উৎসবমুখর পরিবেশে আগামী ০৫ জুন বিশ্ববিদ্যালয় দিবস উদযাপন করছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারসহ পাবনাবাসী। আনন্দ উৎসবে মেতে থাকবে দিনভর। শুধু বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের নয় দিনটি পাবনাবাসীর জন্যও অত্যন্ত আনন্দ ও গৌরবের।
ফারুক হোসেন চৌধুরী, উপ-পরিচালক, জনসংযোগ দপ্তর, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়